নিউজ ডেস্ক : রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান নামের যে রেস্তোরাঁটিতে অস্ত্রধারীরা হামলা করেছে এই রেস্তোরাঁটি বিদেশিদের কাছে জনপ্রিয় ছিল। কূটনৈতিক এলাকায় অবস্থান বলে বিদেশিরা ওই রেস্তোরাঁয় নিরাপদবোধ করতেন। তার সবুজ লন আকৃষ্ট করতো বিদেশিদের। সকাল এবং বিকালে বিদেশিরা খেতে আসতেন আর্টিজানে। জানান বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একজন বিদেশি নাগরিক।
ভেতরের খোলামেলা পরিবেশ তারা পছন্দ করতেন। কূটনৈতিক এলাকায় রেস্টুরেন্টটির অবস্থান হওয়ায় তারা বেশ নিরাপদ বোধ করতেন। রেস্টুরেন্টে বেশ কয়েকবারই গিয়েছিলেন ৭৯ নম্বর সড়কেরই বাসিন্দা কাজী মোহাইমেন। তার ভাষায় রেস্টুরেন্টটি ছিল একটি চমৎকার সাজানো গোছানো।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমার দেখা রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম সেরা, অসাধারণ। রেস্টুরেন্টটির মূল প্রবেশদ্বার একটি। প্রবেশের পর একদিকে চমৎকার খোলা জায়গা আর সোজা গেলে বেকারি।
এর ডান দিকে রেস্টুরেন্ট যেটার বাইরের দিকেও বসার জায়গা আছে। আবার বাইরের অংশে ঘাসের ওপরও বসার ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে। এছাড়া, ভেতরের দিকে ৫০/৬০ জনের বসার জন্য রয়েছে সুবিন্যস্ত চেয়ার টেবিল।
এছাড়াও জানা যায়, রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারি নামের ওই রেস্তোরাঁটির মালিক বাংলাদেশি। রেস্তোরাঁটি স্প্যানিশ হলেও ইতালীয় পিৎজার জন্য বিদেশিদের কাছে এটি জনপ্রিয়। রেস্তোরাঁর লনটি বিদেশিদের জন্য পছন্দের হওয়ায় তারা প্রায় সেখানে খেতে যান। স্প্যানিশ ওই রেস্তোরাঁটি আশপাশে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার দূতাবাস এবং নরডিক ক্লাব অবস্থিত।
আর দ্বিতল ভবনের ওপরের তলায় অফিস ছিলও বলে ধারণা করা হচ্ছে। একটি বহুজাতিক কোম্পানির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলছেন তিনি অনেকবারই ওই রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছেন। তার বর্ণনায় সকালের দিকে প্রাত:রাশে বেকারিতে ভিড় বেশি হতো এবং
বিদেশিরাই বেশি ভিড় করতেন সেখানে। আর রাতে ভিড় হতো রেস্টুরেন্টে। তিনি বলেন, কূটনীতিকদের অনেকে এবং বহুজাতিক কোম্পানির পদস্থ লোকজন যেতো পরিবারসহ। তাদের বাচ্চাদের রেস্টুরেন্টের বাগানে খেলতে দেখা যেতো।
ঘটনাস্থল রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টের আশেপাশে ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সকাল থেকেই তারা অভিযান শুরু করবে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।
পুলিশের সাঁজোয়াযান (এপিসি) দিয়ে ওই হোটেল ঘিরে ফেলা হয়েছে। এসময় এক ব্যক্তিকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে ওই ব্যক্তি এই সন্ত্রাসী হামলার শিকার নাকি ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
এই হামলার দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ১.৩০ মিনিটের দিকে আইএসের কথিত সংবাদ সংস্থা আমাক নিউজের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ এ খবর দিয়েছে।
এদিকে, জিম্মিকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান করতে চাইছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব) মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ।
উল্লেখ্য, শুক্রবার রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজেন রেস্টুরেন্টেতে সন্ত্রাসীরা বিদেশিসহ কমপক্ষে ২০জন নাগরিককে জিম্মি করে রেখেছে। রেস্টুরেন্টের ভেতর থেকেই ৮-৯ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা প্রথমে পুলিশের ওপর গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করে। হোটেলের আশপাশ এলাকা পুলিশ ঘিরে রেখেছে। গুলশান ২ এর ৭৯ নম্বর রোডে ৫নং বাড়ির দ্বিতীয় তলায় এই রেস্টুরেন্টের অবস্থান।
পুলিশ জানিয়েছে, সন্ত্রাসীদের কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে। পুলিশ ও র্যাবের বিশেষ ইউনিট হোটেল থেকে জিম্মিদের উদ্ধারের পরিকল্পনা করছে।
২ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসবি/এসএস