শনিবার, ০২ জুলাই, ২০১৬, ১১:৫৫:০০

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় গুলশানে কমান্ডো অভিযান

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় গুলশানে কমান্ডো অভিযান

নিউজ ডেস্ক : গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জিম্মিদের উদ্ধারে শনিবার সকালে কমান্ডো অভিযান শুরুর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সঙ্কটের অবসান ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা জিম্মি সঙ্কট অবসানের ইঙ্গিত দিলেও এই বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা সরকারের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

শুক্রবার রাত ৯টার দিকে একদল বন্দুকধারী ওই ক্যাফেতে অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ ঢুকে বিদেশিসহ কয়েকজনকে জিম্মি করেন। তাদের মোকাবেলায় গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সামরিক বাহিনী এই জিম্মিদের উদ্ধারে কমান্ডো অভিযানে নামে শনিবার সকালে।

সকাল সাড়ে ৭টায় সাঁজোয়া যান নিয়ে অভিযান শুরুর পর প্রথমে কিছুক্ষণ গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। ঘণ্টাখানেক পর শব্দ বন্ধ হয়ে যায়।

গুলশান ২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কের ওই ক্যাফের কাছে থাকা ভবন থেকে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সোয়া ৮টার পর দুটি সাঁজোয়া যান আর্টিজান বেকারির দেয়াল ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে। কম্পাউন্ডটির বাইরের দিকে থাকা পিজা কর্নারও তখন গুঁড়িয়ে যায়।

৯টার দিকে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদকে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় ওই ভবনটির বাইরে।

ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া হলি বেকারির সবুজ লনে তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপর দেখা যাচ্ছে। ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীদের হাতে বহনযোগ্য ছোটো অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নিয়ে ছুটে যেতে যান। একটু পরে হোস পাইপ হাতে অন্য কর্মীদেরও দেখা যায়। তবে কোনো আগুন দেখা যায়নি।

হলি বেকারিতে সাঁজোয়া যান নিয়ে অভিযান চলার সময় লেক ভিউ ক্লিনিকের গাড়ি পার্কিংয়ে রাখা দুটি গাড়ি দুমড়ে যায়।

বেশ কিছু সময় বিরতির পর সকাল ৯টা ২ মিনিটে বিকট একটি শব্দে চারপাশ কেঁপে উঠে। তবে  এসময় ক্যাফেটিতে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তাদের জায়গাতেই দেখা যায়।

অভিযানের সময় আশপাশের বিভিন্ন ভবনে অবস্থান নিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ৯টার দিকে বাঁশি বাজিয়ে ভবনগুলো থেকে বের হয়ে তাদের পরস্পরকে আলিঙ্গন করতে দেখা যায়।

পাশের ভবন থেকে র্যােব-পুলিশ সদস্যরা যখন বের হচ্ছিলেন তখনও ক্যাফেটির ভবনের মূল ফটকের সামনে রক্তের দাগ ছিল। ভোরের বৃষ্টিতে তার কিছুটা ছড়াতে দেখা যায় সড়কেও। আগের দিন এখানেই গুলিবিদ্ধ হন পুলিশের এক সদস্য।

সাড়ে ৯টার দিকে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘অভিযান শেষ।’

হলি বেকারির সামনের প্রাঙ্গণটিতে সেনা সদস্যদের দেখা যাচ্ছে। আছেন দুই-একজন র্যাগব সদস্যও। পুরোদস্তুর বর্ম পরে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের সদস্যদেরও তৎপর দেখা যাচ্ছে। হলি আর্টিজান বেকারির টি শার্ট পরা কিছু কর্মীকেও দেখা যাচ্ছে।

সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে আরেকটি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। তবে অবস্থাদৃষ্টে স্পষ্ট, বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। শব্দ হওয়ার আগেই সেনা সদস্যদের কানে হাত দিতে দেখা যায়।

কমান্ডো অভিযানের মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (চ্যান্সেরি) জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘একজন একজন (জিম্মিদের) করে উদ্ধার করা হচ্ছে।’ পরে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ১৮ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

ক্যাফের ভেতরে বেশ কয়েকজনের লাশ রয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান। তাদের মধ্যে পাঁচজন হামলাকারী বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

অভিযান শেষের পর ক্যাফের পাশের বহুতল ভবনটির গ্যারেজে হাত পিছমোড়া করে বেঁধে কয়েকজন যুবককে প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে শুইয়ে রাখতে দেখা যায়। তবে তারা কারা সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।

সোয়া ৮টা থেকে একে একে কয়েকজনকে উদ্ধার পেয়ে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। তাদের সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
০২ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে