শনিবার, ১১ জুন, ২০১৬, ১২:৩৯:৪৬

জাকাতে ভাগ্য বদল ৫০০০ পরিবারের

জাকাতে ভাগ্য বদল ৫০০০ পরিবারের

জাকারিয়া পলাশ: জাকাতের অর্থে ভাগ্য বদলেছে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারের। দেশের ১৫টি জেলার ১৮টি উপজেলায় পরিচালিত জাকাতভিত্তিক প্রকল্পের অধীনে সুবিধাপ্রাপ্ত ওইসব পরিবার এখন স্বাবলম্বী। সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্ট (সিজেডএম) নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে এমনটি সম্ভব হয়েছে। সঠিক উপায়ে জাকাত আদায় ও বণ্টন হলে সামগ্রিক দারিদ্র্য বিমোচনে যে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসতে পারে, তারই একটি নজির সৃষ্টি করেছে সিজেডএম। সংস্থাটি বলছে, প্রতি বছর জাকাতের নামে লুঙ্গি-শাড়ি আর খুচরা টাকা বিতরণ করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা । এর মাধ্যমে মূলত দারিদ্র্যকে জিইয়ে রাখা হয়। গরিব মানুষকে একটা নির্ভরশীলতার দুষ্টচক্রে বন্দি করে রাখা হয়। এমনটা না করে কোনো দরিদ্র ব্যক্তিকে এককালীন যথেষ্ট অর্থ দিয়ে স্বাবলম্বী করে দিলে ধীরে ধীরে দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব।

গবেষকদের অভিমত, দেশের ধনী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে বছরে অন্তত ২৫ হাজার কোটি টাকা জাকাত সংগ্রহ করা সম্ভব। কিন্তু সকল প্রতিষ্ঠান জাকাত দিচ্ছে না। অনেকে দিলেও তা কার্যত সুফল বয়ে আনছে না। এই প্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সিজেডএম। সংস্থাটির কর্মকর্তা খন্দকার যাকারিয়া আহমেদ জানান, তিনটি উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত সিজেডএম। ১. জাকাত গরিবের অধিকার, এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি। ২. আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় নতুন নতুন আর্থিক প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে, যার জাকাতের হিসাব নিয়ে সংশয় আছে। যেমন, ইসলামী শরিয়তে ফসলের ওপর জাকাতের নিয়ম বলা আছে। কিন্তু, জমির জাকাতের ব্যাপারে কিছু বলা নেই। বর্তমানে রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলো জমির ওপর ব্যবসা করছে। ভবন তৈরির আগেই তা বিক্রি হচ্ছে। মুনাফা হচ্ছে। তাদের জাকাত কিভাবে নির্ধারিত হবে? অনেকে এলসি’র মাধ্যমে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করেন। তাদের পণ্য জাহাজে বা বন্দরে পড়ে থাকে বছরের পর বছর। তাদের পণ্যের জাকাত হিসাব কিভাবে হবে? এসব প্রশ্নের বিষয়ে বিজ্ঞান ও শরিয়তের সমন্বয়ে সমাধান দেয় সিজেডএম।

এই পরামর্শদানের কাজ সংস্থার ‘দাওয়াত’ প্রকল্পের অংশ। ৩. বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জাকাতের অর্থ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেয় সিজেডএম। সংস্থাটি ইতিমধ্যে তিন শতাধিক দেশীয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জাকাত ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে। শুরু হয়েছিল শীর্ষস্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এ কে খান ফাউন্ডেশনের জাকাত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান ২০১৪ সালে প্রকাশিত তার এক গবেষণায় বলেছেন, জাকাতভিত্তিক এই ব্যবস্থা ‘গরিবদের আর্থিক ক্ষমতায়নের এক নতুন মডেল’। তিনি চট্টগ্রামে পরিচালিত জীবিকা কর্ণফুলী প্রকল্পের ওপর ওই গবেষণা করেন। বর্তমানে সিজেডএম তার সাতটি জাকাতভিত্তিক প্রকল্প পরিচালনা করছে। এর মধ্যে জীবিকা প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন দরিদ্র ব্যক্তিকে পাঁচ বছর মেয়াদে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য জাকাতের অর্থ দেয়া হয়।

একটি গ্রামের ২০-৩০ জন জাকাত গ্রহীতাকে একসঙ্গে বড় অঙ্কের টাকা দেয়া হয়। জাকাত যেহেতু ঋণ নয়। তাই, ওই টাকা তাদের ফেরত দিতে হয় না। দিতে হয় না কোনো সুদ। সম্মিলিতভাবে ওই টাকা বিনিয়োগ করে তারা নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। কেউ ট্রাক্টর কিনে কৃষি কাজে ব্যবহার করছেন। নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এই প্রকল্পের রয়েছে আলাদা দৃষ্টি। অনেক নারীই কুটিরশিল্প উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন। সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে ওইসব বিনিয়োগের নিয়মিত তত্ত্বাবধান করা হচ্ছে। খন্দকার যাকারিয়া আহমেদ বলেন, ইসলামে জাকাতের অর্থ খরচের জন্য সুনির্দিষ্ট আটটি খাত রয়েছে। তার মধ্যে একটি খাত হচ্ছে জাকাতের অর্থ সংগ্রহ ও বিতরণের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা। সে হিসাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রদত্ত জাকাতের অর্থ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ১২% (আট ভাগের এক ভাগ) আমরা ব্যবস্থাপনার কাজে ব্যয় করি। ওই অর্থে আমাদের বিভিন্ন জেলায় রয়েছে তত্ত্বাবধায়ক। ঢাকার প্রধান কার্যালয়েও কর্মসংস্থান আছে মোট ২৫ জনের।

এই কর্মশক্তি বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে জাকাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বিনিয়োগ দেখাশোনা করে। জীবিকা প্রকল্পের পাশাপাশি রয়েছে আরো ছয়টি প্রকল্প। ‘জিনিয়াস’ প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থীকে দেয়া হচ্ছে দুই বছর মেয়াদি শিক্ষাবৃত্তি। প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে শিশু শিক্ষার জন্য রয়েছে ‘গুলবাগিচা’ নামে একটি প্রকল্প। এর অধীনে ৭৬টি শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। সেখানে শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক ও ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি সপ্তাহে তিনদিন খাবার সরবরাহ করা হয়। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন শিক্ষিকার অধীনে রয়েছে ৩০ জন করে শিশু। নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য ‘ফেরদৌসি’ প্রকল্পের অধীনে গড়ে তোলা হয়েছে ২৭টি স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র। জাকাতের অর্থে ‘নৈপুণ্য বিকাশ’ কর্মসূচির অধীনে করিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা হয়েছে ৭৭০ জন যুবক-যুবতীকে। এছাড়া অসুস্থ, দুস্থ ও ঋণগ্রস্তকে সহায়তার জন্য রয়েছে ‘ইনসানিয়াত’ প্রকল্প। সব মিলে বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে মোট সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ।-এমজমিন

১১ জুন, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে