রবিবার, ০৫ জুন, ২০১৬, ০৩:৫২:০০

ঈদের পরই মাঠে নামছে বিএনপি

ঈদের পরই মাঠে নামছে বিএনপি

হাবিবুর রহমান খান: সরকারের বিরুদ্ধে দুই দফা আন্দোলনে ব্যর্থতার পর আবারও মাঠে নামছে বিএনপি। তবে ধ্বংসাত্মক বা নেতাকর্মীরা চাপে পড়তে পারেন আপাতত এমন কোনো কর্মসূচি দেয়া হবে না। জঙ্গিবাদের উত্থান, গুপ্তহত্যা বৃদ্ধিসহ আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি, চলমান ইউপি নির্বাচনে নানা অনিয়ম ও সহিংসতার চিত্র তুলে ধরাসহ জনসম্পৃক্ত বিষয় নিয়ে রাজপথে সক্রিয় হওয়ার পরিকল্পনা করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। এছাড়া গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে তাৎক্ষণিকভাবে কর্মসূচি দেয়ারও সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির। সরকারবিরোধী জনমত সৃষ্টি ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করাই তাদের প্রধান টার্গেট। এ লক্ষ্যে কয়েক জেলায় সমাবেশ করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ঈদের পর বৃহত্তর ফরিদপুরে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হবে তার জেলা সফর। সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে ফরিদপুরসহ আরও কয়েকটি জেলায় সমাবেশের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।


রাজপথে নামার আগে দলের পুনর্গঠনও শেষ করতে চায় বিএনপি। রমজানের মধ্যেই শেষ করা হবে নির্বাহী কমিটির বাকি অংশের কাজ। একই সঙ্গে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি গঠনের কাজও শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে এ প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। দলটির নীতিনির্ধারকদের মতে, দীর্ঘদিন রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকায় দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমে এসেছে। নেতারা নিষ্ক্রিয় থাকায় একে অপরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের সুযোগ পাচ্ছেন। মনোনয়ন ও পদ বাণিজ্যের অভিযোগেও দলের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে অস্থিরতা। তাই ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামলে দলে গতিশীলতা আসবে। তৃণমূল নেতাকর্মীরাও উজ্জীবিত হবে। এছাড়া স্থবিরতার কারণে দলের নেতাদের মধ্যে সৃষ্ট ক্ষোভ ও মনোমালিন্য দূর করা সম্ভব হবে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রত্যাশাও তাই।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে ও সরকারের অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে তাদের দল আন্দোলনের মধ্যেই আছে। দেশে কোনো মানবাধিকার ও আইনের শাসন নেই। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। বিএনপি সব সময়ই জনদুর্ভোগসহ জাতীয় ইস্যুতে গণতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলন করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। কারণ বিএনপি জনগণের জন্য রাজনীতি করে। জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে কি কর্মসূচি দেয়া যায় সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে দলের চেয়ারপারসন তা চূড়ান্ত করবেন।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, বিএনপি কখনও ধ্বংসাত্মৃক বা জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি বিশ্বাস করে না। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে কেউ যাতে এসব করতে না পারে সেদিকেও তাদের সতর্ক দৃষ্টি থাকবে।


সূত্র জানায়, আসন্ন রমজানে রাজপথে না থাকলেও ইফতার রাজনীতি নিয়ে নানা কৌশল গ্রহণ করেছে বিএনপি। দলকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে ক্ষমতাসীনদের বাইরে থাকা বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়া ইফতারের আড়ালে কূটনীতিকদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নেও দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েক নেতা কাজ শুরু করেছেন। সব মিলিয়ে রমজান মাসকে সাংগঠনিক ও আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণের মাস হিসেবে ধরে নিয়েছে বিএনপি।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবার বিভিন্ন ইস্যুকে সামনে রেখে আগাম নির্বাচন (সংসদ) আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনে নামার চিন্তাভাবনা করছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলের কয়েক নেতাকে আন্দোলনের রোডম্যাপ তৈরি করতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা আন্দোলনের প্রাথমিক কর্মপন্থা এরই মধ্যে তৈরি করেছেন। শিগগিরই সেই রূপরেখা দলের চেয়ারপারসনের কাছে জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এক নেতা। তা নিয়ে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন খালেদা জিয়া।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, মাঠে নামার আগে প্রথমে প্রয়োজন সাংগঠনিক শক্তি ও দলের ঐক্য। আন্দোলন সফল করতে হলে আমাদের ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। ব্যক্তিস্বার্থকে বিকিয়ে দিয়ে দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করার মানসিকতা নিয়ে এগোতে হবে। দলকে শক্তিশালী করে দ্রুতই জনস্বার্থে রাজপথে নামা হবে। বিএনপির নবনিযুক্ত যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাদের দুর্নীতি চরম পর্যায় পৌঁছে গেছে। ক্ষমতাসীনরা এখন রডের বদলে বাঁশ ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, সরকারের এসব অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে প্রতিবাদ জানানো হবে। সেই প্রতিবাদের কর্মসূচি কি হবে তা দলের চেয়ারপারসন ঠিক করবেন। তবে দ্রুতই বিএনপিকে মাঠে দেখা যাবে।
জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন বলেন, কাউন্সিলে নেতাকর্মীদের মধ্যে যে চাঙ্গা ভাব লক্ষ্য করা গেছে তা ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। কমিটি গঠনসহ হাইকমান্ডের কর্মকাণ্ডে তৃণমূল নেতাকর্মীরাও ক্ষুব্ধ এবং হতাশ। এ মুহূর্তে দলের পুনর্গঠন শেষ করে নতুন উদ্যমে মাঠে নামার বিকল্প নেই। রাজপথে নামলেই নেতাদের মধ্যে থাকা সামান্য মনোমানিল্য, অনৈক্য সবকিছু দূর হয়ে যাবে। ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি নিয়ে শিগগিরই রাজপথে নামার কৌশল চূড়ান্ত করতে হাইকমান্ডের প্রতি আহ্বান জানান তৃণমূলের এ নেতা।-যুগান্তর

৫ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে