মঙ্গলবার, ৩১ মে, ২০১৬, ০৯:১৭:২১

প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফরে যেসব আহ্বান থাকছে

প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফরে যেসব আহ্বান থাকছে

মিজানুর রহমান : সৌদি আরবে বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রবেশাধিকার পুরোপুরি উন্মুক্ত করার (ভিসা খোলার) তাগিদ ও বিনিয়োগের আহ্বান নিয়ে দেশটি সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ৩রা জুন জেদ্দার উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যাবেন প্রধানমন্ত্রী, থাকবেন ৭ই জুন পর্যন্ত।

গত বছরের শুরুতে দায়িত্ব নেয়া সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে দ্বিপক্ষীয় সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। চার দিনের ওই সফরে বাদশাহ’র সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছাড়াও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফ ও উপ-যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

এছাড়া, রাজপরিবারের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন সদস্য, ব্যবসায়ী ও প্রবাসীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মতবিনিময়ের সূচি রয়েছে। রমজানকে সামনে রেখে এবারের সফরে প্রধানমন্ত্রী এবং তার সফরসঙ্গীদের অনেকে পবিত্র ওমরাহ পালন করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর সফর প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত সরকারি সূত্রগুলো মানবজমিনকে এই তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র মতে, আগামী ৫ই জুন সৌদির নতুন বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের সঙ্গে প্রথমবারের মতো দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমান মেয়াদে এটি প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সৌদি সফর। সেখানে দেশটির বাদশাহ’র বিবেচনায় বাংলাদেশের পক্ষে অনেকগুলো প্রস্তাব উত্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দেশটির শ্রমবাজারে বাংলাদেশি পুরুষ শ্রমিকদের প্রবেশাধিকার বা ভিসা পুরোপুরি উন্মুক্ত করে দেয়া।

বেশ ক’বছর বাংলাদেশি পুরুষ শ্রমিকদের সৌদি আরবে ভিসা বন্ধ রয়েছে। দেশটিতে বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীদের নিকট আত্মীয় পুরুষকর্মী নিয়োগের একটি ঘোষণা সমপ্রতি রিয়াদের তরফে দেয়া হলেও দেশটির শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য পুরোপুরি উন্মুক্ত হয়নি।

সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের ভিসা বা প্রবেশাধিকার পুরোপুরি উন্মুক্ত করতে সরকারের ওপর অভ্যন্তরীণ চাপ রয়েছে। সরকারের তরফে কূটনৈতিক পর্যায়ে এ নিয়ে জোর তৎপরতা চালানো এবং কোনো দেশ বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা বন্ধ নয় বলে বরাবরই দাবি করা হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা আলাপে গতকাল বলেন, সৌদি আরবে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ভিসা পুরোপুরি উন্মুক্তকরণের অনুরোধই প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরের টপ এজেন্ডা বা মুখ্য আলোচ্য। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র দপ্তর ও সৌদি আরবে থাকা বাংলাদেশ মিশন কাজ করছে। এজেন্ডায় দ্বিতীয় যে বিষয়টি রয়েছে তা হলো- বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে সৌদি বিনিয়োগ কামনা। প্রধানমন্ত্রী ও বাদশাহ’র শীর্ষ বৈঠকে বিনিয়োগ বাড়াতে দেশটির আনুষ্ঠানিক সহযোগিতা চাওয়া হবে।

সৌদি আরবের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়টিও আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান পেতে পারে জানিয়ে ঢাকার এক কর্মকর্তা বলেন, সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থা মোকাবিলায় সৌদি আরব জোটবদ্ধভাবে কাজ করার যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে একেবারে গোড়ার দিকে যারা সমর্থন দিয়েছে বাংলাদেশ তার অন্যতম। কারিগরি দক্ষতা, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় অভিজ্ঞতা এবং প্রযুক্তি জ্ঞানের মাধ্যমে রিয়াদের ওই উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করতে চায় বাংলাদেশ।

জাতিসংঘের বাইরে বাংলাদেশ কোথাও সামরিক শক্তি ব্যবহারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে না সেটি সৌদি নেতৃত্বের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা হয়েছে বাংলাদেশের নেতৃত্বের। পররাষ্ট্র দপ্তরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা আলাপে গতকাল বলেন, আমাদের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। আমরা ব্লু হেলমেট বা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনের বাইরে কোথাও সৈন্য এবং  রসদসরঞ্জাম পাঠাই না। সৌদি আররে শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় সেই অবস্থানই পুনর্ব্যক্ত করা হবে বলে জানান তিনি।

অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, কুয়েতের ক্যান্টনমেন্ট তৈরির কাজে সহযোগিতাসহ দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতের সহযোগিতা অত্যন্ত চমৎকার। সৌদি আরবের সঙ্গে ডিফেন্স কো-অপারেশন বা প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা বাড়ানো বিশেষ করে তাদের অবকাঠামো সংস্কার কাজে বাংলাদেশের সহযোগিতার প্রস্তাব থাকবে।

এখনও সফরের অনেক কিছু চূড়ান্ত হয়নি দাবি করে ঢাকার কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সফরে সৌদি আরবের সঙ্গে বিনিয়োগ, শিক্ষা ও সংস্কৃতির সহযোগিতা বিষয়ে তিনটি চুক্তি সইয়ের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া, বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসক-নার্সসহ দক্ষ শ্রমিক নেয়ার বিষয়েও দেশটির সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।

উল্লেখ্য, গত ৮ই জানুয়ারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সৌদি সফরের সময় সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেয়  সৌদি আরব। তার সফরের ফিরতি হিসেবে গত ৮ই মার্চ ঢাকায় ঝটিকা সফর করেন  সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদেল আল জুবায়ের। সে সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রীদ্বয়ের সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে আলোচনা হয়। তখন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুবায়ের বলেছিলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে সৌদি বাদশাহ সালমান অপেক্ষায় আছেন। আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর সফরের পর জানানো হয়- সেখানে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন মন্ত্রীদ্বয়।

পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়েও মতবিনিময় করেছেন তারা। সে ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয় প্রধানমন্ত্রীর সৌদি সফরে বিনিয়োগ, সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ে সহযোগিতা চুক্তি সইয়ে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ডাক্তার ও নার্সসহ আরো দক্ষ ও আধা-দক্ষ শ্রমিক নিয়োগেও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি হেলথ প্রফেশনালদের নিয়োগের জন্য সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করবে জানিয়ে সে সময় বলা হয়েছিল মেডিকেল ডিগ্রি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পরিদর্শনের বিষয়ে উভয় মন্ত্রণালয় সম্মত হয়েছে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও ওষুধ সামগ্রীর মতো বিশ্বমানের পণ্য সৌদি আরবে রপ্তানিতে দেশটির নেতৃত্বের আগ্রহ রয়েছে। সৌদি ব্যবসায়ীরাও বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগাতে চান। তবে সব কিছু নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর সফরের ওপর। ওই সফর ফলপ্রসূ হওয়ার মধ্য দিয়ে দুই দেশের সার্বিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর আশা করছেন ঢাকার কর্মকর্তারা। -এমজমিন
৩১ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে