ঢাকা : মেয়ে মিতু হত্যায় জামাতা এসপি বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন শ্বশুর মোশরাররফ হোসেন। একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে গণমাধ্যমের প্রতি এ আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি এ আহবান জানান।
বাবুলের শ্বশুর মোশরাররফ হোসেন বলেন, আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছে প্রায় ১২ বছর হলো। এত দিনের সংসার জীবনে কোনোদিন শুনিনি তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম বাবুলকে নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার করছে। এটা ঠিক না। অপনাদের হাত জোড় করে বলি এ মিথ্যা অপপ্রচার বন্ধ করুন।
তিনি বলেন, বাবুল একজন সৎ পুলিশ কর্মকর্তা। তার সততায় মুগ্ধ হয়ে আমি মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলাম। সৎ পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে তার অনেক অর্জন রয়েছে। কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ বাবুল রাষ্ট্রপতি পদকও পেয়েছেন, কিন্তু আমার মেয়ে মিতুকে বাবুল হত্যা করেছে এ কথা আমি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারি না।
কিছু অসৎ পুলিশ কর্মকর্তা বাবুলের সারা জীবনের অর্জনকে ম্লান করতে চায় বলেও মন্তব্য করেন শ্বশুর মোশাররফ হোসেন।
এতদিন বাবুল সবার কাছে একজন সৎ পুলিশ অফিসার হিসেবে পরিচিতি পেলেও স্ত্রী হত্যার ঘটনায় তিনি এখন সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন। বাবুলকে সন্দেহের বিষয়টি স্পষ্ট হয় গত ২৪ জুন শুক্রবার রাতে তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনায়।
বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ বা সন্দেহ এসব বিষয়কে সবাই গুরুত্ব দিলেও বিশ্বাস করছেন না বাবুলের শ্বশুর। জামাতার প্রতি রয়েছে তার অঘাত বিশ্বাস।
বাবুলের শ্বশুর বলেন, আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই। অপরাধী যেই হোক তাকে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আইনে আওতায় আনা হোক।
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, বাবুল বিপদে পড়ার পর নানা কথা উঠেছে। কিন্তু কর্মজীবনে এ সরকারের আমলেই বাবুল একাধিক বিপিএম, পিপিএম (পদক) পেয়েছেন। তার ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রথম সারির পদোন্নতি পেয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে চট্টগ্রামের জিইসি এলাকায় গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার।
পরবর্তীতে সিসি টিভির ফুটেজ দেখে আসামি ওয়াসিম ও আনোয়ারকে গ্রেফতার করা হয়।
ওয়াসিম ও আনোয়ার গত ২৬ জুন রোববার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার গভীর রাতে চট্টগ্রামের বাকলিয়া এলাকা থেকে এহতেশামুল হক ভোলা ও মঙ্গলবার ভোরে মনিরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সূত্র জানায়, মিতু হত্যাকাণ্ডে সাতজন অংশ নিয়েছিল বলে জবানবন্দিতে খুনিরা বলেছেন। সরাসরি অংশ নেয় মুসা, ওয়াসিম ও নবি। বাকিরা ব্যাকআপ ফোর্স হিসেবে ছিল।
তারা হলেন আনোয়ার, রাশেদ, কালু ও শাহজাহান। মুসা মোটরসাইকেল দিয়ে ধাক্কা দিয়ে মিতুকে ফেলে দেয়। এরপর ছুরি দিয়ে আক্রমণ করে নবি। গুলি চালায় ওয়াসিম ও মুসা।
এদিকে ২৯ জুন মিতু হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন পাঁচজনের দেশ ছাড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পুলিশ। তারা হলেন মুসা, রাশেদ, নবি, শাজাহান ও কালু।
স্ত্রী মিতু হত্যাকাণ্ডে গত শুক্রবার বাবুল আক্তারকে গোয়েন্দা পুলিশের দপ্তরে নিয়ে প্রায় ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর নানান প্রশ্ন উঠলেও পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো পরিষ্কার কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি।
তবে সংবাদমাধ্যমে বাবুল আক্তারের পুলিশে থাকা না থাকার বিষয়েও নানান ধরনের খবর প্রকাশ হচ্ছে।
তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে বাবুল আকতার তার সাথে কোনো কথা বলেননি। তিনি পত্রিকায় দেখেছেন যে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় বাবুল আকতারের কাছ থেকে জোর করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে। এসব খবর সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই।
কিন্তু বাবুল আকতার স্ত্রী হত্যায় জড়িত থাকতে পারেন, এটা তারা বিশ্বাস করেন না বলে মোশাররফ হোসেন উল্লেখ করেছেন। তিনি হত্যাকাণ্ডের মূল বিষয়ে সঠিক তদন্ত চান।
৩০ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম