বুধবার, ১৮ মে, ২০১৬, ১২:৫১:০৬

সমস্যা ছাড়ছে না বিএনপিকে

সমস্যা ছাড়ছে না বিএনপিকে

মাহমুদ আজহার: সমস্যা পিছু ছাড়ছে না বিএনপির। ৯ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের অন্যতম এ জনপ্রিয় দলটি এখনো নানা সংকটে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সৃষ্ট সংকট কাটাবার উদ্দেশ্য নিয়ে দল পুনর্গঠন করতে গিয়েও সংকটের অবসান হয়নি। নির্বাচনকে ঘিরে কয়েক দফা আন্দোলনেও সফল হতে পারেনি। স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আর কাউন্সিলকে ঘিরে থমকে যায় তৃণমূলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও প্রার্থী বাছাইয়ে নানা জটিলতায় পড়ে দলটি। মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়েও গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়।

কাউন্সিলের পর আংশিক কমিটি ঘোষণার পর দলের ভিতরে-বাইরে অন্তর্কোন্দল দেখা দেয়। এ কারণে দুই মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি। সর্বশেষ দলের যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পাওয়া আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদির দেখা-সাক্ষাতের খবরে নতুন করে চাপে পড়ে দলটি। কূটনৈতিক মহলেও এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। অবশ্য তাদের বোঝানোর সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। তারপরও সব ছাপিয়ে বিএনপি এখন আসলাম ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘রাজনৈতিক দলে কম-বেশি ঝামেলা থাকেই। তাও যদি কোনো রাজনৈতিক দল দীর্ঘ ৯ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকে তাহলে সমস্যা থাকবেই। বিএনপি অতীতেও নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে এসেছে, এখনো করছে। দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়ার আদর্শ যতদিন থাকবে, ততদিন বিএনপির কেউ ক্ষতি করতে পারবে না। আসলাম চৌধুরী ইস্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে মুসলিম দেশগুলোর কূটনৈতিক সম্পর্কে কোনো টানাপড়েন হচ্ছে না। এ ব্যাপারে বিএনপির অবস্থান সবার কাছেই পরিষ্কার করা হয়েছে। আশা করি, বিবিসির প্রতিবেদনেও এ ইস্যুটি অনেকটা স্পষ্ট হয়েছে।’

দুই মাসেও কমিটি দিতে পারেনি বিএনপি : জাতীয় কাউন্সিলের দুই মাস পরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি বিএনপি। তিন ধাপে গুরুত্বপূর্ণ ৪২টি পদে নেতাদের নাম ঘোষণার পর এ নিয়ে দলের ভিতরে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন, পদ-পদবি নিয়ে বাণিজ্য, দলের কথিত সিন্ডিকেটের একচ্ছত্র আধিপত্য, ত্যাগীদের বাইরে রেখে কমিটি দেওয়ার অভিযোগে মাঠ নেতারা ক্ষুব্ধ। কমিটি নিয়ে সিনিয়র কোনো নেতার সঙ্গেও আলাপচারিতা হয়নি বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া লন্ডনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মতামতও উপেক্ষিত হয়। এ কারণে কমিটি নিয়ে নতুন করে ভাবছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেই সামনের কমিটি দিতে চান তিনি। এ কারণে বাকি কমিটি ঘোষণায় আরও কিছুদিন সময় নিচ্ছেন বিএনপি প্রধান।

তবে এর আগে বিএনপির দুটি অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল ও জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি ঘোষণা হতে পারে। যুবদলের সভাপতি পদে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী ও সাইফুল আলম নীরবের নাম আসছে। সাধারণ সম্পাদক পদে সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর নাম আলোচনায় রয়েছে। অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবক দলে শফিউল বারী বাবু ও আমিরুল ইসলাম খান আলীমের নাম নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে। আবার শীর্ষ নেতৃত্বে মীর সরাফত আলী সপু ও আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলের নামও আলোচনায় রয়েছে।

জানা গেছে, পদ প্রত্যাশী যুব ও সাবেক ছাত্রনেতাদের বড় একটি অংশকেই এ দুই অঙ্গসংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করতে চান বেগম জিয়া। কারণ, নির্বাহী কমিটি ঘোষণা দেওয়ার পর কেউ বাদ পড়লে তাত্ক্ষণিক একটি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে নেতা-কর্মীদের মধ্যে। এ কারণে বিএনপি চেয়ারপারসনকে কেউ কেউ বুঝিয়েছেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার আগেই যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি দিলে উত্তাপ কিছুটা কমবে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর কমিটি দেওয়ারও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সেখানেও বড় একটি অংশের জায়গা হবে। তবে ঢাকা মহানগর দুই ভাগ না চার ভাগ করা হবে এখনো স্পষ্ট নয়। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ঢাকা মহানগরসহ প্রায় সব অঙ্গসংগঠনের কমিটি তারেক রহমানের সবুজ সংকেত পাওয়ার পর ঘোষণা করা হবে। এ ব্যাপারে তারেক রহমান নিজের মতামত ব্যক্তও করেছেন বলে সূত্রে জানা গেছে।

ভিতরে-বাইরে আসলাম ঝড় : বিএনপির ভিতরে-বাইরে এখন আসলাম ঝড় বইছে। ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ আর ছবি তোলার ঘটনায় গণমাধ্যমে শিরোনাম হন তিনি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। দলের বড় একটি অংশই আসলাম চৌধুরীর এ কর্মকাণ্ডকে মেনে নিতে পারছেন না। আসলামের সঙ্গে মোসাদ যোগাযোগ থাকুক আর নাই থাকুক ইসরায়েলের কোনো নেতার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা দফায় দফায় বৈঠক মেনে নেওয়া যায় না বলে মনে করেন নেতা-কর্মীরা।

এ ঘটনা যেভাবে উঠে এসেছে, তাতে বিএনপি রাজনীতিতে আরও পিছিয়ে গেছে। এটা সামাল দিতে আরও অনেক সময় লাগবে বলে মনে করেন নেতা-কর্মীরা। বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা মন্তব্য করেন, ‘আসলাম ইস্যুতে মুসলিম বিশ্বের কূটনীতিতে বিএনপি লণ্ডবণ্ড হয়ে পড়েছে। কারণ ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো ছিল। মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গেও তার সম্পর্ক ছিল অনেক গভীরে। সেই জিয়ার দলের কোনো এক নেতা যদি প্যালেস্টাইন বিরোধী ইসরায়েলি নেতার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন তাহলে এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।’ অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘মুসলিম বিশ্বের সমর্থন পেতে মিথ্যা ষড়যন্ত্রের নাটক সাজিয়ে আসলাম চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ষড়যন্ত্র শেখ হাসিনা ও তার দলের ব্যক্তিগত অর্জন। তারা ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই বোঝেন না। তাই তারা ষড়যন্ত্র বলে বেড়াচ্ছেন। ষড়যন্ত্র কখনো প্রকাশ্যে হয় না। আসলে ষড়যন্ত্র করে এ সরকারই ভারতের সহযোগিতায় ক্ষমতায় আছে।’

ইউপি নিয়ে আর মাথা ব্যথা নেই : নানা সমস্যার আবর্তে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়েও এখন আর মাথা ঘামাচ্ছে না বিএনপি। দায়সারাভাবে প্রার্থী দিয়েই খালাস কেন্দ্র। আগামী ২৮ মে ৫ম ধাপের নির্বাচনে ১০০টি ইউপিতে প্রার্থীই দিতে পারেনি দলটি। কেন্দ্র থেকে প্রতীক নেওয়ার পর চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বড় একটি অংশই মনোনয়নপত্র জমা দেয়নি। এ নিয়ে কেন্দ্রেরও নেই কোনো উচ্চবাচ্য। এর আগে কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছিল, যারা দেনদরবার করে মনোনয়ন নিয়ে জমা দেননি, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণদর্শানোর নোটিসও দেওয়া হবে। কিন্তু তার কোনো বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা বলেন, ‘শুরু থেকেই সরকার যেভাবে ইউপি নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করছে, তাতে বিএনপিরই বা কী করার আছে। দলের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থেকেছে। দেশ-বিদেশে সরকারের হিংস্রতা প্রকাশ পাচ্ছে।-বিডি প্রতিদিন

১৮ মে ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে