বুধবার, ২৫ মে, ২০১৬, ০৪:৫৫:১০

বিএনপির ১১ সহযোগী সংগঠনের বেহাল অবস্থা

বিএনপির ১১ সহযোগী সংগঠনের বেহাল অবস্থা

মোশাররফ বাবলু: বিএনপির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন অনেকটা বেহাল হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ সংগঠনের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। এগুলোতে কেউ কারও নেতৃত্ব মানছেন না। মতবিরোধ ও অসন্তোষ বাড়ছে। এ অবস্থায় বিএনপির হাইকমান্ড নতুন কমিটি গঠনের চিন্তা করছে। পুনর্গঠনের কাজে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া হাত দিচ্ছেন। এসব সংগঠনের শীর্ষ পদে থাকা নেতাদের মধ্যে কারও কারও বিরুদ্ধে গুরুতর সাংগঠনিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। শিগগিরই নতুন কমিটি গঠনের কার্যক্রম শুরু হবে বলে দলীয় সূত্র জানায়।


গত ১৯ মার্চ বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল হয়েছে। সরকারবিরোধী আন্দোলন-কর্মসূচি শুরুর আগেই চেয়ারপারসন এক এক করে সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন নতুন করে ঢেলে সাজাতে চান। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পরই বিএনপি চেয়ারপারসন ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন। প্রথমে তিনি শ্রমিক দল ও ছাত্রদলের কমিটি পুনর্গঠনের কাজে হাত দেন। এক পর্যায়ে কমিটিতে স্থান না পাওয়া বঞ্চিতদের আন্দোলনে পরস্পরের মধ্যে বিরোধ ছড়িয়ে পড়লে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর পুনর্গঠন কাজ থেমে যায়। পরে শ্রমিক ও ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয়। নতুন করে আবার বিএনপি চেয়ারপারসন দলের অন্য অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজাবেন বলে সূত্র জানায়।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে অধিকাংশের কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। তাই সংগঠন পুনর্গঠন করা হবে। অতীতের যে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে এসব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। আবার যেন এসব সংগঠন আগের মতো সক্রিয় হয়ে বিএনপির শক্তি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে থাকতে পারে, এ জন্যই ঢেলে সাজানোর কার্যক্রম চলছে।

যুবদল: ২০১০ সালের ১ মার্চ সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে সভাপতি এবং সাইফুল আলম নীরবকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে মামুন হাসানকে সভাপতি ও এস এম জাহাঙ্গীরকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্য বিশিষ্ট ঢাকা মহানগর উত্তর এবং হামিদুর রহমান হামিদকে সভাপতি ও রফিকুল আলম মজনুকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্য বিশিষ্ট নগর দক্ষিণের কমিটি ঘোষণা করা হয়। একই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া ২১১ সদস্য বিশিষ্ট যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করেন। বর্তমানে ২৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি রয়েছে।

 

যুবদলের কমিটির মেয়াদ ৩ বছর। তবে ছয় বছরেরও অধিক সময় ধরে সংগঠনটির বর্তমান কমিটি (কেন্দ্রীয় ও মহানগর উত্তর-দক্ষিণ) বহাল রয়েছে। যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরবের মধ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব করা হয়েছে। এ অবস্থায় আন্দোলনে গতি আনতে পারবেন এমন নেতা খোঁজা হচ্ছে।

ছাত্রদল :২০১৫ সালের ১৪ অক্টোবর ১৫৩ সদস্যের ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির সভাপতি রাজীব আহসান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার। কমিটি গঠনের পর বঞ্চিত ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ব্যাপক আন্দোলন শুরু করেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয় ও নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ব্যাপক বিক্ষোভ করেন তারা। এক পর্যায়ে ৭৩৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয় বিএনপি হাইকমান্ড। তবে কাউন্সিলের মাধ্যমে এ কমিটি হয়নি। গত ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের কাউন্সিল হয়। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা থাকায় তারা আন্দোলন করতে পারছেন না বলে জানান।

শ্রমিক দল :২০১৪ সালের ১৯ ও ২০ এপ্রিল জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তিনদিন পর আনোয়ার হোসাইনকে সভাপতি, নুরুল ইসলাম খান নাসিমকে সাধারণ সম্পাদক ও জাকির হোসেনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ৩৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়াও রয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ মহানগর কমিটি। আনোয়ার হোসাইন জানান, অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের চেয়ে শ্রমিক দলের সংগঠন একটু ব্যতিক্রম। শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিক দলকে চলতে হয়। শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি নিয়ে কোনো গ্রুপিং নেই বলে তিনি জানান।

কৃষক দল :এক সময় বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামে কৃষক দলও সম্মুখ সারিতে থাকত। তবে বর্তমানে কৃষক দল আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে পারছে না। কৃষক দলের সভাপতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সাধারণ সম্পাদক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু মূল দল নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সংগঠনের অন্য নেতারাও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। মির্জা ফখরুল কৃষক দলের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। এ কারণেই কমিটি পুনর্গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে দলের হাইকমান্ড।

মহিলা দল :বিএনপির সহযোগী মহিলা দলের কার্যক্রম থেমে গেছে। নুরে আরা সাফা ও শিরিন সুলতানার নেতৃত্বে মহিলা দলের যে কমিটি রয়েছে তা অনেকটা নিষ্ক্রিয়। নুরে আরা সাফার রাজপথে আন্দোলনে অংশ নেওয়ার মতো অবস্থা নেই। শিরিন সুলতানা দলীয় কাজে সক্রিয় থাকলেও নেতৃত্ব নিয়ে তার সঙ্গে মহিলা দলের সাবেক সংসদ সদস্যদের তেমন একটা ভালো সম্পর্ক নেই। এ জন্য সংগঠনটি দ্রুত পুনর্গঠন করতে চান বিএনপি চেয়ারপারসন।

জাসাস : বিএনপির আন্দোলনে জাসাসও এক সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। প্রতিটি আন্দোলন-কর্মসূচিতে জাসাসের নিজস্ব শিল্পীরা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করে তুলতেন। জাসাস এখন একেবারেই নীরব হয়ে গেছে। সংগঠনে গ্রুপিং চলছে। ছয় বছর আগে জাসাসের কমিটি হয়েছে। নতুনভাবে কমিটি গঠনের কার্যক্রম চলছে।

স্বেচ্ছাসেবক দল : স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারাও অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছেন। সংগঠনের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব করা হয়। এবার তাকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব করা হয়েছে। সংগঠনের অন্য নেতারা সভাপতি হওয়ার জন্য দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা শফিউল বারী বাবু সভাপতি হওয়ার ব্যাপারে আলোচনায় আছেন। এ নিয়ে দলের মধ্যে গ্রুপিং রয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা দল :গ্রুপিং ও কোন্দলের কারণে অকেজো হয়ে পড়েছে মুক্তিযোদ্ধা দল। সংগঠনের একটি অংশ অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিনকে কৌশলে সরিয়ে দিয়ে ইসতিয়াক আজিজ উলফাতকে সভাপতির দায়িত্বে বসালেও অধ্যক্ষ সোহরাব এখনও নিজেকে সভাপতি দাবি করেন। এ পরিস্থিতিতে সংগঠনটিতে নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। বিএনপি চেয়ারপারসন মুক্তিযোদ্ধা দলের কমিটি পুনর্গঠনের কাজে হাত দিচ্ছেন।

ওলামা দল :দীর্ঘদিন ধরে ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ আবদুল মালেক ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শাহ মো. নেছারুল হক। পদ-পদবি নিয়ে তেমন কোনো গ্রুপিং না থাকলেও ওলামা দলের কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই বললেই চলে।

তাঁতী দল :২০০৮ সালের ২২ মে কমিটি গঠন হয়। এরপর আর কাউন্সিল হয়নি। বর্তমান সভাপতি হুমায়ুন ইসলাম খান পরপর দুইবার সভাপতি হন। সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ হতে চান সভাপতি। তাঁতী দল বিভিন্ন জেলায় কমিটি করেছে।

মৎস্যজীবী দল :মৎস্যজীবী দলের কমিটি ২০০৯ সালে হয়। কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে ৪ বছর আগেই। সংগঠনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মাহতাব ও সাধারণ সম্পাদক মিলন মেহেদী। কমিটির নেতাদের তেমন কোনো কার্যক্রম দেখা যায় না।-সমকাল

২৫ মে, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে