সোমবার, ১৬ মে, ২০১৬, ০৭:০৩:৫৫

এ সপ্তাহেই মীর কাসেমের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হতে পারে

এ সপ্তাহেই  মীর কাসেমের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হতে পারে

কবির হোসেন: একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের রায় লেখার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ সপ্তাহেই পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে। আর কোনো কারণে চলতি সপ্তাহে প্রকাশ না হলে সেটি আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত সময় নিতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।


সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে মীর কাসেম আলীর আপিলের খসড়া রায়টি লেখার কাজ শেষ হয়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা খসড়া রায়টি লেখার পর তা বেঞ্চের অন্য বিচারপতিদের কাছে পাঠান। এরই মধ্যে অন্য বিচারপতিরা তাদের মতামতসহ ওই খসড়া রায় প্রধান বিচারপতির কাছে ফেরত পাঠিয়েছেন। এখন রায়টি চূড়ান্ত করার পর নীল কাগজে প্রিন্ট করে তাতে স্বাক্ষর করবেন সব বিচারপতি। এর আগে ৮ মার্চ একাত্তরে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ‘বাঙালি খান’ হিসেবে পরিচিত মীর কাসেমের আপিল আংশিক মঞ্জুর করে মৃত্যুদণ্ড বহালের রায় দেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে এ বেঞ্চের অপর সদস্যরা ছিলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমান।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন গ্রেফতার হন মীর কাসেম আলী। পরে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার বিচার। ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। বিচার শেষে ১০টি অভিযোগ প্রমাণিত উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল রায় দেন ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর।


এর মধ্যে দুটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং অন্যান্য অপরাধে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরের ৩০ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেন মীর কাসেম। আপিলে তার খালাস চাওয়া হয়। আপিলের শুনানিকালে মামলাটির তদন্তে ত্রুটি থাকায় আপিল বিভাগ প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থাকে তিরস্কার করেন। এ কারণে রায় ঘোষণার আগে সরকারের দুই মন্ত্রী বিচার বিভাগ ও প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। এ ঘটনায় আপিল বিভাগ মন্ত্রীদ্বয়কে সাজাও দেন।


আপিলের রায়ে ১১ নম্বর অভিযোগে তার ফাঁসি বহাল রাখা হয়। এ অভিযোগটি ছিল কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে অপহরণ, ডালিম  হোটেলে তাকে অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা এবং মৃতদেহ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেয়ার অপরাধসংক্রান্ত। এছাড়া ট্রাইব্যুনালের রায়ে ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত ১২ নম্বর অভিযোগ থেকে আপিলের রায়ে খালাস দেয়া হয়। আপিলের রায়ে ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হওয়া তিনটি অভিযোগ থেকে (অভিযোগ নম্বর ৪, ৬ ও ১২) মীর কাসেমকে খালাস দেয়া হয়েছে।  অভিযোগ নম্বর ২, ৩, ৭, ৯, ১০, ১১ এবং ১৪ তে তার সাজা বহাল রাখা হয়েছে।


এখন আপিলের রায় প্রকাশের পর তা হাতে পেয়ে মীর কাসেম আলীর মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবেন যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনাল। তবে আপিলের রায়টি রিভিউয়ের (পুনর্বিবেচনার) জন্য তিনি ১৫ দিন সময় পাবেন। রিভিউ নিষ্পত্তির পরও তার দণ্ডের কোনো পরিবর্তন না হলে ফাঁসির কাষ্ঠে যেতে হবে প্রায় ৬৪ বছর বয়সী এ যুদ্ধাপরাধীকে।


এর আগে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ৫ আসামির ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী, দলটির সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। এরা সবাই আপিল বিভাগের রায় প্রকাশের পর তা রিভিউ চেয়ে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু রিভিউ আবেদনে কারও সাজার  কোনো পরিবর্তন হয়নি।-যুগান্তর

১৬ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে