মঙ্গলবার, ১৭ মে, ২০১৬, ০১:৩১:৪৫

অবিশ্বাস্য উত্থান সেই আসলাম চৌধুরীর

অবিশ্বাস্য উত্থান সেই আসলাম চৌধুরীর

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম থেকে : মাত্র কয়েক বছরের রাজনৈতিক জীবনে আসলাম চৌধুরীর অর্জনটা বেশ চমকপ্রদই। বিএনপির রাজনীতিতে ঝানু ও দক্ষ অনেক নেতাকেই পেছনে ফেলে দ্রুতগতিতে তিনি হয়ে গেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব। দলের অন্যতম আকর্ষণীয় পদ এটি।

ঢাকা, লন্ডন সব জায়গায় তার ব্যাপক প্রভাব। হয়েছেন অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকও। তার এ আকস্মিক উত্থানে বিস্মিত চট্টগ্রাম বিএনপির প্রবীণ নেতারা। প্রভাব-প্রতিপত্তিতে তিনি যেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, এম মোরশেদ খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের চেয়েও উজ্জ্বল।

চট্টগ্রামের ছাত্রদল, যুবদলসহ অঙ্গসংগঠনের ত্যাগী নেতা-কর্মীদেরও হাজারো প্রশ্ন— যে আসলাম চৌধুরীকে চট্টগ্রামের নেতারাই চিনতেন না তিনি আজ কীভাবে বিএনপি নেতা-কর্মীদের কাছে তো বটেই, দেশ-বিদেশেও বেশ পরিচিত! মোসাদকাণ্ডে গ্রেফতারের পর এখন তিনি সাত দিনের পুলিশি রিমান্ডে রয়েছেন। চট্টগ্রাম বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আসলাম চৌধুরীর রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক উত্থান আমাদের বিস্মিত করে। আমরা আরও বিস্মিত হয়েছি ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির এক নেতার সঙ্গে তার বৈঠকের খবরে। আমরা ৩০ বছরের রাজনীতিতে যা করতে পারিনি, অল্প সময়ের মধ্যেই তা আসলাম চৌধুরী করে দেখিয়েছেন। রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করতে না করতেই একের পর এক পদ লাভ করে যাচ্ছেন।’

দেশের রাজনীতির অঙ্গনে সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত নাম আসলাম চৌধুরী। এর আগেও তিনি নানা কারণে আলোচিত হয়েছিলেন। বিশেষ করে বিগত ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে সীতাকুণ্ড ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক নাশকতার নেপথ্য কারিগরের ভূমিকায় ছিলেন এই আসলাম চৌধুরী। এ সময় শুধু সীতাকুণ্ডে ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়া হয় সহস্রাধিক কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাস। ব্যাপক আগুনসন্ত্রাস সৃষ্টি করায় ঢাকা-চট্টগ্রামের সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্কের দুর্গে পরিণত হয়েছিল সীতাকুণ্ড। এটা আসলাম চৌধুরীর নির্বাচনী এলাকাও।

জানা যায়, ওই সময় শিবিরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্যাডারদের নিয়মিত আর্থিক সহায়তা ও গোলাবারুদের জোগান দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অচল করে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন আসলাম চৌধুরী। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক কূটচালে বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক রহমানের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন তিনি। নাশকতার ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে তার মাথার ওপর ১৭টি মামলার খড়্গ ঝুলছে। নাশকতা মামলায় গ্রেফতার হলেও প্রায় তিন মাস পর উচ্চ আদালতের রায়ে জামিনে তিনি মুক্ত হন। সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসির প্রধান মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করে আলোচনার ঝড় তুলে ফেললেন আসলাম চৌধুরী।

সূত্র জানায়, আসলাম চৌধুরী ছাত্রজীবনে সরাসরি কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলেও জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। তিনি রাজনীতির চেয়ে সামাজিক কাজে সম্পৃক্ত থাকতে পছন্দ করতেন বলে যুক্ত হন লায়নিজমের সঙ্গে। এখানে তিনি এমজেএফ পদধারী হয়ে সমাজসেবকের ছাপ লাগিয়ে নিজের নামের আগে যুক্ত করেন ‘লায়ন’। পরিচিত হন লায়ন আসলাম চৌধুরী হিসেবে। তিনি জিয়া পরিষদের চট্টগ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক হয়ে বিএনপির এই অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন ২০০২ সালে। মূলত এ সময়ই তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে পরোক্ষভাবে যুক্ত হন। পাঁচ বছর পর ২০০৭ সালে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হন আসলাম।

সূত্রমতে, অনেককেই ডিঙিয়ে তিনি হয়ে যান উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সীতাকুণ্ড আসন থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন এবং হেরে যান আওয়ামী লীগের আবুল কাসেম মাস্টারের কাছে। তার পরও দায়িত্ব পান কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের। ২০১৪ সালে জেলা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে পেছনে ফেলে কেন্দ্র থেকে বাগিয়ে আনেন উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়কের পদটিও। এ সময় উত্তরের রাজনীতিতে তিনি হয়ে ওঠেন যেন এক অপরিহার্য চরিত্র। সর্বশেষ দুই মাস আগে তিনি আসীন হন দলের যুগ্ম-মহাসচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক এক নেতা জানান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে বিসিএস পাস করে শিক্ষকতার মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করেন আসলাম চৌধুরী। ১৯৯৬ সালে শিক্ষকতা ছেড়ে এফসিএ করেন। পরে তিনি কবির স্টিল মিল কোম্পানিতে যোগ দেন। এরপর কনফিডেন্স সিমেন্ট কোম্পানির অর্থ ব্যবস্থাপক হিসেবে চাকরি নেন। এ কোম্পানিতেই তিনি হিসাব বিভাগের প্রধান হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। পরে চাকরি ছেড়ে ‘কনফিডেন্স সল্ট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু করেন ব্যবসা। জানা যায়, অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক হয়ে গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে আবির্ভূত হন। রাইজিং গ্রুপ নামে গড়ে তোলেন বেশ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

তার গড়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক লবণ কারখানা, শিপ ব্রেকিং ব্যবসা, এয়ার এভিয়েশন, রিসোর্ট ব্যবসা, আবাসন, ফিশ প্রিজার্ভার্সসহ হরেক রকমের ব্যবসা। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে তিনি বিএনপি সরকার আমলে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নিয়েছেন। চট্টগ্রাম মহানগরের এক নেতা বলেন, আসলাম চৌধুরীসহ কয়েক নেতার কারণে বিএনপির ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটির চেইন অব কমান্ড ভেঙে গেছে। এটা চট্টগ্রামের রাজনীতিতে চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আশা করি, বিএনপি চেয়ারপারসন বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ঘোষিত আংশিক কমিটিও পুনর্গঠন করবেন। -বিডি প্রতিদিন

১৭ মে ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে