রবিবার, ১৫ মে, ২০১৬, ০৫:৩১:০৫

নিজামীর ফাঁসি মানেই কি জামায়াত শেষ?

নিজামীর ফাঁসি মানেই কি জামায়াত শেষ?

বিভুরঞ্জন সরকার : ১১ মে ২০১৬ তারিখ সকালে শান্তিনগর মোড়ে একটি সংবাদপত্র স্টলের সামনে  দাঁড়িয়ে সেদিনের পত্রিকা দেখছিলেন কয়েকজন উৎসাহী পাঠক। পত্রিকাগুলোর প্রথম পাতায় সেদিন গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়েছিল  জামায়াতের শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ার খবর। একজন পাঠকের মন্তব্য কানে এলো। নিজামীর ফাঁসির খবরে তিনি উৎফুল্ল না বিষণœ সেটা বোঝা গেল না। তবে তিনি স্পষ্ট করেই বললেন, এবার জামায়াত শেষ। আর একজন বললেন, জামায়াত কি এত সহজে শেষ হবে? একাত্তরে নিজামী ছিলেন একা। আর তার সঙ্গে কারাগারে শেষ দেখা করতে গেছেন ২৬ জন। অর্থাৎ এত বছরে নিজামীর আত্মীয় পরিজনের সংখ্যা বেড়েছে এবং তারা সবাই নিজামীর রাজনৈতিক আদর্শেই বিশ্বাসী। নিজামী চলে গেলেও তার আদর্শের অনুসারীরা তো থেকেই গেলেন। তাই নিজামী কিংবা তার মতো কয়েকজন শীর্ষ নেতার ফাঁসি হচ্ছে বলেই এটা মনে করা ঠিক হবে না যে জামায়াত শেষ হয়ে যাচ্ছে।

আরেকজন বললেন, একাত্তরে জামায়াত যেমন ভয়ঙ্কর ছিল এখনো তারা তেমনই আছে। তখন বরং তারা সংখ্যায় কম ছিল। এখন তাদের ছানাপোনারাও বড় হয়েছে। পূর্বসূরিরা যেমন ঘাতক ছিল, উত্তরসূরিরাও তেমন ঘাতকই তৈরি হয়েছে। কাজেই কয়েকজন সাবেক ঘাতকের বিচার, শাস্তি, ফাঁসি হলেও বর্তমান ঘাতকরা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে সেটা মনে করা ঠিক নয়। জামায়াত শেষ বলে যিনি মন্তব্য করেছিলেন তিনি আবার বললেন, শেখ হাসিনা জামায়াতের কোমর ভেঙে দিয়েছেন। জামায়াত তার রাজনীতির সমর্থক পেলেও সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। তার কথা শেষ না হতেই আরেক পাঠক বললেন, দেশের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো যে রকম নীতিহীনতার রাজনীতি করছে তাতে জামায়াতের রাজনীতির একটি জায়গা থেকেই যাচ্ছে। দেশ থেকে দুর্নীতি, বৈষম্য, অনাচার দূর করতে না পারলে জামায়াত নির্মূল করা সহজ হবে না।
ব্যস্ততার কারণে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সংবাদপত্র পাঠকদের আলোচনা আর বেশিক্ষণ শুনতে না পারলেও যেটুকু শুনলাম সেটুকুই আমার মনে দাগ কাটল।

নিজামীসহ অন্য মানবতাবিরোধী অপরাধীদের শাস্তি হওয়ায় আমরা অনেকেই স্বস্তি বোধ করছি। আমাদের অনেক গ্লানি ও জ্বালা দূর হচ্ছে। কিন্তু যে বিশ্বাস ও চেতনা নিয়ে আমরা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম সেই বিশ্বাস ও চেতনা কি আমাদের সবার মধ্যে একভাবে অটুট আছে? যে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম সেটা এখনো অধরাই রয়ে গেছে। তবে বাংলাদেশ না চেয়েও বাংলাদেশের মন্ত্রী হওয়ার ধৃষ্টতা দেখিয়ে যারা জাতিকে অপমান করেছিল তাদের চরম শাস্তি দেখতে পাওয়াটাও কম বড় অর্জন নয়। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় পর একাত্তরের নরঘাতকদের বিচারের মুখোমুখি করে যে সাহসের পরিচয় দিয়েছেন তা থেকে এ আশা করা যায় যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নেও তিনি দৃঢ়তার সঙ্গেই এগিয়ে যাবেন।


একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিজামীর প্রাণদণ্ডের আদেশ দিয়েছিলেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন নিজামী। আপিল বিভাগও তার প্রাণদণ্ডের আদেশ বহাল রাখেন। সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ১০ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে নিজামীর মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। একাত্তরে নিজামী ছিলেন আলবদর বাহিনীর প্রধান। এই আলবদর বাহিনী দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যায় প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল। বাহিনীপ্রধান হিসেবে নিজামী যে নেতৃত্ব ও নির্দেশনা  দিয়েছিলেন  সেটা অস্বীকার করা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিল এদেশীয় রাজাকার-আলবদর- আলশামস বাহিনীর সদস্যরা।

জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েই এসব বাহিনী গঠনে সক্রিয়  ভূমিকা পালন করেছিল। গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনেও নেতৃত্ব দিয়েছিল জামায়াতে ইসলামীসহ পাকিস্তানমনা আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দল। স্বাধীনতার পর এই দলগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তখন গোলাম আযমসহ জামায়াতের কয়েক শীর্য নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন এবং বিদেশে বসে বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতায় শামিল হয়েছিলেন। আর বাকিরা দেশের মধ্যেই আত্মগোপনে থেকে পরিচয় লুকিয়ে সুদিনের অপেক্ষায় প্রহর গুনছিলেন।


১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটলে জামায়াত তথা গোপনে থাকা পাকিস্তানপন্থিদের সুদিন ফিরে আসে। জিয়াউর রহমানের বদান্যতায় এরা রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পায়। বিএনপির হাত ধরে জামায়াত এক সময়ে দেশের একটি অন্যতম রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের পরিচিত করতে সক্ষম হয়। যে দলটি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের বিরুদ্ধে ছিল, যারা পাকিস্তানিদের পক্ষ নিয়ে বাঙালি নিধনযজ্ঞে মেতে উঠেছিল তারা যখন লাখো শহীদের রক্তেভেজা দেশের মাটিতে সদর্পে রাজনীতি করার সুযোগ লাভ করে, তখন আমরা লজ্জা ও গ্লানিবোধ করলেও প্রতিকার করার সুযোগ পাইনি।

আমাদের সামনে সেই সুযোগ এনে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীর জামায়াত নেতাদের মন্ত্রী বানিয়ে তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিলেন। জাতিকে করেছিলেন কলঙ্কিত আর শেখ হাসিনা সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে শাস্তি দিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে, শাস্তি হবে এটা কেউই আশা করেননি। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী না হলে এটা হতোও না।


২০০৮ সালের নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠন করার পরও যুদ্ধাপরাধীদের  বিচার নিয়ে অনেকের মনেই সংশয় ছিল। অনেককেই বলতে শোনা গেছে, নির্বাচনে জেতার জন্য আওয়ামী লীগ স্টান্টবাজি করেছে, এটা একটা ‘রাজনীতি’। শেষ পর্যন্ত কারো বিচার হবে না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরও অনেকের মন থেকে দ্বিধা-সংশয় দূর হয়নি। বলা হয়েছে, এসব আইওয়াশ। রাজনৈতিক সুবিধা লাভের জন্য আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধ ইস্যু নিয়ে খেলছে। জামায়াত নেতারাও তখন নানা ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন।

২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল জামায়াতে ইসলামী আমির মতিউর রহমান নিজামী এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যু নিয়ে মাতামাতি করেন, তারা দেশের সমস্যাকে সমস্যা মনে করেন না। সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা তাদের নেই বলেই এই বিষয়কে সামনে এনেছেন। আমার পূর্ণ আস্থা আছে, দুরবিন দিয়ে তালাশ করলেও মানবতাবিরোধী কোনো অপরাধের সঙ্গে আমাদের দলের কারো সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যাবে না।’ জামায়াত নেতার এই দম্ভোক্তি মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। আদালতের রায়ে জামায়াত নেতাদের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। আদালত জামায়াতে ইসলামীকে একটি অপরাধী (ক্রিমিনাল) সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। একাত্তরে এই দল এবং দলের নেতাকর্মীরা বাঙালির স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। আদালতের রায়ে এর মধ্যেই নিজামীসহ জামায়াতের চার শীর্ষ নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এরা হলেন দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজামান এবং সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। জামায়াতের বাইরে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। সব শেষ গত ১১ মে নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে পৌঁছল বলে অনেকেই মনে করছেন।

জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম মানবতাবিরোধী দণ্ড মাথায় নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। আর এক জামায়াত নেতা একেএম ইউসুফও কারাগারে মারা গেছেন। জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মীর কাসেম আলী এবং এটিএম আজাহার উদ্দিনের মামলাও আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। এদের সবার যদি মৃত্যুদণ্ড নাও হয়, আমৃত্যু দণ্ড যে বহাল থাকবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিএনপি নেতা আব্দুল আলিমও দণ্ড হওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।


মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হবে না বলে যাদের মনে শঙ্কা ছিল তারা এখন কিছুটা হলেও শঙ্কামুক্ত হয়েছেন। বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত করার জন্য, ভণ্ডুল করার জন্য দেশে-বিদেশে কম চক্রান্ত-যড়যন্ত্র হয়নি। বিচার ঠেকাতে দেশের ভেতর জামায়াত চরম সহিংতার পথ বেছে নিয়েছিল। দেশের বাইরে মোটা টাকা দিয়ে লবিস্ট নিয়োগ করেছিল। সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য কোনো চেষ্টাই বাদ রাখা হয়নি। সরকার পরিবর্তন হলে নেতারা মুক্তি পাবেন এমন বিশ্বাস জামায়াতের ছিল। দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিও জামায়াতকে এই ইস্যুতে সহযোগিতাই করেছে। বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য বিএনপি সরাসরি বিচারের বিরোধিতা না করে বিচারের স্বচ্ছতা ও আন্তর্জাতিক মান নিয়ে বিতর্ক তুলেছে। জামায়াত এমনো মনে করত যে, বিদেশের চাপে সরকার শেষ পর্যন্ত বিচার কাজ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হবে। কিন্তু এর কোনোটাই হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও দৃঢ়তার কাছে কোনো বাধাই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। জামায়াত এখন পিছু হটেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় থেকে নেতাদের রক্ষা করার কোনো উপায় তাদের সামনে নেই এটা বুঝে এখন তারা কৌশল বদল করছে। এখন তারা আত্মরক্ষার উপায় খুঁজছে। শীর্ষ অপরাধীদের বিচার ও দণ্ড বাস্তবায়নের কারণে এখন জামায়াতের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকেই জামায়াতকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও জামায়াত নিষিদ্ধের পক্ষেই বলছেন। নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও প্রভাবশালী মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা সময়ের ব্যাপার বলে মন্তব্য করেছেন। জামায়াত নিষিদ্ধের একটি আইনের খসড়া শিগগিরই মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপিত হবে বলে আইনমন্ত্রীও জানিয়েছেন।

জামায়াত নিষিদ্ধ হলে তারা আত্মগোপনে গিয়ে সন্ত্রাসের পথ বেছে নেবে বলে মনে করে কেউ কেউ জামায়াত নিষিদ্ধের বিরোধিতাও করছেন। তবে জামায়াত নিষিদ্ধ না হয়েও এখনো কার্যত সন্ত্রাসী কার্যকলাপই চালিয়ে যাচ্ছে। জামায়াত কি কৌশলে চলবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে কোনো কোনো রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করেন, জামায়াত কোনো একটি আলাদা কৌশল নিয়ে অগ্রসর হবে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। জামায়াত একই সঙ্গে হয়তো চারটি বিকল্প পথই ব্যবহার করবে। ইতোমধ্যেই তারা তা ব্যবহার করতে শুরুও করেছে। প্রতিষ্ঠার পর জামায়াত তিন বার নিষিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু তারা বিলীন বা বিলুপ্ত হয়নি। বিপদের সময় কিভাবে আত্মরক্ষা করতে হয়, গা বাঁচাতে হয় সেটা জামায়াত ভালোই জানে। এবারো বিপদ মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি জামায়াত নিতে শুরু করেছে। তারা আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে যেমন ঢুকতে শুরু করেছে তেমনি বিভিন্ন নামে দেশে যেসব জঙ্গি সংগঠন গড়ে উঠছে সেগুলোতেও জামায়াতের কর্মীরা যোগ দিচ্ছে। জামায়াত নিষিদ্ধ যোষিত হলে নতুন নামে রাজনীতিতে নামার চেষ্টা করবে। তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যতদিন সরকার থাকবে ততদিন জামায়াত যত কৌশলই নিক না কেন খুব বেশি সুফল পাবে বলে মনে হয় না।

একাত্তর-পরবর্তী সময়ে জামায়াত যেভাবে রাজনীতিতে জায়গা করে নিতে পেরেছিল এখন তাদের সহায়-সম্পদ এবং সামাজিক প্রভাব প্রতিপত্তি অনেক বেশি হলেও সেভাবে পারবে না। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার প্রবণতা যেমন এখন বেড়েছে তেমনি ধর্মভিত্তিক জঙ্গিরাজনীতির বিরুদ্ধেও বৈশ্বিক জনমত প্রবল হয়ে উঠছে। জামায়াতের বড় সমস্যা হলো তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেদের এত বেশি জড়িয়েছে যে, তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা একেবারেই তলানিতে এসে ঠেকেছে। জামায়াতের পক্ষে উদার গণতান্ত্রিক রাজনীতি করা সম্ভব বলে কেউই মনে করেন না।


সরকারের বিরুদ্ধে অসম লড়াইয়ে নেমে তারা এত শক্তি ক্ষয় করেছে যে এখন আর সামান্য প্রতিবাদ জানানোর ক্ষমতাও তাদের নেই। দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর হরতালের কর্মসূচি যোষণা করা হলেও মাঠে দেখা যায় না জামায়াতের নেতাকর্মীদের। যে জামায়াত সাঈদীর রায় ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব শুরু করেছিল, সেই জামায়াত দলের আমিরের ফাঁসি হওয়ার পরও রাস্তায় বের হলো না এটা অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য বলেই মনে হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন জামায়াতের ওপর থেকে বিএনপি কৌশলগত কারণেই সাময়িকভাবে আশীর্বাদের ছাতা সরিয়ে নেয়ায় জামায়াত বিপাকে পড়েছে। জামায়াতের ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পরই জামায়াত তার পথ ঠিক করবে। জামায়াত এখন অনুকূল পরিবেশের জন্য অপেক্ষা করছে। তবে হাত-পা গুটিয়ে বসে থেকে নয়। বিএনপিও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তারা রাজনৈতিক খেলায় আওয়ামী লীগের কাছে হেরে গিয়ে এখন কানাগলির মধ্যে পথ খুঁজছে। আশা করছে, সরকারই হয়তো তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দেবে। শেখ হাসিনার বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে। কাজেই জামায়াত-বিএনপির এখন অপেক্ষা ছাড়া গতি নেই।

নিজামীর বিচারের রায় ও ফাঁসি কার্যকর করার ঘটনায় পাকিস্তান যেভাবে বিচলিত ও মর্মাহত হয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে তা থেকে আবারো এটাই স্পষ্ট হয়েছে যে, নিজামীদের আনুগত্য সব সময়ই ছিল পাকিস্তানের প্রতি। বাংলাদেশে তারা রাজনীতি করেছে পাকিস্তানের হয়ে। একাত্তরে আমরা নিজামীদের মুরব্বি পাকিস্তানকে পরাজিত করেছিলাম। সেই পরাজয়ের বদলা নেয়ার কোশেশ পাকিস্তান তার এ দেশীয় দোসরদের নিয়ে করেই চলেছে। আমরা আর কতদিন তাদের এই সুযোগ দেব?-মানবকন্ঠ
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

১৫ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

১৫ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ
১৫ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে