শনিবার, ০২ জুলাই, ২০১৬, ১১:১১:০৫

গুলশান সংকট, সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে আইএসপিআর

গুলশান সংকট, সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে আইএসপিআর

নিউজ ডেস্ক : ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় অস্ত্রধারীদের হামলায় জিম্মি পরিস্থিতি সৃষ্টির ১২ ঘণ্টা পর কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে সঙ্কটের রক্তাক্ত অবসান ঘটেছে। উদ্ধার অভিযানের বিষয়ে বিকালে ব্রিফিং করবে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। শনিবার সকালে আইএসপিআর-এর পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, হলি আর্টিজেন রেস্টুরেন্টে জিম্মি উদ্ধার অভিযানের প্রেস ব্রিফিং ঢাকা সেনানিবাসের সেনাসদরে বিকেল সাড়ে ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে। তবে জরুরি প্রয়োজনে সময় পরিবর্তন হতে পারে। এর আগে সকালে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে টানা ১১ ঘণ্টা জিম্মি অবস্থা থেকে ১৩জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা হয়েছে আরও পাঁচজনের মরদেহ।

এদিকে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ঘণ্টাখানেকের এই অভিযানে হলি আর্টিজান বেকারির ভেতরে অন্তত পাঁচজন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছেন এক র‌্যাব কর্মকর্তা। তবে তারা জিম্মি না হামলাকারী সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

অভিযানের শুরুতেই অভিযানে অংশগ্রহণকারী সেনা সদস্যরা নারী ও শিশুসহ ১৮জনকে উদ্ধার করে নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে বলে একজন প্রত্যক্ষদর্শী  জানিয়েছেন।

তবে সেখানে ঠিক কতজন আটকা পড়েছিলেন এবং তাদের মধ্যে কতজন জীবিত উদ্ধার হয়েছেন- তা এখনো স্পষ্ট হয়নি। সকালে সামরিক বাহিনীর কমান্ডো দল উদ্ধার অভিযান শুরু করলে ঘণ্টাখানেক ব্যাপক গোলাগুলি চলে।

প্যারা কমান্ডোদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান অংশ নেয় অভিযানে। আধা ঘণ্টায় সহস্রাধিক রাউন্ড গুলির পাশাপাশি শ’ খানেক বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায় দূর থেকেও।

কূটনৈতিক পাড়ায় হলি আর্টিজান বেকারি নামের ওই ক্যাফে থেকে আনুমানিক ৫০ গজ দূরের এক বাড়ির বাসিন্দা জানান, তিনি পাশের প্রায় খালি একটি ভবন থেকে টেলিস্কোপ লাগানো স্নাইপার রাইফেল দিয়ে গুলি ছুড়তে দেখতে পান। গুলি ছোড়া হয় সাঁজোয়া যান থেকেও।

পরে সেনা সাঁজোয়া যান হলি বেকারির দেয়াল ভেঙে ভেতরে ঢোকে। ওই কম্পাউন্ডের বাইরের দিকে থাকা পিজা কর্নার এ সময় গুঁড়িয়ে যায়।

যে সড়কে ওই বেকারি, সেই ৭৯ নম্বর সড়কের মোড় থেকে বলেন, ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ফায়ার এক্সটিংগুইশার নিয়ে তিনি ওই ভবনের দিকে যেতে দেখেন। কিছু সময় পর একদল চিকিৎসকও স্ট্রেচার নিয়ে ওই ক্যাফের ভেতরে যান।

অন্তত একজন বিদেশি নাগরিক সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেলেও পুলিশ কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে একদল অস্ত্রধারী গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালালে অবস্থানরত অজ্ঞাত সংখ্যক অতিথি সেখানে আটকা পড়েন।

পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে নিহত হন বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন ও গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম।

রাতে হামলার পরপরই ক্যাফে থেকে অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন এমন একজন কর্মী বলেছিলেন, অন্তত ২০ জন সেখানে ছিলেন তখন, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বিদেশি। তবে গণমাধ্যমে আসা তথ্য অনুযায়ী এই সংখ্যা আরো বেশি।

তাদের কার অবস্থা কেমন সে বিষয়ে কোনো তথ্য এখন পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে সন্ত্রাসীরা ঢুকলো কেমনে?

কূটনৈতিক জোন হিসেবে সুপরিচিত রাজধানীর গুলশান। এ কারণে এই এলাকার নিরাপত্তা সব সময় বেশি থাকে। কিন্তু এ নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসীরা কীভাবে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করল, সে প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে।

হলি আর্টিজান রেস্টেুরেন্টের ম্যানেজার সুমন বলেন, ‘রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টা ২০ মিনিটের দিকে ২৫-৩০ বছর বয়সী ১৫ থেকে ২০ জন যুবক রিভালবার, ধারাল অস্ত্র ও বোমা নিয়ে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে। তারা ভেতরে ঢুকে ফাঁকা গুলি করে। এরপরই তারা গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটায়। অথচ এ এলাকা কূটনৈতিক জোন হওয়ায় পুলিশের বাড়তি নজরদারি থাকে।’

আরেক প্রতক্ষদর্শী সালমান বলছিলেন, ভদ্রলোকের বেশে আট থেকে নয়জন একসঙ্গে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে। তাদের দেখে সন্দেহ করার উপায় ছিল না যে, তারা সন্ত্রাসী হামলা চালাতে এসেছে। কেননা, তারা প্যান্ট-শার্ট পরিহিত। পরবর্তী সময়ে গুলির শব্দে তিনি নিরাপদ স্থানে সরে যান।

গুলশান থানা পুলিশের এক সদস্য বলেন, ‘এই এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট, পুলিশের টহল দল সার্বক্ষণিক থাকে। প্রতিটি রাস্তার নিরাপত্তা দেখভাল করতে লাগানো আছে ক্লোস সার্কিট ক্যামেরা। এত কিছুর পরও সন্ত্রাসীরা কীভাবে এই জোনে প্রবেশ করল, তাই এখন তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।’
০২ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে