শনিবার, ০২ জুলাই, ২০১৬, ১০:১৬:৫৮

‘ঢুকেই ওরা ফাঁকা গুলি করে’

‘ঢুকেই ওরা ফাঁকা গুলি করে’

নিউজ ডেস্ক : গুলশানের রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনায় দুজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা পাওয়া গেছে। তাঁদের একজন ‘হলি আর্টিজান বেকারি’ নামের ওই রেস্তোরাঁর সুমন রেজা। হামলার সময় তিনি ভেতরে ছিলেন। বেরিয়ে আসার পর সুমন বলেন, রাত ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে ৮-১০ জন যুবক অতর্কিতে ঢুকে পড়ে। তাদের একজনের হাতে খোলা তলোয়ার ছিল, অন্যদের হাতে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। ঢুকেই ওরা ফাঁকা গুলি করে। বেকারিতে ২০ জনের মতো বিদেশি নাগরিক ছিলেন।

সুমন বলেন, ‘আমি ছাদে ছিলাম। ওরা যখন বোমা মারছিল, তখন বিল্ডিং কাঁপছিল। ওরা ১০-১২টা বোমা মেরেছে। মারতেই আছে, মারতেই আছে। ওরা সামনের দিকে স্টেপ নিচ্ছিল মনে হচ্ছিল। তখন ছাদ থেকে লাফ দেই।’ তিনি বলেন, আক্রমণকারীদের বয়স সর্বোচ্চ ২৮ বছর বলে মনে হয়েছে। গুলি ছোড়ার সময় তারা ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দেয়। তিনি বলেন, বেকারির কয়েকজন কর্মীকে মুঠোফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। দুই বিদেশি কর্মীর মধ্যে ইতালিয়ান একজন নিরাপদে রয়েছেন, আর্জেন্টাইন আরেকজনের খবর পাওয়া যাচ্ছে না।

রাত ১২টার দিকে মুঠোফোনে আর্টিজান বেকারির পাশের লেকভিউ ক্লিনিকের কর্মচারী বিজয় ইসলাম বলেন, হঠাৎ করে তাঁরা রেস্তোরাঁর ভেতর থেকে গুলির শব্দ শোনেন। এরপর হামলা শুরু হয়। পুলিশ সদস্যরা সামনে এগোতে চাইলে সন্ত্রাসীরা গুলি ও বোমা ছোড়ে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ ভেতরে ঢুকতে পারছিলেন না।

ঘটনাস্থল থেকে আনোয়ারুল করিম নামের একজন বলেন, তাঁর ভাতিজা প্রকৌশলী হাসনাত করিম, হাসনাতের স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে সেখানে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে তাঁর সঙ্গে হাসনাতের মুঠোফোনে প্রথম কথা হয়। সে সময় ভেতর থেকে হাসনাত ‘আছি, কোনোরকমে আছি’ বলেই ফোন কেটে দেন। এরপর ১০টা ৪১ মিনিটে দ্বিতীয়বার কথা হয়। হাসনাত বলেন, ‘ওরা আমাদের জিম্মি করে রেখেছে। আশপাশে পুলিশ থাকলে বলো গুলি না চালাতে। গুলি চালালে আমাদের মেরে ফেলবে।’ এরপর ১১টা থেকে আর হাসনাতের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে আনোয়ারুল জানান।

ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় অস্ত্রধারীদের হামলায় জিম্মি পরিস্থিতি সৃষ্টির ১২ ঘণ্টা পর কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে সঙ্কটের রক্তাক্ত অবসান ঘটেছে। শনিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ঘণ্টাখানেকের এই অভিযানে হলি আর্টিজান বেকারির ভেতরে অন্তত পাঁচজন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছেন এক র‌্যাব কর্মকর্তা। তবে তারা জিম্মি না হামলাকারী সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

অভিযানের শুরুতেই অভিযানে অংশগ্রহণকারী সেনা সদস্যরা নারী ও শিশুসহ পাঁচজনকে উদ্ধার করে নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে বলে একজন প্রত্যক্ষদর্শী  জানিয়েছেন। তবে সেখানে ঠিক কতজন আটকা পড়েছিলেন এবং তাদের মধ্যে কতজন জীবিত উদ্ধার হয়েছেন- তা এখনো স্পষ্ট হয়নি। সকালে সামরিক বাহিনীর কমান্ডো দল উদ্ধার অভিযান শুরু করলে ঘণ্টাখানেক ব্যাপক গোলাগুলি চলে।

প্যারা কমান্ডোদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান অংশ নেয় অভিযানে। আধা ঘণ্টায় সহস্রাধিক রাউন্ড গুলির পাশাপাশি শ’ খানেক বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায় দূর থেকেও।

কূটনৈতিক পাড়ায় হলি আর্টিজান বেকারি নামের ওই ক্যাফে থেকে আনুমানিক ৫০ গজ দূরের এক বাড়ির বাসিন্দা জানান, তিনি পাশের প্রায় খালি একটি ভবন থেকে টেলিস্কোপ লাগানো স্নাইপার রাইফেল দিয়ে গুলি ছুড়তে দেখতে পান। গুলি ছোড়া হয় সাঁজোয়া যান থেকেও।

পরে সেনা সাঁজোয়া যান হলি বেকারির দেয়াল ভেঙে ভেতরে ঢোকে। ওই কম্পাউন্ডের বাইরের দিকে থাকা পিজা কর্নার এ সময় গুঁড়িয়ে যায়।

যে সড়কে ওই বেকারি, সেই ৭৯ নম্বর সড়কের মোড় থেকে বলেন, ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ফায়ার এক্সটিংগুইশার নিয়ে তিনি ওই ভবনের দিকে যেতে দেখেন। কিছু সময় পর একদল চিকিৎসকও স্ট্রেচার নিয়ে ওই ক্যাফের ভেতরে যান।

অন্তত একজন বিদেশি নাগরিক সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেলেও পুলিশ কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
০২ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে