বুধবার, ২৯ জুন, ২০১৬, ১০:৩৯:৩৭

পুলিশ সুপার বাবুলের পদত্যাগ নিয়ে গুঞ্জন

পুলিশ সুপার বাবুলের পদত্যাগ নিয়ে গুঞ্জন

সারোয়ার সুমন: পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যা রহস্যের জট খুলছে না। ১৫ ঘণ্টা গোয়েন্দা হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছাড়া পেয়ে বাসায় ফেরার পর বাবুল মুখে কুলুপ এঁটে থাকায় নানা গুঞ্জন ডালপালা বিস্তার করছে। শুক্রবার মধ্যরাতে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর কী 'শর্তে' তিনি ছাড়া পেলেন, তা কেউ বলছেন না। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, মিন্টো রোডে ডিবির হেফাজতে বাবুলকে চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা বলা হয়। সন্দেহভাজন খুনিদের মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার কাছ থেকে 'পদত্যাগপত্র' নেওয়া হলেও পরে তা ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। মামলার তদন্তের কৌশল হিসেবে বাবুলকে চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়ার শর্ত, নাকি অনেক 'কঠিন সত্য' আড়াল করতে এ প্রস্তাব_ তা স্পষ্ট হচ্ছে না। এসব তথ্যের ব্যাপারে পুলিশের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে জিজ্ঞাসাবাদের পর থেকে বাবুলকে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আপাতত কোনো কথা বলতে বারণ করা হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে খুনিদের শনাক্ত করা হয়েছে। যারা হত্যা করেছে, তাদের অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের ধরার প্রক্রিয়া চলছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাওয়ার পর সব বলা যাবে। বাবুল আক্তার পুলিশের নজরদারিতে নেই। হত্যা রহস্য পুরোপুরি উদ্ঘাটনের জন্য আরো ধৈর্য ধরার কথা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

এর আগে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হয়েছিল, মামলার বাদী হিসেবে অনেক তথ্য যাচাই-বাছাই করতে বাবুলকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে ডেকে আনা হয়েছিল। মিতু হত্যার পর প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে এ ঘটনায় উগ্রপন্থিদের দিকে সন্দেহের আঙুল তোলা হয়। তবে এখন পুলিশই বলছে, এ হত্যায় উগ্রপন্থিরা জড়িত নয়। পারিবারিক বিরোধে হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে। পুলিশের কোনো কর্মকর্তা প্রকাশ্যে এ নিয়ে কথাও বলছেন না। তবে তারা দাবি করছেন, হত্যার সঙ্গে জড়িত সব আলামত তাদের কাছে রয়েছে। এমন এক 'সত্য' সেখানে আছে, যা তাদের কল্পনার অতীত ছিল।

স্বজনরা এখনও বিশ্বাস করছেন, বাবুলের পেশাগত দক্ষতায় ঈর্ষান্বিত হয়েই মামলা ঘিরে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। রেয়াজউদ্দিন বাজারে অভিযান চালিয়ে ২৫০টি অবৈধ স্বর্ণের বার উদ্ধারের ঘটনায় কোনো পক্ষ তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিল কি-না, তাও তদন্ত করার কথা বলছেন স্বজনরা।

চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, 'মিতু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা মেলেনি। তদন্তের স্বার্থে এখনই সবকিছু বলছি না।'

এরই মধ্যে এই মামলায় দু'জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও আরও দু'জনকে গ্রেফতার করা হলেও খুনের মোটিভ ও পরিকল্পনাকারী কে, তা জানা যায়নি। পুলিশের দাবি, গ্রেফতারকৃতরা সরাসরি হত্যা মিশনে অংশ নিয়েছে। তাহলে এখন কেন হত্যার মোটিভ ও পরিকল্পনাকারীর নাম জানা যাবে না। তাহলে দুটি বিষয় আড়ালের চেষ্টা চলছে। নাকি মিতু হত্যার নেপথ্যে এমন কিছু লুকিয়ে আছে, যা বের হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা 'বিব্রত' হবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, হত্যার কারণ সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে আরও ধৈর্য ধরতে হবে। তবে সেই ধৈর্য আর কতদিন? নাকি খুনিরা ধরা পড়লেও নির্দেশদাতা আড়ালেই থাকবে।

এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার মিতু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র মামলায় আরও দুই আসামিকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। এদের একজন এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা ও মনির হোসেন। ভোলা মিতু হত্যা মামলারও আসামি। আর হত্যার পর অস্ত্র রাখার দায়ে গ্রেফতার করা হয় মনিরকে। এ দু'জনকে পুলিশ সোমবার রাতে গ্রেফতার দেখালেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আগে থেকেই বলে আসছিলেন, মিতু হত্যাকাণ্ডে আরও কয়েকজন পুলিশের কব্জায় আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, 'পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ওয়াসিম ও আনোয়ারের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে ভোলা ও মনিরকে। অনেক আগেই এদের শনাক্ত করে রেখেছে পুলিশ।'

জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদের সময় বাবুল আক্তারকে বলা হয়, চাকরি না ছাড়লে মিতু হত্যাকাণ্ডে জেলে যেতে হবে তাকে। হত্যা মামলার আসামি হবেন তিনি। ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার পরিবার। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এমন কথা শুনে চাকরি ছাড়তে সম্মতিও দিয়ে এসেছেন বাবুল আক্তার। এমনও গুঞ্জন আছে, বাবুল আক্তার বিদেশে চলে যাচ্ছেন। আর চাকরিতে ফিরছেন না। পুলিশের কেউ কেউ বলছেন, এমন বাস্তবতায় বাবুল আক্তারের আর চাকরিতে না ফেরাটাই যুক্তিযুক্ত হবে। তাকে নিয়ে যে 'সন্দেহ ও অবিশ্বাস' তৈরি হচ্ছে, তাতে আবারও পুলিশ বাহিনীতে বাবুল যোগদান করলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

এলোমেলো তদন্ত :মিতু হত্যাকাণ্ডের শুরুতে জঙ্গি কিংবা বাবুল আক্তারের কার্যক্রমে সংক্ষুব্ধ কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এ হামলা চালাতে পারে বলে প্রচারণা চালান পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কিন্তু তদন্তের শুরুতে আবু নসর গুন্নুকে গ্রেফতার করে তাকেই ঘটনার অন্যতম হোতা দাবি করে পুলিশ। কয়েক দিন পর গ্রেফতার করে রবিন নামের আরও একজনকে। দু'জনকেই এ হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কিন্তু রিমান্ড শেষে কিছুই পায়নি পুলিশ। ফুয়াদ নামের আরেক জঙ্গিকে পৃথক আরেকটি হত্যা মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে মিতু হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার কাছ থেকেও রিমান্ড শেষে গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ। এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ওয়াসিম, আনোয়ারসহ অন্তত ছয়জনকে আটক করা হয়। কিন্তু দু'জনকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য গ্রেফতার দেখিয়ে বাকিদের তথ্য গোপন রাখা হয়। গতকাল আরও দু'জনকে গ্রেফতারের কথা স্বীকার করে পুলিশ। আসামি নিয়ে এভাবে লুকোচুরি করায় জনমনে স্বভাবতই নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।-সমকাল
২৯ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে