মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০১৬, ১২:৫৩:২২

সরকার নয় জনগণের পাশে থাকবে ভারত : বিএনপির প্রত্যাশা

সরকার নয় জনগণের পাশে থাকবে ভারত : বিএনপির প্রত্যাশা

নিউজ ডেস্ক : ভারতবর্ষ বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের সঙ্গে থাকবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে বিএনপি। জঙ্গি দমনে সরকারের সাঁড়াশি অভিযানের পক্ষে ভারতের সমর্থন দেয়ার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে- আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অত্যন্ত সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন যে, বাংলাদেশের সরকার সঠিক কাজটি করছে, তারা জঙ্গি দমনে সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ভারত আমাদের শুধু প্রতিবেশী নয়, অকৃত্রিম বন্ধু। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। স্বাভাবিকভাবে এদেশের জনগণের প্রত্যাশা সকল গণতান্ত্রিক দেশ যারা গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই-সংগ্রাম করছে তাদের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করবে। আমরা সব সময় প্রত্যাশা করবো, ভারতবর্ষ বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের সঙ্গেই থাকবে। তারা এমন কোন শক্তি বা সরকারকে প্রশ্রয় দেবে না, সহযোগিতা করবে না, যারা জনগণের ওপর জোর করে চেপে বসে রয়েছে।

দেশব্যাপী গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় তিনি এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।  বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত এক সপ্তাহের অভিযানে ১৩ থেকে ১৪ হাজার মানুষ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে জঙ্গি ১৯২ জন। তাহলে প্রশ্ন জাগে বাকিরা কারা? এতে প্রতীয়মান হয়, জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে ফেরাতে এই অভিযান চালানো হচ্ছে। আর আসল অপরাধীদের চিহ্নিত না করে গুপ্তহত্যার দায় সরকার বিরোধী দলের ওপর চাপাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে জঙ্গি দমনের নামে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে।

তিনি বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে সরকার কোনোমতেই টিকে থাকতে পারবে না। সেজন্য তারা জঙ্গিবাদের নাম করে, গুপ্তহত্যার নাম করে, আসল অপরাধীদের খুঁজে বের না করে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ওপর চড়াও হয়েছে। মির্জা আলমগীর বলেন, বাংলাদেশ এখন আর বাংলাদেশ নেই। বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্র নেই। বাংলাদেশ এখন ফ্যাসিবাদী সরকারের নিয়ন্ত্রণে। তাই এখন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানেও বাধা দেয়া হচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, জনবিচ্ছিন্ন এই সরকারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিকল্প নেই। সন্ত্রাস দিয়ে আন্দোলনে সফলতা আসে না। তাই দলের স্বার্থে নয়, দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষা করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই চলমান দুঃশাসনের পতন ঘটাতে হবে।

মির্জা আলমগীর বলেন, কর্মদিবসের ৫ দিনের মধ্যে ৩-৪ দিন আমাদের কোর্টে যেতে হয়। এই রোজার দিনে আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মী কারাগারে বন্দি হয়ে আছেন। তাদের মুক্তির জন্য আমাদের আন্দোলন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। কারাগার ভাঙতে হবে। রাজবন্দি বন্ধুদের মুক্ত করতে হবে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিজয় অর্জন করতে হবে। বিএনপি মহাসচিব তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের নিজেদের মধ্যে বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে এবং কারাগারে থাকা নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি মতো স্বপ্নের বাসর ঘর বানাতে দেয়া হবে না বলে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, আগুন নিয়ে খেলা করবেন না। বিচারের আওতায় না এনে গুলি করে করে হত্যা করছেন। এই গুলি জনগণের টাকায় কেনা হয়। আর সেই গুলি করে হত্যা করবেন আবার বেশিদিন ক্ষমতায় থাকবেন তা হতে পারে না। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা উন্নয়নের নামে ৭ বছরে দেশকে সিঙ্গাপুর বানানোর পরিবর্তে আজিমপুর বানিয়েছে।

গয়েশ্বর রায় বলেন, বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র ভারত। বন্ধুত্বে ছোট ভাই, বড় ভাই নয়, থাকবে সমতা ও সমঅধিকার। সম্পর্ক হবে দেশের মানুষের সঙ্গে মানুষের, দেশের সঙ্গে দেশের। বিশেষ কোনো ব্যক্তির সঙ্গে নয়। অথচ ভারত বাংলাদেশের গণতন্ত্র হরণে আওয়ামী লীগকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। ভারত গণতন্ত্র হরণে কাউকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে এবার বাংলাদেশের মানুষকে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় পৃষ্ঠপোষকতা করবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কাছে তাদের আবদার আছে কিন্তু চাওয়ার অধিকার নেই। তবে ভারতের কাছে বাংলাদেশের চাওয়ার অধিকার আছে। ভারতের আবদার ট্রানজিট, করিডোর আর বাংলাদেশের চাওয়ার অধিকার তিস্তার ন্যায্য পানি।

দলের নেতাকর্মীদের রাজপথে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের দমন-পীড়নে আমাদের দলের অনেক নেতাকর্মী ঘরে থাকতে পারেন না। ঘরে থাকতে না পারলে আপনারা রাস্তায় নামুন। আসুন, আমরা সবাই একসাথে রাস্তায় নামি। জেলে যেতে হলে সবাই একসাথে জেলে যাবো। তবু এই অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেই যাবো। আমাদের মধ্যে এই ধরনের মানসিকতা তৈরি করতে হবে। বিএনপির নতুন কমিটিতে নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের উদ্দেশে গয়েশ্বর রায় বলেন, পদের পেছনে না ছুটে জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা যাতে পথে হাঁটতে পারি, সেই ধরনের মানসিকতা তৈরি করতে হবে। দল ও দেশের জন্য কাজ করতে হবে। সুতরাং পদের সন্ধান না করে পথের সন্ধানে নামুন। পদ নিয়ে কাড়াকাড়ি নয়, রাজপথে থাকার জন্য প্রতিযোগিতা করুন। তাহলে আন্দোলন সফল হবে।

প্রতিবাদ সভায় অন্যদের মধ্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সমাজকল্যাণ সম্পাদক আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী আবুল বাশার, মুন্সী বজলুল বাসিত আঞ্জু, ইউনুস মৃধা, জামিলুর রহমান নয়ন, মাওলানা আবদুল মালেক, আবদুল খালেক, লিটন মাহমুদ ও সুলতানা আহমেদ বক্তব্য দেন। -এমজমিন
২১ জুন ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে