সোমবার, ০৬ জুন, ২০১৬, ০২:০৫:৪৭

‘এই রক্তনদী আর কতদূর বইবে?’

‘এই রক্তনদী আর কতদূর বইবে?’

নিউজ ডেস্ক : বিএনপি চেয়াপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশে শুরু হয়েছে সিরিয়াল কিলিং। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়-দেশে যেন প্রতিমুহূর্তে গোরস্থানের পরিসরই বিস্তৃত হচ্ছে। দেশবাসী যেন এক নিরাপত্তাহীন অন্ধকার গুহায় বসবাস করছে।

রবিবার পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী মাহমুদা খানম এবং নাটোরে খ্রিষ্টান ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজকে হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ এবং তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

চট্টগ্রামের ব্যস্ততম এলাকা জিইসির মোড়ে প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী মাহমুদা খাতুনকে এবং নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনগ্রামে মা মারিয়া গির্জার পশ্চিম পার্শ্বে খ্রিষ্টান মুদি দোকানদার সুনীল দানিয়েল গোমেজকে প্রায় একই কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন ‘দেশে শুরু হয়েছে সিরিয়াল কিলিং। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়-দেশে যেন প্রতিমূহুর্তে গোরস্থানের পরিসরই বিস্তৃত হচ্ছে। দেশবাসী যেন এক নিরাপত্তাহীন অন্ধকার গুহায় বসবাস করছে। চারিদিকে ভয়, শঙ্কা আর আতঙ্ক নিয়েই দেশের মানুষ এখন অনিশ্চিত জীবনযাপন করছে।’

তিনি বলেন, ভ্রুক্ষেপহীন সরকার বন্য প্রতিহিংসার আক্রোশে জঙ্গিদের তৎপরতা দমন করার পরিবর্তে বিরোধী দলের ওপর দায় চাপিয়েই দায়িত্বের সমাপ্তি ঘটালেও নিজেরা নিষ্কলঙ্ক হতে পারছে না। তাই প্রকৃত দুস্কৃতিকারীদের অনুসন্ধান করে গ্রেপ্তার করার পরিবর্তে বিভ্রান্তমূলক কথাবার্তা ছড়াচ্ছে। কিন্তু দেশের মানুষ এবং বিশ্ববাসী তাদের উচ্চনাদী অপপ্রচার বিশ্বাস করে না। আর এই সুযোগে জঙ্গির আরো বেশি শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।’

তিনি বলেন, জঙ্গিরা প্রকাশ্য দিবালোকে নির্ভয়ে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করছে, অথচ ক্ষমতাবিলাসী সরকার নিশ্চিন্তে এগুলোকে আমলেই নিচ্ছে না। বিদেশি নাগরিক হত্যা থেকে শুরু করে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজন ও তাদের ধর্মগুরু, মসজিদের ঈমাম, শিয়া মুসলমান, পীর ও পীরের শিষ্য কেউই ঘাতকদের প্রকাশ্য অস্ত্রের আঘাত থেকে রেহাই পায়নি। জনপদের পর জনপদে এখন শোকের মাতম উঠেছে। এই রক্তনদী আর কতদুর বইবে তা কেউ জানে না।’

সরকার হানাহানির পথ বেছে নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ক্ষমতা বজায় রাখতে গিয়ে সরকার নিজেই রক্তাক্ত হানাহানির পথ বেছে নিয়েছে। যার নগ্ন বহি:প্রকাশ আমরা দেখেছি সম্প্রতি অনুষ্ঠ্যেয় স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে।’

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার রাজনৈতিক অন্ধকারে পা রেখেছে। দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রশাসন সকলকে তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যে অস্ত্র দিয়ে বারবার হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর এক নির্বিকার উদাসীনতা প্রদর্শন করছে সরকার। আসলে এই বর্বরোচিত ঘটনাগুলোর রহস্য কী এবং এ নিয়ে সরকার-জঙ্গীরা কে কী বার্তা দিতে চাচ্ছে-তা নিয়ে জনগণের মধ্যে এক বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের পুলিশ সুপারের স্ত্রী এবং নাটোরের খ্রিষ্টান পল্লীতে মুদি দোকানীকে হত্যা বর্বর, কাপুরোষোচিত ও অমানবিক পশুপ্রবৃত্তির সামিল। মানবতাবোধশূন্য এই অন্ধ হিংস্রতা মানুষের বিবেককে দারুনভাবে নাড়া দিয়েছে। দেশে একদলীয় দুঃশাসনের নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার একটি হচ্ছে এই জঙ্গি তৎপরতা।’

সরকার ও জঙ্গিদের আচরণে কোনো পার্থক্য নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভোটারবিহীন সরকারের রাজনৈতিক আচরণ এবং জঙ্গিদের আচরণের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এই দুই পক্ষই বিরোধী চিন্তা ও মত সহ্য করে না। গণতন্ত্রের সারাৎসার মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার এরা নৃশংস কায়দায় থেঁতলে দিতে কুণ্ঠিত হয় না। অমানবিক বর্বরতাই এদের দিন রাতের কর্মসূচি। সুতরাং মানুষের অধিকারহীন এই দেশ যেন এখন মৃত্যুনগরীতে পরিণত হয়েছে। মানুষকে প্রতিনিয়ত জীবনাশঙ্কায়র ভয়াল পরিবেশে বসবাস করতে হচ্ছে। এই পরিস্তিতি উত্তরণে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতে না পারলে জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।’

বিএনপি চেয়ারপারসন অবিলম্বে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী মাহমুদা খাতুন এবং খ্রিষ্টান মুদি দোকানদার সুনীল দানিয়েল গোমেজকে হত্যাকারী দৃর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান। বিবৃতিতে তিনি মাহমুদা খাতুন এর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত এবং সুনীল দ্যনিয়েল এর আত্মার শান্তি কামনা করে নিহতদের পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
০৬ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে