ঢাকা : ৬৮টি কারাগারে বন্দি থাকা প্রায় ৫০০ জঙ্গির ওপর বিশেষ নজরদারি বাড়িয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটে দায়িত্ব পালন করছেন বাইরের কারারক্ষীরা।
সম্প্রতি চট্টগ্রামে বুলবুল নামে এক জঙ্গির দেয়া ভয়াবহ তথ্যে নজরধারী জোরদার করা হয়েছে। বুলবুলের ভাষ্য, কারাগারে জঙ্গিদের কাছে বাইরে থেকে চিঠিতে বার্তা যাচ্ছে। বন্দিরা সহযোগীদের নির্দেশনাও দিচ্ছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারাগারে সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে মিশে তাদের উগ্রবাদী করে তুলছে জঙ্গিরা। কারাগারকেন্দ্রিক নাশকতা চালানোর পরিকল্পনাও রয়েছে জঙ্গিদের।
এসব তথ্যের ভিত্তিতে গত ২২ জুন থেকে সারাদেশের কারাগারে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।
দর্শনার্থী তল্লাশির সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে অভ্যন্তরীণ নজরদারি। যেসব সেলে জঙ্গিদের রাখা হয়েছে সেসব সেলে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানোর প্রক্রিয়াও চলছে।
বন্দি জঙ্গিদের মা-বাবা, ভাই-বোন ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। পরিবারের সদস্যরা দেখা করতে আসলে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে নিশ্চিত হয়েই দেখা করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে।
তাদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা কী কথা বলে তাও নজরধারী করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার মো. শাখাওয়াত হোসেন জানান, কারাগারের ভেতরে-বাইরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রিজার্ভ ফোর্স সার্বক্ষণিক অবস্থান করছে। কারারক্ষীরা ছাড়াও চকবাজার পুলিশ সার্বক্ষণিক রাউন্ড দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, তল্লাশি ছাড়া অভ্যন্তরে কাউকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। সব মিলিয়ে নজরদারী কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। তবে গোয়েন্দা রিপোর্টের কারণে এবারের রেড অ্যালার্ট।
কারা সূত্র জানায়, দেশের ৬৮টি কারাগারে প্রায় ৭০ হাজার বন্দি রয়েছে। গত মে মাস পর্যন্ত দেশের কারাগারগুলোতে জঙ্গি বন্দি ছিল ৬৬৫ জন। পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তারকৃত ৩৭ জঙ্গিও যোগ হচ্ছে। বন্দিদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রয়েছে ১ হাজার ৪৮ জন, যার মধ্যে ২১ জন জঙ্গি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যে ২১ জন জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড হয়েছে তাদের মধ্যে ২০০৬ সালে হয়েছে ২ জনের। ২০০৮ সালে হয়েছে ৩ জনের, ২০১২ সালে ১ জন, ২০১৩ সালে দণ্ড পেয়েছে ১১ জন। ২০১৪ সালে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ৫ জন।
জানা গেছে, গত বছরের জুনে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজিবি) শীর্ষ নেতা মাওলানা মাঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন।
ওই সময় তিনি তার অনুসারী মাওলানা মাইনুল ইসলাম ওরফে মাহিম ওরফে নানা ওরফে বদিউলকে একটি চিঠি পাঠান। সেই চিঠি উদ্ধার করেছিল র্যাব।
সম্প্রতি চট্টগ্রামে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার পর বুলবুল নামে এক জেএমবি সদস্যের দেয়া জবানবন্দিতেও কারাগার থেকে চিঠির মাধ্যমে নির্দেশনা দেয়ার তথ্য মিলেছে। এসব কারণে দেশের কারাগারগুলো সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
২৬ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম