শনিবার, ০৪ জুন, ২০১৬, ০৫:৪২:৫৩

মোহাম্মদ আলিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান

মোহাম্মদ আলিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান

নিউজ ডেস্ক : ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেরা বক্সার মোহাম্মদ আলির হাতে বাংলাদেশের নাগরিকত্বের সনদ তুলে দিয়েছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।  

সেরা মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলি যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন।  এ দেশকে তিনি 'বেহেশত' মনে করতেন।  জন্মভূমি যুক্তরাষ্ট্র হলেও এদেশেই আশ্রয় নেবেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার ফোনিক্স এরিনা হাসপাতালে মারা যান মোহাম্মদ আলি।  মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।

কিংবদন্তি আলী ১৯৭৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফরে আসেন।  সপ্তাহব্যাপী এ সফরে তার সঙ্গী ছিলেন দ্বিতীয় স্ত্রী ওভেরোনিকা পোরশে, মেয়ে লায়লা আলী, ভাই, বাবা ও মা।

ঢাকায় আলিকে ব্যাপক সংবর্ধনা দেয় হয়।  বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়া হয় তাকে।  রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বক্সার আলির হাতে বাংলাদেশের নাগরিকত্বের সনদপত্র ও পাসপোর্ট তুলে দেন ।

বাংলাদেশে নাগরিকত্ব পেয়ে মোহাম্মদ আলি বলেন, কখনো জন্মভূমি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেয়া হলে বাংলাদেশ হবে আমার থাকার জায়গা।

আলির সম্মানে তৎকালীন ঢাকা (বর্তমান বঙ্গবন্ধু) স্টেডিয়ামে প্রদর্শনী মুষ্টিযুদ্ধের আয়োজন করা হয়। এতে ১২ বছর বয়সী বাংলাদেশি বালক মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন তিনি।

বাংলাদেশ সফরকালে মোহাম্মদ আলি সুন্দরবন, সিলেট, রাঙামাটি ও কক্সবাজার ভ্রমণ করেন। বাংলাদেশের সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত হন তিনি।  উচ্ছ্বসিত হয়ে বাংলাদেশকে 'বেহেশত' আখ্যা দেন তিনি।  বিশ্ববাসীর উদ্দেশে বলেন, বেহেশতে যেতে চাইলে বাংলাদেশে ঘুরে আসুন!

১৯৪২ সালের ১৭ জানুয়ারি লুইভিলে খৃস্টান দম্পতি রংমিস্ত্রি ক্যাসিয়াস মারকেলাস ক্লে ও গৃহিনী ওডিসা গ্র্যাডি ক্লের ঘরে জন্ম নেন আলি।  বাবা নিজের নামে সন্তানের নাম রাখেন ক্যাসিয়াস মারকেলাস ক্লে জুনিয়র।

ক্লে জুনিয়র ১৯৬০ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে রোম অলিম্পিকে লাইট-হেভিওয়েটে সোনা জিতে খ্যাতির তালিকায় উঠে আসেন।

এরপর ১৯৬৪ সালে ২২ বছর বয়সে বিখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা সনি লিস্টনকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

১৯৬৪ সালে ইসলামী সংগঠন নেশন অব ইসলাম-এ যুক্ত হন মোহাম্মদ আলি।  এরপর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি।

আলি জানিয়েছিলেন, তার ইসলাম গ্রহণের পেছনে ভূমিকা রাখেন নেশন অফ মুসলিম-এর প্রধান ডাব্লিউ ডি মুহাম্মদ।  তার অনুপ্রেরণাতেই তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

সারাজীবনে মোহাম্মদ আলি মোট ৬১টি বড় মুষ্টিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, যার মধ্যে ৫৬টিতেই জয়ী হন তিনি। এর মধ্যে ৩৭টি খেলায় তিনি প্রতিপক্ষকে নকআউট করে বিজয়ী হন।  মাত্র পাঁচবার পরাজিত হন তিনি।

১৯৬৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মুষ্টিযুদ্ধে সনি লিসটনকে পরাজিত করে দ্রুত খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে যান মোহাম্মদ আলি।  এ সময় তিনি ঘোষণা দেন, তিনি ‌‘নেশন অফ মুসলিম’ সংগঠনের সদস্য।  

এর কিছুদিন পর সংগঠনটির প্রধান সাংবাদিকদের কাছে তাকে মোহাম্মদ আলি বলে পরিচয় করিয়ে দেন।

১৯৬৬ সালে মোহাম্মদ আলি ভিয়েতনাম যুদ্ধে যেতে অস্বীকার করেন।  যদিও সে সময় মার্কিন তরুণদের যুদ্ধে যাওয়া বাধ্যতামূলক ছিল।  যুদ্ধে যেতে অস্বীকার করায় তিনি শাস্তির মুখোমুখি হন।  তিনি বলেন যে,  আল কোরআন যুদ্ধ সমর্থন করে না।  আল্লাহ বা নবী (স.)-এর নির্দেশ ছাড়া যুদ্ধে যাবেন না তিনি।

২০১৬ সালের ৩ জুন শুক্রবার ৭৪ বছর বয়সে আমেরিকার একটি হাসপাতালে মারা যান বক্সিংয়ে ইতিহাস সেরা বক্সার আলি।
৪ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে