শুক্রবার, ০১ জুলাই, ২০১৬, ০২:২৩:৩৫

‘হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল টেলিগ্রাম অ্যাপে’

‘হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল টেলিগ্রাম অ্যাপে’

নিউজ ডেস্ক : মাদারীপুরে কলেজ শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীকে হত্যার নির্দেশ টেলিগ্রাম অ্যাপসের মাধ্যমে দিয়েছিল জেএমবির আমির। এরপর একটি স্লিপার সেল সংগঠিত হয়ে হামলা চালায়। তবে স্থানীয়রা টের পেয়ে যাওয়ায় জঙ্গিরা সফল হয়নি। এমন তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজমের অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।

শুক্রবার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে তিনি এ তথ্য জানান। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় রাজধানীর ডেমরার বাদশাহ সড়ক থেকে ওই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী খালেদ সাইফুল্লাহ ওরফে জামিল ওরফে আফিফ কাইফি ওরফে পথভোলা পথিককে (২৬) গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রভাষক রিপন যে কলেজে শিক্ষকতা করেন সেই নাজিমুদ্দীন সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের প্রধান বেলায়েত হোসেনের ছেলে গ্রেফতারকৃত সাইফুল্লাহ। ঘটনার অল্প কয়েকদিন আগে বেলায়েত হোসেন অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যায় প্রভাষক রিপন। এসময় সাইফুল্লাহ তাকে টার্গেট করে।

তিনি বলেন, এরপর জেএমবির আমিরের কাছ থেকে টেলিগ্রাম অ্যাপসের মাধ্যমে হত্যার অনুমতি নেয়। অনুমতি পাওয়ার পর সাইফুল্লাহ তার অনুসারি ফাহিমসহ আরও কয়েকজনকে এই হত্যা দায়িত্ব দেয়। ঘটনার সময় ফাহিমের মোবাইল নিয়ে সাইফুল্লাহ দূরেই দাঁড়িয়েছিল।

মনিরুল ইসলাম বলেন, রিপনেরও ওপর যখন হামলা করে তখন স্থানীয় লোকজন দেখে ফেলে। তারা দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় ফাহিমকে ধরে ফেলে স্থানীয়রা। অবস্থা বেগতিক দেখে ফাহিমের মোবাইল নিয়ে চলে যায় সাইফুল্লাহ।

তিনি বলেন, সাইফুল্লাহ শুধু এই ঘটনার পরিকল্পনাকারী না, অর্থদাতাও। মাদারীপুরের পুরান বাজার কামার পট্টি থেকে সে ২৭০০ টাকা দিয়ে দুটি চাপাতি, একটি চাইনিজ কুড়াল ও একটি চাকু কেনে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল্লাহ এসব বিষয় স্বীকার করেছেন।

মনিরুল জানান, সাইফুল্লাহ ৪৯ জন জেএমবি সদস্যের একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমরা এই গ্রুপের বিষয় তথ্য পেয়েছি। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। প্রভাষক রিপনের ওপর হামলার সঙ্গে আর কে কে জড়িত ছিলও সে বিষয়েও তথ্য পেয়েছি। খুব শিগগিরেই তাদের গ্রেফতার করা হবে।

তিনি আরও বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় জেএমবি। আপনারা জানেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কারণে একটি রাজনৈতিক দলের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাদের সঙ্গে জেএমবির উদ্দেশ্যের মিল রয়েছে।

মনিরুল বলেন, পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ফাইজুল্লাহ ফাহিম প্রথমে হিযবুত তাহরীরের সদস্য ছিল। এরপর সাইফুল্লাহ তাকে জেএমবিতে যোগদান করায়।

জেএমবির টার্গেটের বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশ, শিয়া, আহমাদিয়া, শিয়া, সংখ্যালঘুসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষকে হত্যার টার্গেট করেছে তারা। সাইফুল্লাহ’র কাছ থেকে উদ্ধারকৃত মোবাইল থেকে এসব টার্গেটের কথা জানা গেছে। আমরা তার মোবাইল থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। সেগুলো যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।

গত ১৫ জুন বিকালে ফাহিমসহ তিন সন্ত্রাসী রিপন চক্রবর্তীকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয়রা ফাহিমকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।

এই ঘটনার তিনদিনের মাথায় ১৮ জুন পুলিশ রিমান্ডে থাকা অবস্থায় বন্দুকযু্দ্ধ মারা যায় ফাহিম। পুলিশের দাবি, নিহত ফাহিম ঢাকার উত্তরার একটি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন—আর তিনি নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরে যুক্ত ছিল।

বন্দুকযুদ্ধের সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে যে ফাহিম নিহত হয়েছে, তা কিভাবে নিশ্চিত হয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ ওই সময় শর্টগানের গুলি চালিয়েছিল। কিন্তু ফাহিমের শরীরে শর্টগানের কোনও গুলি পাওয়া যায়নি। তাই তার মৃত্যু সন্ত্রাসীদের গুলিতেই হয়েছে।

তিনি অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যুবসমাজ যাতে ভ্রান্তপথে না চলে যায় সে বিষয়ে সচেতন থাকবেন। সন্তানরা কী করে সেদিকে আমাদের সবার খেয়াল রাখতে হবে।
০১ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে