নিউজ ডেস্ক : নিজের পছন্দে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেছেন ব্যবসায়ী রিয়াজ খান। ভালবাসার মানুষের নামে জমি কিনে আলিশান বাড়িও করে দিয়েছেন। কিন্তু আজ তিনি নিঃস্ব। এখানেই শেষ নয়, কোটি টাকার বাড়ি হাতিয়ে নিয়ে উল্টো তার নামে যৌতুক মামলা ঠুকে দিয়েছে স্ত্রী। পরে আদালত থেকে জামিন নিয়ে রিয়াজ শ্বশুরবাড়িতে সালিশ বৈঠকে যায়। বৈঠকে কথাকাটাকাটির সূত্রধরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে পিটিয়ে আহত করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। এ ঘটনায় মামলা করায় রিয়াজের ওপর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে মামলার আসামিরা। এতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন হতভাগ্য স্বামী রিয়াজ খান। সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল নয়াপাড়া (ভাণ্ডারী পুল) এলাকার এ ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৬ সালের ১৩ই জুলাই বরিশাল সদরের সাহেবের হাট বদিউল্লা গ্রামের মৃত ইসহাক আলী খানের ছেলে রিয়াজ খান নিজের পছন্দে পারিবারিকভাবে সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল নয়াপাড়া এলাকার আমির হোসেনের মেয়ে আফরোজা জাহান শিলাকে বিয়ে করেন। সুখের সংসারে তাদের এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। তাদের বয়স সিয়াব আহম্মেদ রিপ্তর (৮) ও নুসরাত জাহান হাফসার (২)। রিয়াজ খান সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলের বার্মা ইস্টার্নে জ্বালানি তেলের ব্যবসায়ী।
তিনি পদ্মা অয়েল কোম্পানির ডিলার। তার প্রতিষ্ঠানের নাম সিহাব ট্রেডার্স। ২০১১ সালে রিয়াজ খান নিজের টাকায় গোদনাইল নয়াপাড়া মৌজায় স্ত্রী শিলার নামে ১৭ লাখ টাকায় সাড়ে ৪ শতাংশ জমি কিনে দেয়। পরবর্তীতে স্ত্রীর পীড়াপীড়িতে ওই জমিতে ৬ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩ ইউনিটের আলিশান একটি দোতলা বাড়ি নির্মাণ করেন। বাড়ি করতে গিয়ে ব্যবসার মূলধনও কমে আসে। তখন রিয়াজ স্ত্রীকে বলে বাড়িটি ব্যাংকে বন্ধক রেখে কিছু লোন নিয়ে বাড়ির অসমাপ্ত কাজ এবং ব্যবসাটা চাঙ্গা করি।
এতে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে স্ত্রী শিলা। মারমুখী শিলা রিয়াজকে পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, তুমি থাকো আর না থাকো, আমি বাড়ি ব্যাংকে বন্ধক রাখবো না। শুরু হয় সুখের সংসারে অশান্তি। এরপর শিলা কারণে-অকারণে রিয়াজের সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করে। রিয়াজের পরিবারের কারো সঙ্গে মিশে না শিলা। শাশুড়িকে সহ্য করতে পারে না। এরমধ্যে শিলার উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন নিয়ে কথা বলায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ চরম আকারে পৌঁছায়।
এক পর্যায়ে ২০১৩ সালে সবার অজান্তে বিনা কারণে শিলা বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু শিলার যত্রতত্র চলাফেরা বন্ধ হয়নি। এক পর্যায়ে রিয়াজকে না জানিয়ে ২০১৪ সালের ২২শে মে শিলা বাপের বাড়ি চলে যায়। রিয়াজ তাকে আনতে গেলে সে বলে সে আর রিয়াজের ভাত খাবে না। এবং রিয়াজকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো ও প্রাণনাশের হুমকি দেয় শিলা ও তার স্বজনরা। সুবিচার চেয়ে রিয়াজ খান নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার বরাবরে ২০১৪ সালের ২২শে জুলাই একটি লিখিত আবেদন করেন। এদিকে শিলা ও তার পরিবারের হুমকি ধামকি বেড়ে যাওয়ার ফলে নিরাপত্তা চেয়ে ১০ই আগস্ট সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় জিডি করে রিয়াজ।
জিডির খবর পেয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন সমঝোতা বৈঠকের মাধ্যমে রিয়াজকে বাড়িতে ফিরিয়ে নেয়। প্রায় ৩ মাসের মাথায় শিলা আবার রিয়াজের সঙ্গে ঝগড়া শুরু করলে এর সূত্রধরে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে শ্বশুরবাড়ির লোকজন রিয়াজকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এবং ২০শে এপ্রিল রিয়াজের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ আদালতে একটি যৌতুক মামলা দায়ের করে। যৌতুক মামলায় শিলা উল্লেখ করে তার বাবা জমি কিনে বাড়ি করে দিয়েছে। ব্যবসার জন্য রিয়াজকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছে তার বাবা। রিয়াজ আরও ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। মজার বিষয় হলো মামলার সাক্ষীরা হলো শিলার বাবা, মা, চাচা, খালাতো ভাই। তবে এলাকাবাসী ও শিলার মামা আকতার হোসেন জানান, জমি ও বাড়ি দুটোই রিয়াজের টাকায় করা।
এটা আমরা জানি। রিয়াজও জানান, বিয়ের সময় শ্বশুরবাড়ি থেকে একটি সুতোও নেই নি। এবং কিছু দাবিও করিনি। পছন্দ করে বিয়ে করেছি। সেখানে চাওয়া-পাওয়ার কিছু ছিল না। শিলা আমার মা, ভাইবোনদের সহ্য করতে পারতো না। তাদের কিছু দিলে কঠিন আপত্তি করতো। আমার বাড়িতে তাদের আসা-যাওয়াও সে পছন্দ করতো না।
এদিকে রিয়াজ যৌতুক মামলায় আদালত থেকে জামিন নেয়ার পর চলতি বছরের ৩১শে মে সন্ধ্যায় শ্বশুরবাড়িতে সালিশ বৈঠকে পারিবারিক কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে শিলার ভাই শাকিল, বাবা আমির হোসেন বেদম মারধর করে রিয়াজকে।
এ সময় রিয়াজের সঙ্গে থাকা ব্যবসার ১ লাখ ২৫ হাজার ৫০০ টাকাও লুটে নেয় তারা। পরে টেনেহিঁচড়ে বাড়ি থেকে রিয়াজকে বের করে দেয়া হয়। এবং ভবিষ্যতে এই বাড়িতে এলে জানে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়। পরে সুস্থ হয়ে এ ঘটনায় রিয়াজ সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় শ্বশুর আমির হোসেন ও শ্যালক শাকিলকে আসামি করে একটি মামলা করেন। মামলা নং-৪৯। জামিনে এসে আমির হোসেন ও তার ছেলে শাকিল চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয় রিয়াজের ওপর। দুটি মোবাইল নম্বর থেকে রিয়াজের মোবাইলে ফোন দিয়ে রিয়াজকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়।
এতে নিরাপত্তা চেয়ে ২৭শে জুন রিয়াজ ঢাকার মিরপুর মডেল থানায় জিডি করেন। এবং ১০৭ ধারায় নারায়ণগঞ্জ আদালতে স্ত্রী শিলা, শ্বশুর আমির হোসেন ও শ্যালক শাকিলের বিরুদ্ধে একটি পিটিশন মামলা করেন। ৩০শে আগস্ট বিবাদীরা আদালতে মুচলেকা দেয় যে, তারা রিয়াজকে হুমকি দেয়নি, দিচ্ছে না এবং ভবিষ্যতেও দেবে না। পরে আদালত বিবাদীদের জবাবকে ৬ মাসের বন্ড হিসেবে গ্রহণ করেন।-মানবজমিন
৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে