রবিবার, ১২ জুন, ২০১৬, ০২:১৪:৪৯

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নিয়ে রিটকারীদের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলার আর্জি

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নিয়ে রিটকারীদের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলার আর্জি

নিউজ ডেস্ক : ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিটকারীদের বিরুদ্ধে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের’ মামলা করতে ঢাকার আদালতে আর্জি করেছেন মুফতি মাসুম বিল্লাহ (৪৭)।

রিটকারীরা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, একাত্তরের সেক্টর কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল চিত্তরঞ্জন দত্ত, রাজনৈতিক-কলামনিস্ট বদরুদ্দীন উমর, অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর এবং তাদের আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী।

রোববার ঢাকার মহানগর হাকিম আব্দুল্লাহ আল মাসুদের আদালতে তিনি ওই মামলার আর্জি তুলে ধরেন। মুফতি মাসুম বিল্লাহ ঢাকার কদমতলীর দক্ষিণ দনিয়ার বাসিন্দা।

আবেদন শুনে বিচারক বিষয়টি আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন বলে জানিয়েছেন মুফতি মাসুম বিল্লাহর আইনজীবী পি কে আব্দুর রব।

মাসুম বিল্লাহর আর্জিতে বলা হয়েছে, “রিট আবেদনকারীরা একটি ধর্মহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং বুঝে শুনে ইসলাম ধর্মের সমুন্নতাকে খর্ব করার অসৎ উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে।

“এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য তারা হাই কোর্টে রিট আবেদন করে সম্পূরক রুল জারি করিয়ে বাংলাদেশের ১৪ কোটি মুসলমানসহ বিশ্বের ১০০ কোটি মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে।”

ধর্মহীন রাষ্ট্রকে ‘বৃহৎ গণিকালয়’ আখ্যায়িত করে আবেদনকারী তার আর্জিতে লিখেছেন, “ধর্মের ধ্বজাধারী একদল অধার্মিক তাদের খেয়াল-খুশি বাস্তবায়নের জন্য অধর্মের লীলাভূমি অনুসন্ধান করে।”

মাসুম বিল্লাহ তার আর্জিতে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদেরও সমালোচনা করেছেন। তিনি সেখানে বলেছেন, “বাংলাদেশে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ গঠিত হয়েছে। তারা তাদের ধর্মীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য সচেষ্ট। যদিও এদের মধ্যে কোনো ধর্মীয় ঐক্য নেই; সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মের বিরোধিতা করা তাদের একমাত্র কাজ।”

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখার পক্ষে রায় না এলে দেশ অচল করার হুমকি দিয়েছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। আর ওই রিট আবেদনকে ‘দেশকে ধর্মহীন রাষ্ট্রে পরিণত করার চক্রান্ত’ আখ্যায়িত করে জামায়াতে ইসলামী সারাদেশে হরতালও করে।

সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনকালে ১৯৮৮ সালের ৫ জুন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী অনুমোদন হয়। সেখানে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে’।

ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে ১৯৭১ সালে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে এই পরিবর্তনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তখনই ‘স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির’ পক্ষে ১৫ বিশিষ্ট নাগরিক হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করেন।

তাদের যুক্তি ছিল, বাংলাদেশে নানা ধর্মবিশ্বাসের মানুষ বাস করে। এটি সংবিধানের মূল স্তম্ভে বলা হয়েছে। এখানে রাষ্ট্রধর্ম করে অন্যান্য ধর্মকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটি বাংলাদেশের অভিন্ন জাতীয় চরিত্রের প্রতি ধ্বংসাত্মক।

২৮ বছর আগে করা ওই রিট আবেদন গত মার্চে খারিজ করে দেয় হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ।  রায়ে বলা হয়, কোনো ‘কমিটির’ রিট আবেদন করার ‘এখতিয়ার নেই’ বলে  সেটি খারিজ করা হল।

সেই ১৫ আবেদনকারীর মধ্যে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আনিসুজ্জামান, সি আর দত্ত, বদরুদ্দীন উমর ও বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ছাড়া সবাই মারা গেছেন। আর সুব্রত চৌধুরী হাই কোর্টে ওই রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন।
১২ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে