শুক্রবার, ১০ জুন, ২০১৬, ০৯:৩৯:০৯

আইএসের কথিত বাংলাদেশ প্রধান এখন দেশে! ‌দাবি কানাডীয় পত্রিকার

আইএসের কথিত বাংলাদেশ প্রধান এখন দেশে! ‌দাবি কানাডীয় পত্রিকার

নিউজ ডেস্ক : কানাডা থেকে বাংলাদেশে চলে গেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর কথিত ‘বাংলার খিলাফত দলের প্রধান’ আবু ইব্রাহিম আল হানিফ। তার আসল নাম তামিম চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক। বাংলাদেশে ফিরে তিনি আইসিল বা আইএস সম্পর্কিত আঞ্চলিক নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। এ খবর দিয়েছে কানাডার পত্রিকা দ্য ন্যাশনাল পোস্ট।

‘হি ইজ ফ্রম উইন্ডসর’: কানাডিয়ান আইডেনটিফায়েড অ্যাজ লিডার অব আইসিল অ্যাফিলিয়েট ইন বাংলাদেশ- শীর্ষক প্রতিবেদনে ৭ই জুন এ কথা বলা হয়। লেবাননের ডেইলি স্টার পত্রিকাকে উদ্ধৃত করে ওই খবরে বলা হয়, তামিম চৌধুরীই এখন নতুন নাম ধারণ করেছেন শায়ক আবু ইব্রাহিম আল হানিফ।

কানাডার ডালহৌসি ইউনিভার্সিটির রিসাইলেন্স রিসার্চ সেন্টারের পোস্ট ডক্টরাল ফেলো প্রফেসর অমরনাথ অমরাসিঙ্গাম ন্যাশনাল পোস্টকে বলেছেন, এক সময় কানাডার অন্টারিওতে উইন্ডসরে ছিলেন তামিম চৌধুরী। তবে তাকে যারা চিনতেন তারা জানেন সে ছিল খুবই শান্ত প্রকৃতির। এর বাইরে তার সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।

প্রফেসর অমরাসিঙ্গে বিদেশি যোদ্ধাদের ওপর গবেষণা করছেন। তিনি বলেছেন যে, তিনি শুনেছেন কানাডা পুলিশ হয়রানি করছে এ অভিযোগে তামিম চৌধুরী বাংলাদেশে চলে গেছেন। সেখানে তিনি আইসিল (আইএস)-এর আঞ্চলিক নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। স্টিওয়ার্ট বেল-এর লেখা ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কয়েকটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডও তুলে ধরা হয়।

বলা হয়, মঙ্গলবার বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে ৬৮ বছর বয়সী একজন পুরোহিতকে হত্যা করা হয়েছে। এর দায় স্বীকার করেছে আইসিলের (আইএস) স্থানীয় শাখা। এরাই দেশকে অশ্লীলতা (ফিলথ) মুক্ত করার প্রত্যয় ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটছে তার সর্বশেষ শিকার ছিল এটা। এর অনেকগুলোর জন্য দায়ী আইসিলের (আইএস) আঞ্চলিক নেতারা। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন কানাডার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় অন্টারিওর বাসিন্দা তামিম চৌধুরী।

ওই রিপোর্টে বলা হয়, তামিম চৌধুরী এখন নতুন নাম ধারণ করেছেন। নতুন নাম হলো শায়ক আবু ইব্রাহিম আল হানিফ। আইসিলের প্রচারণামূলক ম্যাগাজিন ‘দাবিক’-এর সর্বশেষ সংস্করণে তাকে বাংলাদেশ শাখার ‘আমির’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এপ্রিলে প্রকাশিত ওই ম্যাগাজিনে আল হানিফ তার হিংসা উগড়ে দেন। যারা তার মতো ইসলামের পথে না আসবে তাদেরকে হত্যার হুমকি দেন।

ন্যাশনাল পোস্ট লিখেছে, বাংলাদেশে আইসিল (আইএস) শাখা গত ১৮ মাসে কমপক্ষে দুই ডজন মানুষকে হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটি ইংরেজি পত্রিকাকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। তথাকথিত আইএসের টার্গেটে রয়েছে বিভিন্ন রকম মানুষ। তারা হলেন হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ও বিহারি নেতারা। রয়েছেন শিয়া মতাবলম্বীরা, ধর্মীয় নেতা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, ধর্মান্তরিত মানুষ, বিদেশি।

‘দাবিক’-এ দেয়া সাক্ষাৎকারে আল হানিফ বলেছেন, ভূরাজনৈতিক অবস্থানের কারণে এ অঞ্চলে খিলাফত ও বিশ্বব্যাপী জিহাদের জন্য বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে তাদের রয়েছে শক্ত জিহাদি ঘাঁটি। তারা গেরিলা হামলা চালিয়ে যাবে।

মার্চে কানাডিয়ান সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের পরিচালক বলেছেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়ার জন্য প্রায় ১৮০ জন উগ্রপন্থি কানাডা ছেড়েছে। আরো ৬০ জন ফিরে এসেছে কানাডায়। কয়েক ডজনের কানাডা ছেড়ে যাওয়া ঠেকিয়েছে পুলিশ। জননিরাপত্তাবিষয়ক কানাডার মন্ত্রী রাফ গুডেল এ সপ্তাহে একটি ব্লগে জাতীয় নিরাপত্তা এজেন্ডা নিয়ে লিখেছেন, যারা এরই মধ্যে কানাডা ছেড়েছে তাদের পাসপোর্টের মৌলিক তথ্যগুলো শিগগিরই সংগ্রহ করবে সরকার। তিনি বলেছেন, এক্ষেত্রে নিরাপত্তায় বড় ধরনের একটি ফাঁক রয়ে গেছে।

ন্যাশনাল পোস্ট আরো লিখেছে, এসব হামলার সর্বশেষ ভিকটিম আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলি। স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা গোপিনাথ কাঞ্জিলাল বলেন, ‘ঘটনার দিন সকালে বাসা ছেড়ে যান তিনি। যাওয়ার সময় বলেছিলেন যে, তিনি একটি হিন্দু বাড়িতে প্রার্থনা করতে যাচ্ছেন। পরে একটি ধানক্ষেতে প্রায় মস্তকবিহীন তার দেহ খুঁজে পান কৃষকরা।’ ওই হত্যাকাণ্ডের পর এ সপ্তাহে একজন খ্রিষ্টান দোকানি ও সন্ত্রাসবিরোধী শাখার এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে হত্যা করা হয়। আল কায়েদার স্থানীয় শাখা একিআইএস জানুয়ারির পর থেকে প্রায় ৪০টি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

বিশ্বজুড়ে জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট ইন্টিলিজেন্সের দেয়া তথ্যমতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে আইএস বলেছে, ‘খিলাফতের সৈন্যরা এক হিন্দু পুরোহিতকে জবাই করে হত্যা করার অপারেশন সমপন্ন করেছে। বাংলাদেশকে ধর্মত্যাগী ও বহুত্ববাদীদের কলুষতা থেকে মুক্ত করতে মুজাহিদীনদের তলোয়ার চলবে।’

বিদেশি যোদ্ধাদের নিয়ে গবেষণারত অধ্যাপক অমরসিঙ্গম বলেন, তিনি শুনেছেন তামিম চৌধুরী বাংলাদেশে ফিরে গেছে। যাওয়ার আগে কানাডিয়ান পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ করে যান তিনি। পরবর্তীতে আইএসের আঞ্চলিক শাখার নেতা হিসেবে আবির্ভাব ঘটে তার।

দাবিক ম্যাগাজিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আল-হানিফ বলেছিলেন, ‘কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানের দরুন খিলাফত ও বৈশ্বিক জিহাদের জন্য বেঙ্গল (বাংলাদেশ) খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল। বেঙ্গলে একটি শক্ত জিহাদ ঘাঁটি থাকলে ভারতের অভ্যন্তরে গেরিলা হামলা চালানো সম্ভব হবে।’

পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও মিয়ানমার সহ এ ‘অঞ্চলকে স্বাধীন’ করার ইচ্ছা এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটির।
জননিরাপত্তা মন্ত্রী রালফ গুডালে এ সপ্তাহে এক ব্লগ পোস্টে তার জাতীয় নিরাপত্তা এজেন্ডা সবিস্তারে বর্ণনা করেন। এ সময় তিনি বলেন, কানাডা থেকে অন্যত্র যাওয়া ব্যক্তিদের বেসিক পাসপোর্ট তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করবে তার সরকার।

তিনি বলেন, ‘এর ফলে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ঘাটতি পূরণ হবে।’ ক্ষমতাসীন লিবারেল সরকার ‘নো-ফ্লাই লিস্টে’র ব্যাপারে জোরদার সহযোগিতার ব্যবস্থা করেছে। এতে বিমান নিরাপত্তার ওপর মারাত্মক হুমকি তৈরি করতে পারেন বা বিদেশে সন্ত্রাসবাদে জড়িত হতে পারেন, এমন ব্যক্তিদের আকাশ ভ্রমণ করতে দেয়া হবে না। -এমজমিন
১০ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে