বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০১৬, ১০:৪৫:০৩

এবার মুখ খুললেন এসপি বাবুলের শাশুড়ি

এবার মুখ খুললেন এসপি বাবুলের শাশুড়ি

ঢাকা : ১৪ বছরের সংসারে বাবুল-মিতুর মধ্যে কোনো অশান্তি হয়নি বলে জানিয়েছেন এসপি বাবুল আক্তারের শাশুড়ি শাহিদা মোশাররফ।

রাজধানীর বনশ্রীর মেরাদিয়ার ভূঁইয়াপাড়ার গলিতে এসপি বাবুল আক্তারের প্রয়াত স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুর বাবার বাড়ি।  ছোট্ট দোতলা বাড়িতে স্ত্রীর হত্যাকাণ্ডের পর দুই সন্তানকে নিয়ে থাকছেন বাবুল আক্তার।

বাবুল আক্তার কারো সাথে দেখা করেন না বলে একটি গণমাধ্যমকে জানান মিতুর মা শাহিদা মোশাররফ।  কাঁদতে কাঁদতে মাহমুদার মা বলেন, আমার সবচেয়ে বড় কষ্ট— আমার মেয়েটা চলে গেল। এরপর তোরা আমার জামাইকে প্যাঁচাইলি কেন?

তিনি বলেন, বাবুল একটা ফেরেশতা।  ওরা আমার মেয়ে জামাইরে নিয়ে আজেবাজে কথা বলছে।  আমার ছেলে নেই, ওকে আমরা ছেলের মতো দেখি।

বাবুলের বিরুদ্ধে পুলিশ ও গণমাধ্যমের বিভিন্ন অভিযোগ বিষয়ে শাশুড়ি শাহিদা মোশাররফ বলেন, যে যা-ই বলুক না কেন, আমরা বলি না।  আমাদের বাসার কেউ টিভিও দেখে না, পত্রিকাও পড়ি না।  

তিনি বলেন, শুধু আল্লাহর কাছে বিচার দিই। পরিবারের কারো বাবুলের প্রতি সন্দেহ নেই।  ও ফেরেশতা।  আমি বুঝি না, মানুষ একটা কথা কেন বোঝে না।  কেন একজন তার বউরে মেরে ফেলবে?

বাবুল আক্তারের শাশুড়ি বলেন, বউ অন্যায় করলেও সন্তানদের জন্য হলেও তো বাঁচায় রাখবে।  মেয়ে- মেয়ে জামাইয়ের খুব ভালো সম্পর্ক ছিল।  আমাদের কষ্ট লাগে।  কী সব আজেবাজে কথা বলছে লোকজন! আমার মাথায় কাজ করে না।

গভীর রাতে পুলিশ কেন বাবুল আক্তারকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে গেল এমন প্রশ্নে শাহিদা মোশাররফ বলেন, ওরে পুলিশে নিতে আসছে।  ও পুলিশে চাকরি করছে।  আইজি সাহেব ডাকছেন, তাই গেছে।

তিনি বলেন, আমি আর কারো কাছে বিচার চাই না। আমি আল্লাহর কাছে বিচার চাই।  আমার মেয়ে খুব সরল-সহজ ছিল।  ১৪ বছর বিয়ে দিয়েছি, কোনোদিন অশান্তি হয়নি।  মেয়ে সারাক্ষণ আমার খোঁজ-খবর নিত।  সারাক্ষণ বলত, তোমার কিছু হলে আমি তো বাঁচব না।  এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব? ওর সন্তানেরা কী নিয়ে বাঁচবে?

শাহিদা মোশাররফ বলেন, বিশ্বাস করি না বাবুল আমার মেয়েকে খুন করেছে বা নির্দেশ দিয়েছে।  ওর বয়স যখন ১১ বছর, তখন থেকে তাকে চিনি।  সে সময় আমার মেয়ের বয়স ছিল দুই বছর।

চোখ মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ডিসেম্বরে মেয়ের সঙ্গে শেষ দেখা।  বাবুলের পোস্টিং ঢাকায় হওয়ার পর মেয়ে ফোন করে বলল, ও এক মাস ঢাকায় থাকবে; তোমাদের বাসায় রেখো।

কারা মারল মাহমুদাকে এমন প্রশ্নে মাহমুদার মা বলেন, হায়াত–মউত আল্লাহর কাছে।  ওর হায়াত নেই, মারা গেছে।  আমার আর কোনো ধারণা নেই। আমি যদি কোলে রাখতাম, তবুও মারা যেত।  ওর ওইদিন পর্যন্ত হায়াত ছিল।

তিনি বলেন, আমার দুইটা মেয়ে, এখন একটাই আছে।  আমি কারো কাছে বিচার চাই না, আমি আল্লাহর কাছে বিচার চাইব।  

বাবুল আক্তারের শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন এখনো বিশ্বাস করেন যে, বাবুল এ হত্যায় জড়িত নন।  বাবুলকে জড়িত যেসব প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, তার সবই অপ্রাসঙ্গিক।

মোশাররফ হোসেন বলেন, বাবুল একজন চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা।  অনেক সূত্রবিহীন মামলাও খুঁজে বের করে ফেলেছে।  সেই বাবুল যদি তার স্ত্রীকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে কি সরাসরি জড়িত হবে? নিজের সোর্সকে দিয়ে কি খুনটি করাবে? তা-ও আবার বাড়ির কাছে, ছেলের সামনে?

তিনি বলেন, মেয়ে হত্যার বিচার চাই।  হত্যার বিষয়টিকে ছাপিয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে হইচই চলছে।  খুনি কে? বাবুল যদি মাহমুদাকে হত্যা করে থাকে, এটা প্রমাণ হলে তার শাস্তি হবে।

হত্যার তদন্ত বিষয়ে তিনি বা তার পরিবারের কারো সঙ্গে পুলিশের তদন্তকারীদের কেউ যোগাযোগ করেননি বলেও দাবি তার।

মেয়ে হত্যায় জামাতা এসপি বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন শ্বশুর মোশরাররফ হোসেন।  

বাবুলের শ্বশুর মোশরাররফ হোসেন বলেন, এত দিনের সংসার জীবনে কোনোদিন শুনিনি তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে।  কিন্তু বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম বাবুলকে নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার করছে।  এটা ঠিক না। অাপনাদের হাত জোড় করে বলি এ মিথ্যা অপপ্রচার বন্ধ করুন।

তিনি বলেন, বাবুল একজন সৎ পুলিশ কর্মকর্তা।  তার সততায় মুগ্ধ হয়ে আমি মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলাম।  সৎ পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে তার অনেক অর্জন রয়েছে।  কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ বাবুল রাষ্ট্রপতি পদকও পেয়েছেন, কিন্তু আমার মেয়ে মিতুকে বাবুল হত্যা করেছে এ কথা আমি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারি না।  

এতদিন বাবুল সবার কাছে একজন সৎ পুলিশ অফিসার হিসেবে পরিচিতি পেলেও স্ত্রী হত্যার ঘটনায় তিনি এখন সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন।  বাবুলকে সন্দেহের বিষয়টি স্পষ্ট হয় গত ২৪ জুন শুক্রবার রাতে তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনায়।

উল্লেখ্য, গত ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে চট্টগ্রামের জিইসি এলাকায় গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু।  এ ঘটনায় বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার।  

পরবর্তীতে সিসি টিভির ফুটেজ দেখে আসামি ওয়াসিম ও আনোয়ারকে গ্রেফতার করা হয়।
ওয়াসিম ও আনোয়ার গত ২৬ জুন রোববার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার গভীর রাতে চট্টগ্রামের বাকলিয়া এলাকা থেকে এহতেশামুল হক ভোলা ও মঙ্গলবার ভোরে মনিরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সূত্র জানায়, মিতু হত্যাকাণ্ডে সাতজন অংশ নিয়েছিল বলে জবানবন্দিতে খুনিরা বলেছেন।  সরাসরি অংশ নেয় মুসা, ওয়াসিম ও নবি।  বাকিরা ব্যাকআপ ফোর্স হিসেবে ছিল।

তারা হলেন আনোয়ার, রাশেদ, কালু ও শাহজাহান। মুসা মোটরসাইকেল দিয়ে ধাক্কা দিয়ে মিতুকে ফেলে দেয়।  এরপর ছুরি দিয়ে আক্রমণ করে নবি।  গুলি চালায় ওয়াসিম ও মুসা।

এদিকে ২৯ জুন মিতু হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন পাঁচজনের দেশ ছাড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পুলিশ।  তারা হলেন মুসা, রাশেদ, নবি, শাজাহান ও কালু।

স্ত্রী মিতু হত্যাকাণ্ডে গত শুক্রবার বাবুল আক্তারকে গোয়েন্দা পুলিশের দপ্তরে নিয়ে প্রায় ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।  এরপর নানান প্রশ্ন উঠলেও পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো পরিষ্কার কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি।
৩০ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে