শনিবার, ১১ জুন, ২০১৬, ০১:০৭:৪৩

এবার ফল পরিবর্তনেও রেকর্ড

এবার ফল পরিবর্তনেও রেকর্ড

নূর মোহাম্মদ: পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার, জিপিএ-৫ এর পর এবার রেকর্ড হয়েছে ফল পরিবর্তনে। সদ্য প্রকাশিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলে অসন্তোষ হয়ে চ্যালেঞ্জ করে প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। তারা ১ লাখ ৭২ হাজার উত্তরপত্র চ্যালেঞ্জ করে। যা গত কয়েক বছরের মধ্যে রেকর্ড। বুধবার সাধারণ ৮টি, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ করা হয়। বোর্ডগুলো ওয়েবসাইট থেকে  পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১০টি শিক্ষা বোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছে ১৮৫২ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে চ্যালেঞ্জ করে পাস করেছে ৭১১ জন। বাকি ১১৪১ জন বরিশাল বোর্ডের কারিগরি ত্রুটির জন্য ফেল করেছিল। এ বিষয়টিও এর সঙ্গে যোগ করা হয়েছে। এছাড়া,  বিভিন্ন গ্রেডে ফল পরিবর্তন হয়েছে আরো ৩ হাজার ৪৪১ জনের। এরমধ্যে ৮১১ জন নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে। অর্থাৎ পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করে ৪ হাজার ১৫২ জন তাদের ফল পরিবর্তন করেছে। যা পাবলিক পরীক্ষার ফল পরিবর্তনের রেকর্ড।

ফেল থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৯ জন। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে গণিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে আরো ১ হাজার ১১৫ শিক্ষার্থী। এছাড়া, জিপিএ-৫ পেয়েছে আরো ৮৩৬ জন। সব মিলিয়ে আনুষ্ঠানিক ফল প্রকাশের পর নতুন করে ফেল থেকে পাস করেছে ১৮৫২ জন শিক্ষার্থী। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২৭৫৭ জন। রেজাল্ট পরিবর্তনের কারণে কোনো শিক্ষার্থীকে কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে পুনরায় আবেদন করার দরকার নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. আশফাকুস সালেহীন। তিনি বলেন, যাদের রেজাল্ট পরিবর্তন হয়েছে তাদের প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী কলেজের ভর্তির মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে। তবে আগের রেজাল্টের কারণে কোনো শিক্ষার্থী যদি কোনো কলেজে আবেদন করতে না পারেন তিনি ইচ্ছে করলে নতুন রেজাল্ট দিয়ে নতুন করে আবেদন করতে পারবেন। কারণ বোর্ডের সার্ভারে তার প্রাপ্ত ফল যোগ হয়েছে।


বুধবার বোর্ডগুলো নিজেদের ওয়েবসাইটে এসএসসি ও সমমানের পুনঃনিরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, এ বছর পুনঃনিরীক্ষার ফেল থেকে পাস করেছে ৭১১ জন। এরমধ্যে ঢাকা বোর্ডের ২০৫ জন, দিনাজপুর বোর্ডের ৪৯ জন, সিলেটে ১৯ জন, কুমিল্লায় ১৩২ জন, যশোরে ৫৩ জন, চট্টগ্রামে ১৯ জন, বরিশালে ৫৩ জন, রাজশাহীতে ৭৪ জন এবং মাদরাসা বোর্ডে ১৮৫ জন শিক্ষার্থী আগের ফলে অকৃতকার্য হলেও পুনঃনিরীক্ষায় পাস করেছেন। ফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এবার ১০টি বোর্ডে মোট ৮১১ জন শিক্ষার্থী নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা বোর্ডে ১৯৯ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডে ২৬ জন, সিলেটে ৬৯ জন, কুমিল্লায় ২৯ জন, রাজশাহীতে ১৭০ জন, যশোরে ১১২ জন, বরিশালে ৫৩ জন, দিনাজপুরে ১০৪ জন, মাদরাসা বোর্ডে ৪৬ জন এবং কারিগরি বোর্ডের ৩ জন শিক্ষার্থী নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।


ফল পুনঃনিরীক্ষণে ১০ বোর্ডের তিন হাজার ৪৪১ শিক্ষার্থীর মোট জিপিএ বেড়েছে। এরমধ্যে ঢাকা বোর্ডে ১ হাজার ২৮১ জন, দিনাজপুর বোর্ডে ২১৫ জন, সিলেটে ১৫১ জন, কুমিল্লায় ৩৫৯ জন, যশোরে ২৭৯ জন, চট্টগ্রামে ২৪৩ জন, বরিশাল বোর্ডে ১৬৩ জন, রাজশাহী বোর্ডে ৩৭৩ জন, মাদরাসা বোর্ডে ২৯৪ এবং কারিগরি বোর্ডের ৮৩ জন শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। প্রতিটি পত্রের জন্য ১২৫ টাকা ফি দিয়ে ফল পুনঃনিরীক্ষণে এসএমএসে আবেদন করেছিলেন শিক্ষার্থীরা।
বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, পুনঃনিরীক্ষণে সাধারণত মোট ৪টি দিক দেখা হয়। এগুলো হলো উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেয়া হয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে উঠানো হয়েছে কিনা, এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটে বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কিনা। এসব বিষয় পরীক্ষা করেই পুনঃনিরীক্ষার ফল দেয়া হয়েছে বলে  বোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তার মানে কোনো শিক্ষার্থীর খাতা পুনরায় মূল্যায়ন হয় না। এতেই এত শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে।

এটি রীতিমত তুঘলকি কাণ্ড আখ্যায়িত করে শিক্ষাবিদরা বলছেন, বোর্ডের প্রশ্ন পদ্ধতি ও খাতা দেখার নানা ত্রুটির কারণে দিন দিন ফল চ্যালেঞ্জ করার সংখ্যা বাড়ছে। এতে প্রতি বছর জনগণের টাকা গচ্চা যাচ্ছে। তারা বলেন, এবার বরিশাল বোর্ডে যা হয়েছে তা রীতিমতো তুঘলকি কাণ্ড। একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর বোর্ড কর্তৃপক্ষের ঘুম ভেঙেছে। পরবর্তীতে ফল যাচাই করে এই বোর্ডে হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে ফেল থেকে পাস করেছে ১ হাজার ১৪১ জন। ফেল থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৯ জন। পরে বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রধান দুই পরীক্ষকের ভুলের কারণে হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে ‘খ’ ও ‘গ’ সেটের নৈমিত্তিক উত্তরপত্রের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। একই অবস্থা ছিল চট্টগ্রাম বোর্ডেও। গণিতের ফল নিয়ে শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট না হয়ে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভের মুখে ১৯শে মে নতুন করে ফল প্রকাশ করে এ বোর্ড। এতে গণিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে আরো ১ হাজার ১১৫ শিক্ষার্থী।

এছাড়া, জিপিএ-৫ পেয়েছে আরো ৮৩৬ জন। বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, আদালতের নির্দেশনা ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তারা গণিত বিষয়ের সংশ্লিষ্ট উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণ করা হয়। পুনঃনিরীক্ষণে বোর্ডে টেকনিক্যাল ভুল ছিল। অভিভাবকরা জানান, প্রতিবছর লাখের ওপর শিক্ষার্থী ফল চ্যালেঞ্জ করে তাদের ফল পরিবর্তন করছে। এতেই প্রমাণ হয়, বোর্ড ও পরীক্ষকদের ভুল আছে। এ জন্য আমার সন্তান কাঙ্ক্ষিত ফল না পেলে চ্যালেঞ্জ করতে বাধ্য  হয়। বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পরীক্ষা ও ফল নিয়ে এমন গাফিলতি থাকার কারণে গত কয়েকবছর ধরে ফল চ্যালেঞ্জের ঘটনা বাড়ছে। রেকর্ডে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় মাত্র ৪৩ হাজার শিক্ষার্থী ফল চ্যালেঞ্জ করেছিল। গতবছর তা একলাফে তিন গুণ বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ২৯ হাজার ৩০১ জনে। আর এ বছর ফল চ্যালেঞ্জ করেছে ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৫৮টি। সর্বমোট ৩ লাখ ৫৫ হাজার ১২৬টি পেপারের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করেছে। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে এবার মোট ফল চ্যালেঞ্জ করেছে সাড়ে ১০ শতাংশ। গত বছর মোট চ্যালেঞ্জকারী ছিল মাত্র পৌনে ৯ শতাংশ। সেই হিসাবে গতবছরের চেয়ে এবার ফল চ্যালেঞ্জকারী বেড়েছে পৌনে ২ শতাংশ। মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় এবার ৮৮ দশমিক ২৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন, যাদের মধ্যে জিপিএ-৫  পেয়েছেন এক লাখ ৯ হাজার ৭৬১ জন।-এমজমিন

১১ জুন, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে