বুধবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০২:০৬:১৩

সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিএনপি নয়া কৌশল!

সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিএনপি নয়া কৌশল!

মাঈনুল আলম : ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক লবিং-এ নেমেছে বিএনপি। বড় অঙ্কের অর্থ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে একটি বড় লবিং ফার্ম নিয়োগ করেছে দলটি। একজন ব্রিটিশ আইনজীবীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মার্কিন লবিং ফার্মের সঙ্গে যোগাযোগ চুক্তি সম্পাদন ও নিয়মিত তথ্য প্রদানের জন্য। পাঁচ বছর ধরে চলমান একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নস্যাত্ করা, সহসাই সংসদ নির্বাচন দেয়া, মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা মার্কিন প্রশাসন ও আইন প্রণেতাদের কাছে তুলে ধরার কাজ করছে মার্কিন লবিং ফার্ম। মহাজোট সরকারকে আন্তর্জাতিকভাবে হেয় করতে ও বেকায়দায় ফেলতেই বিএনপি এই ফার্ম নিয়োগ করে।
 
ওয়াশিংটন ডিসি ভিত্তিক লবিং ফার্ম একিন গাম্প স্ট্রস হাওয়ার এন্ড ফেল্ডকে ফেব্রুয়ারি মাসে বিএনপির জন্য লবিং করতে নিয়োগ দেয়া হয়। বিএনপির পক্ষে মার্কিন ফার্মটির সঙ্গে চুক্তি করেন ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান। প্রাপ্ত চুক্তিপত্র ও শর্তগুলো পর্যালোচনা করে জানা যায়, ব্রিটিশ আইনজীবীর মাধ্যমে বিএনপি প্রতিমাসে মার্কিন ফার্মকে ৪০ হাজার মার্কিন ডলার দেবে। প্রথম পর্যায়ে তিন মাসের ফি এক লাখ ২০ হাজার ডলার দেয়া হয়। কাজের মাত্রা ও ধরন বিবেচনায় মাসিক ফি দ্বিগুণ বা তারও বেশি হতে পারে। ফার্মটি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের বিরুদ্ধে মার্কিন নীতিনির্ধারক, সুশীল সমাজ, থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম এবং সিনেটর ও কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে যোগাযোগ, তথ্য প্রদান ও জনমত তৈরির কাজ করবে।
 
মার্কিন লবিং ফার্ম ‘একিন গাম্প’ এর প্রধান কার্যালয় ওয়াশিংটন ডিসিতে। গত দুই বছরের বার্ষিক আয় (বছরে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার) বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় লবিং ফার্ম হিসেবে স্বীকৃতি পায় ‘একিন গাম্প’। উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার ২১টি বড় শহরে তাদের শাখা অফিস রয়েছে। প্রায় এক হাজার আইনজীবী (এ্যাটর্নি) ও ১৮শ’ নির্বাহী বিশ্বজুড়ে নিয়োজিত রয়েছে। ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ফার্মটির অন্যতম অংশীদার পরিচালক মার্স সি হ্যামারসন এবং বিএনপির পক্ষে ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন। মার্স সি হ্যামারসন লবিং ফার্মটির লন্ডন ও দুবাই অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত। ‘একিন গাম্প’ ২০১৫ সালে প্রথম চুক্তি করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সঙ্গে। ফার্মটির ক্লায়েন্ট তালিকায় ২৮ ভিআইপি রোড, নয়াপল্টন, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ— এ ঠিকানায় বিএনপির নাম রয়েছে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি চুক্তিটি সম্পাদিত হয়।
 
মার্কিন সরকারের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস এর নির্ধারিত ফরমে লবিং ফার্মটি তাদের কার্যক্রমের বিবরণ হিসেবে বিএনপির সঙ্গে চুক্তির কথা উল্লেখ করেছে। বিবরণে বিএনপির পক্ষে ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান, ব্যারিস্টার এট ল-এর নাম, ঠিকানা ও বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।

* প্রতি মাসে খরচ ৪০ হাজার ডলার
 
* বিএনপির পক্ষে কাজ করছেন ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান
 
* উদ্দেশ্য যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকানো, নির্বাচন আদায়। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও মার্কিন প্রশাসনের কাছে তুলে ধরা হবে।

ব্রিটেনের প্রখ্যাত আইনজীবীদের চেম্বার লন্ডনের নাইন বেডফোর্ড রো-তে আন্তর্জাতিক আইন নিয়ে কাজ করেন টবি ক্যাডম্যান। ২০১০ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করেন তিনি। জামায়াতে ইসলামীর নেতা যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামীসহ অভিযুক্ত নেতাদের পক্ষে পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রচার ও নানা ব্যাখ্যা দেয়ার কাজ করেন টবি ক্যাডম্যান। এই আইনজীবী কোন কোন যুদ্ধাপরাধীর পরিবারের সদস্যদেরও আইনি পরামর্শ দেন। জাতিসংঘেও তিনি যুদ্ধাপরাধের মামলার কাগজপত্র জমা দেন।
 
যুক্তরাষ্ট্রের একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বিএনপির লবিং ফার্ম নিয়োগের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে ওয়াশিংটন ডিসি ও নিউইয়র্কে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা অবস্থান করছেন। তারা বিভিন্ন সময়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক, আলোচনা করে থাকেন। বিএনপি নেতাদের তত্পরতা সরকারের নজরে রয়েছে।
 
এদিকে লবিং ফার্ম নিয়োগের বিষয়ে বিএনপির একাধিক নেতার সাথে যোগাযোগ করে জানতে চাওয়া হলে তারা এ বিষয়ে অবহিত নন বলে জানান। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র নেতা বলেন, এ বিষয়ে সব সিদ্ধান্ত হচ্ছে লন্ডন থেকে। ঢাকায় কোন পর্যায়েই কিছু আলোচনা হয়নি।-ইত্তেফাক
৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে