মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০১৬, ০৩:১৪:৪৭

‘দিনক্ষণ এখন বলতে পারব না, তবে অসুস্থ হলেই নেওয়া হবে’

‘দিনক্ষণ এখন বলতে পারব না, তবে অসুস্থ হলেই নেওয়া হবে’

রোজিনা ইসলাম:  নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার প্রধান আসামি তারেক সাঈদ বিধিবহির্ভূতভাবে হাসপাতালে রয়েছেন। চিকিৎসার প্রয়োজন না থাকলেও তাঁকে হাসপাতালের কেবিনে রাখা হয়েছে। সেখানে স্ত্রীসহ স্বজনেরা অবাধে যাতায়াত করছেন। এ অবস্থায় হাসপাতাল থেকে তাঁর পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনের এমন চিঠি পাওয়ার পর তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। তারেক সাঈদ সরকারের একজন মন্ত্রীর জামাতা। তাঁকে এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেলে পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। কবে তাঁকে আবার বিএসএমএমইউতে নেওয়া হবে জানতে চাইলে কারা উপমহাপরিদর্শক গোলাম হায়দার বলেন, ‘দিনক্ষণ এখন বলতে পারব না। তবে অসুস্থ হলেই নেওয়া হবে।’ তিনি কেন ঢাকা মেডিকেলে ছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অসুস্থ ছিলেন, তাই আমরা পাঠিয়েছিলাম।’


স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক (এসআই) তারেক সাঈদের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, শ্রেণিপ্রাপ্ত এই হাজতি ঢাকা মেডিকেলের পুরোনো ভবনের তৃতীয় তলায় ৪৩ নম্বর কেবিনে থাকা অবস্থায় সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত তিনি তাঁকে পাহারা দিতেন। একদিন রাত সাড়ে সাতটায় আসামির স্ত্রী পরিচয় দিয়ে রিফাত চৌধুরী একটি টিফিন বাটি ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র নিয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ওই আসামির সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া দেখা করা যাবে না জানালে রিফাত চৌধুরী ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং তাঁর চাকরি শেষ করে দেবেন বলে হুমকি দেন।


এসআইয়ের জিডির পর শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক ঘটনা তদন্ত করতে ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে গোপনে ও প্রকাশ্যে আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তদন্তে তিনি জিডির অভিযোগের সত্যতা পান বলে জানিয়েছেন। ওসি আবু বকর গতকাল তাঁর দপ্তরে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন দিয়েছি। এ ছাড়া কর্তৃপক্ষকে তারেক সাঈদের পলাতক হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলেছি।’ তিনি বলেন, পুলিশ প্রতিবেদন অনুযায়ী আসামির কোনো ধরনের চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। তবে কারা কর্তৃপক্ষ তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে পাঠানোর বিষয়ে চিঠি দিয়েছে। র‌্যাবের এই সাবেক কর্মকর্তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল এ বছরের ৩ জানুয়ারি।  

হাসপাতালে তারেক সাঈদকে দেখাশোনা করছেন তাঁরই এক ভাই। তিনি নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক। কেবিন ব্লকে নার্সরা যে কক্ষে থাকেন, সেখানে কোন কেবিন কার তত্ত্বাবধানে রোগী আছে, তার একটি তালিকা টাঙানো আছে। তবে তারেক যে ৪৩ নম্বর কেবিনে, সেই কেবিনের কোনো তথ্য ছিল না। তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র উপপরিচালক খাজা আবদুল গফুর বলেছিলেন, ‘যেসব রোগী গুরুতর অসুস্থ, তাঁদের আমরা কেবিনে রাখি না।’
হাসপাতাল সূত্র জানায়, বুকে ব্যথার অভিযোগ নিয়ে গত জানুয়ারিতে তারেক সাঈদ ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হন। কিন্তু ভর্তি হওয়ার পর তিনি বলেন, তাঁর পিঠে ব্যথা। এরপর তাঁকে ওই হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়।


ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাধ্যক্ষ নেসার আলম বলেন, ১০-১৫ দিন আগে তারেক সাঈদকে ঢাকা মেডিকেল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এখন তিনি কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ৩০ এপ্রিল ছয়জনের ও ১ মে অপর একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। তদন্তে এই হত্যার সঙ্গে র্যা ব-১১-এর তৎকালীন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ ও আরও কয়েকজন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি উঠে আসে। ওই ঘটনার পর তিনি গ্রেপ্তার হন এবং সেনাবাহিনী থেকে চাকরি চলে যায়। এই মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি তারেক সাঈদ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা।-প্রথম আলো

১৪ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে