রবিবার, ০৫ জুন, ২০১৬, ১১:৫১:৪৬

আলীকে একখণ্ড জমি উপহার দিয়েছিলেন কক্সবাজারের বাবুল

আলীকে একখণ্ড জমি উপহার দিয়েছিলেন কক্সবাজারের বাবুল

নেছার উদ্দিন : ভুবন কাঁপানো বক্সার ছিলেন মোহাম্মদ আলী। পেশাদার ক্যারিয়ারের ৬১টি লড়াইয়ের ৫৬ টিতেই জিতেছিলেন তিনি। ৩৮ বছর আগে কিংবদন্তী এই বক্সার এসেছিলেন বাংলাদেশে। ফাঁকে ঘুরে এসেছেন সমুদ্রশহর কক্সবাজারও। তৎকালীন কক্সবাজার মহকুমাবাসীর পক্ষ থেকে আলীকে দেয়া হয়েছিল রাজকীয় গণ সংবর্ধনা। কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয় পর্যন্ত দীর্ঘ পথে হাজার হাজার ভক্ত-অনুরাগীর সশ্রদ্ধ অভ্যর্থনায় সিক্ত হয়েছিলেন কিংবদন্তী। সেই কিংবদন্তীকে আজো ভুলেনি কক্সবাজার। অবশ্য কক্সবাজার তাকে ভুলতেও পারবে না। তার কারণ কক্সবাজারের কলাতলীর সাগরপাড়েই রয়েছে মোহাম্মদ আলীর নিজের একখণ্ড জমি। সেখানে এসে তার বাড়ি করার কথাও ছিল। কিন্তু সৈকতে সে বাড়ি তার আর করা হলো না। তিনি এখন না ফেরার দেশে।

৭৮ এর ফ্রেব্রুয়ারি মাসে যখন মোহাম্মদ আলী কক্সবাজার আসেন, তখন তার এক ভক্ত তাকে জমিটি উপহার দিয়েছিলেন। যদিও অনেকে মনে করেন মোহাম্মদ আলীকে জমিটি রাষ্ট্রের তরফ থেকে দেয়া হয়েছিল। তথ্যটি সঠিক নয়। যে ভক্ত আলীকে সাগরপাড়ের সেই জমি উপহার দিয়েছিলেন তার নাম আক্তার নেওয়াজ খান বাবুল। বাবুল সে সময় টগবগে তরুণ ছাত্রনেতা। এখন বয়স ঠেকেছে প্রায় ৬৬তে। বাবুলের জমি উপহার পেয়ে ভীষণ খুশি হয়েছিলেন মোহাম্মদ আলী। সে কারণেই হতো আমেরিকা তাড়িয়ে দিলে মোহাম্মদ আলী বাংলাদেশে এসে থাকার জোর বাসনা ব্যক্ত করেছিলেন।

মোহাম্মদ আলী জানিয়েছিলেন, প্রতিবছর দু’মাস এখানে থাকবেন। সম্ভাবনাময়ী বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। আজ শনিবার (বাংলাদেশ সময়) তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন। তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন সেই সময়কার ছাত্রনেতা, বর্তমানে ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক আক্তার নেওয়াজ খান বাবুল। তার স্মৃতির চুম্বক অংশগুলো:

বক্সার মোহাম্মদ আলীর সম্মানে সেইসময় কক্সবাজার পৌর করপোরেশনের নৈশভোজ সভায় মোহাম্মদ আলীর পাশে (বামে) তৎকালীন ছাত্রনেতা আক্তার নেওয়াজ খান বাবুল, বিমান বন্দরে অভ্যর্থনা দিচ্ছেন তিনি (ডানে)

মোহাম্মদ আলীকে পেয়ে কক্সবাজারবাসীর অনুভূতি কী ছিল?
আক্তার নেওয়াজ খান বাবুল : কিংবদন্তী বক্সারকে পেয়ে এখানকার মানুষ দারুণ রোমাঞ্চিত ছিলেন। খোলা জিপে করে শহর ঘুরেছেন তিনি। এখানকার মানুষের ভালোবাসা পেয়ে তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন।

মোহাম্মদ আলীকে উপহার দেয়া কমিটির বর্তমান অবস্থা কী?
আক্তার নেওয়াজ খান বাবুল : কমিটির প্রধান আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে আমরা মোহাম্মদ আলীকে সংবর্ধনা দিয়েছিলাম। এটা সম্পর্কে এখন কিছু বলতে পারছি না। কমিটি আছে কি না, তা-ও জানি না।

শুনেছি আপনি নাকি তাকে জমি দিয়েছেন?
আক্তার নেওয়াজ খান বাবুল : হ্যাঁ, আমি তাকে জমি দিয়েছি। এ কথা সত্য। আমার জমি পেয়ে তিনি খুব খুশি হয়েছিলেন।

কীভাবে তাকে জমি হস্তান্তর করেছিলেন?
আক্তার নেওয়াজ খান বাবুল : তিনি কক্সবাজার পৌঁছলে বিমানের সিঁড়িতে থাকাবস্থাতেই আমি তার পকেটে দলিলটি গুঁজে দিয়েছিলাম। সেখানে জমির কথা উল্লেখ করেছিলাম।

আপনার কাগজ পেয়ে তার প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
আক্তার নেওয়াজ খান বাবুল : কক্সবাজার পৌর করপোরেশনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমার দেয়া কাগজটি তিনি জনতাকে পড়ে শুনিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমি প্রতি বছর দু’মাস এখানে এসে থাকব। এদেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করব।

বাংলাদেশ সম্পর্কে কী বলেছিলেন সেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে?
আক্তার নেওয়াজ খান বাবুল : বাংলাদেশ একটি ব্যাপক সম্ভাবনাময় দেশ। এ দেশের মানুষ খুবই অতিথিপরায়ণ। এখানকার পর্যটন শিল্প নিয়ে আমি কাজ করতে চাই। আমেরিকায় ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আমি আলোচনা করব।  

মোহাম্মদ আলীকে উপহার দেয়া জমি এখন কি অবস্থায় আছে?
আক্তার নেওয়াজ খান বাবুল : ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে সেই জমির অর্ধেকটা সাগরে ভেঙে গেছে। বাকি অংশ এখনো টিকে আছে।

ওই জমি এখন কি করবেন?
আক্তার নেওয়াজ খান বাবুল : বেশ কয়েকবার সেখানে তার স্মৃতি রক্ষার্থে আমি কাজ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতায় সেটা হয়ে ওঠেনি। তাই সামনে কী হবে, তা বলতে পারছি না।

এরপর তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়েছে ?
আক্তার নেওয়াজ খান বাবুল :  হয়নি। তবে আমি একটি ঈদ কার্ড পাঠিয়েছিলাম তাকে। সম্ভবত আশির দশকে।

ঈদ কার্ডে আপনি কী লিখেছিলেন?
আক্তার নেওয়াজ খান বাবুল : বাংলাদেশের মানচিত্র, মোহাম্মদ আলীর মুখাবয়ব, তার ট্রফি নিয়ে আমার ব্যক্তিগতভাবে তৈরি করা কার্ড। যুক্তরাষ্ট্রে আমার যাওয়া হয়নি, তাই সরাসরি তার সঙ্গে আর কথা হয়নি।

তার প্রয়াণের খবর কখন জানলেন?
আক্তার নেওয়াজ খান বাবুল : ঘুম থেকে উঠেই বাংলামেইলের মাধ্যমেই তার মৃত্যুর খবর শুনলাম। খুবই খারাপ লাগছে। গ্রেট খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। তাকে মিস করবে বিশ্ব। তার বিদেহী আত্মা শান্তিতে থাক, এ জন্য দোয়া করছি। বাংলামেইল
৫ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে