ঢাকা : বিদ্যমান শিক্ষানীতি ও শিক্ষা আইনকে ইসলামবিদ্বেষী আখ্যায়িত করে তা বাতিলের দাবিতে আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর যুগ্ম সদস্য সচিব মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমীর নেতৃত্বে মহানগর নেতারা ঢাকা জেলা, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।
হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর আহবায়ক আল্লামা নূর হোছাইন কাসেমী স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন ডেপুটি কমিশনার মো. আল মামুন।
স্মারকলিপি প্রদানকালে প্রতিনিধি দলের প্রধান মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী বলেন, ইসলামবিদ্বেষী শিক্ষানীতি, ধর্মহীন শিক্ষা আইন বাতিল করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মাওলনা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা ফখরুল ইসলাম, মাওলানা শরীফুল্লাহ, মাওলানা রবিউল ইসলাম, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা ফয়সাল আহমদ, মাওলানা নূর মোহাম্মদ ও মাওলানা রবিউল ইসলাম প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, আজ অত্যন্ত ক্ষোভ ও দুঃখের সাথে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে আপনার কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হচ্ছে। কারণ বিতর্কিত ইসলামবিরোধী সেকুলার শিক্ষানীতি-২০১০ অনুসারে দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকগুলোতে ক্রমান্বয়ে ইসলাম ভাবাপন্ন পাঠসমূহ বাতিল করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিক্যবাদমূলক টেক্সট প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, বর্তমানে স্কুল পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে ইসলামী ভাবধারার লেখা বাদ দিয়ে মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের পাঁঠাবলীর নিয়ম, গরুকে মায়ের সম্মান, হিন্দুদের তীর্থস্থানে ভ্রমণ কাহিনী এবং হিন্দু রীতিনীতি ও দেব-দেবীর নামে প্রার্থনা করার বিষয়ে পড়ানো হচ্ছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে চলতি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ইসলামী আকিদা-বিশ্বাস এবং দাড়ি-টুপি ও পীর-মাশায়েখবিরোধী কাল্পনিক কাহিনীর প্রশ্ন জুড়ে দিয়ে লাখ লাখ মুসলিম ছাত্রছাত্রীকে ইসলামবিরোধী ও হিন্দুত্ববাদের মহানুভবতা প্রকাশ পায় এমন উত্তর লিখতে বাধ্য করা হয়েছে।
আমরা মনে করি, স্কুল-কলেজের বর্তমান ইসলামবিদ্বেষী শিক্ষাব্যবস্থাকে আইনি ভিত্তিদান এবং কওমি মাদ্রাসাসমূহকে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে আপনার সরকারের প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন-২০১৬ নামে একটি বিতর্কিত খসড়া আইন প্রকাশ করে তড়িঘড়ি পাস করার উদ্যোগ নিয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এসব কর্মকাণ্ডকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম নাগরিকদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও নৈতিক আদর্শের বিরোধী বলে আমরা মনে করি। দেশ ও জাতি গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় আপনার সরকার কর্তৃক পরিচালিত শিক্ষা মন্ত্রণালয় ধর্মীয় শিক্ষাকে শুধু সংকোচনই করেনি, বরং ইসলামধর্ম বিষয়ক এবং মুসলিম সংস্কৃতির প্রতি উদ্দীপনামূলক গল্প-রচনা ও কবিতাসমূহ বাদ দিয়ে তদস্থলে নাস্তিক্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদের প্রতি উদ্দীপনামূলক বিভিন্ন রচনা, গল্প ও কবিতা একতরফা প্রতিস্থাপিত করেছে।’
স্মারকলিপিতে বিভিন্ন শ্রেনীর পাঠ্যবইয়ের সিলেবাস পরিবর্তনের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়।
স্মারকলিপিতে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এবং তদালোকে প্রণীত শিক্ষাআইন ২০১৬-এর খসড়া অবিলম্বে বাতিল, নূরানী-মক্তব, হাফেজিয়া মাদরাসা ও কওমী মাদরাসার স্থাপন ও পরিচালনাকে নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতার আওতামুক্ত রাখা, প্রাথমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে চক্রান্তমূলকভাবে বাদ দেয়া ইসলামী ভাবধারার গল্প, রচনা ও কবিতাসমূহ পুনঃঅন্তর্ভূক্ত করা এবং পরিকল্পিতভাবে যুক্ত করে দেয়া হিন্দুত্ববাদী ও ইসলাম বিদ্বেষী কবিতা, গল্প ও রচনাবলী শিক্ষা সিলেবাস থেকে বাদ দেয়াসহ ১০ দফা দাবি করা হয়।
১৬ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম