নিউজ ডেস্ক : কক্সবাজারে আওয়ামী লীগ-বিএনপি বড় দুই দলের অবস্থান কারো চেয়ে কেউ কম নয়। জামায়াতের অবস্থানও ভাল ছিল। কিন্তু রামুর বৌদ্ধ মন্দির পোড়া মামলা ও মাওলানা দেলাওয়ার হুসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর সহিংস ঘটনার মামলায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে দলটি।
কিন্তু এখন সরকারে থাকলেও দলীয় কোন্দলে নাকাল আওয়ামী লীগ। দীর্ঘদিনের কোন্দল কাটিয়ে বিএনপিতে এখন ঐক্যের সুর। প্রধান দুই দলের বর্তমান চালচিত্র তুলে ধরেছেন শামসুল হক শারেক। বিএনপিতে ঐক্যের সুরক্ষমতায় থাকতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ প্রচণ্ড বিরোধ ভুলে এখন কক্সবাজার জেলা বিএনপিতে শোনা যাচ্ছে ঐক্যের সুর। এক সময় মনে করা হত কক্সবাজার জেলা বিএনপিতে কোন্দল জিইয়ে রাখার জন্য সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী বর্তমান কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদের হাত আছে।
এই কোন্দলের কারণে সংঘর্ষ লাঠালাঠি ও মাথা ফাটাফাটি পর্যন্ত হয়েছিল। কিন্তু এখন তিনিই বিএনপি নেতা-কর্মীদের কাছে যাদুর কাঠি, কিংবদন্তি। বিগত সরকার বিরোধী তীব্র আন্দোলনের মাঝখানে ২০ দলের মুখপাত্র হিসেবে আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করতেন তিনি। উত্তরার একটি বাসা থেকে গুম হওয়ার দীর্ঘ তিন মাস পর ভারতের সিলং-এ জীবিত উদ্ধার হন তিনি। এতে করে এখন কক্সবাজার শুধু নয়, সারাদেশের বিএনপি নেতা-কর্মীদের কাছে কিংবদন্তি সালাহ উদ্দিন আহমদ।
জানাগেছে, ভারতের সিলং-এ অবস্থানরত সালাহ উদ্দিন আহমদের ইশারায় কক্সবাজার জেলা বিএনপিতেও ঐক্যের সুর বাজছে। দীর্ঘদিন বিএনপি নেতা-কর্মীদের মাঝে অনৈক্য থাকার সুযোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ এবং জামায়াত। বিগত উপজেলা নির্বাচনে ৩টি উপজেলায় বিএনপির প্রার্থীরা জিতেছে। অথচ এর আগে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছিল ৪টি উপজেলা চেয়ারম্যান।
বিগত উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত বনিবনা না হওয়ায় পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়ে লাভবান হয় আওয়ামী লীগ-জামায়াত। রামু উপজেলা ও মহেশখালী উপজেলায় প্রচ্ছন্নভাবে আওয়ামী লীগের সাথে বোঝাপড়া করে জামায়াত উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়ে ফাইট করেছে বলে প্রচার রয়েছে। জেলার ৪টি পৌরসভার ২টিতে আওয়ামী লীগ, একটিতে বিএনপি ও অপর একটিতে জামায়াত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে।
বিগত উপজেলা নির্বাচন ও সরকার বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্রকরে ২০ দলের শরিক হলেও বিএনপি-জামায়াতের মাঝে বিস্তর দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। জামায়াতের অভিযোগ আন্দোলনে তারা লড়াকু ভূমিকা পালন করলেও বিএনপি ছিল অনেকটা শান্তশিষ্ট। এতে জামায়াতের শত শত নেতা-কর্মী মামলা হামলার শিকার হয়েছে। তখন বিএনপি তাদের পাশে দাঁড়ায়নি।
এছাড়াও গত উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের সাথে পরামর্শ না করেই বিএনপি অনেক জায়গায় এককভাবে প্রার্থী দাঁড় করায় বলে অভিযোগ রয়েছে জামায়াতের। তবে বিএনপির বক্তব্য ভিন্ন। বিএনপি নেতাদের মতে জামায়াত নেতারা তলে তলে আওয়ামী লীগের সাথে বোঝাপড়া করে তাদের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয়। জেলা আইনজীবী সমিতির বিগত নির্বাচনেও বিএনপি-জামায়াতের দূরত্বের কারণে সভাপতি পদে বিএনপি প্রার্থী পরাজিত হয়েছে এবং জিতেছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী। দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার জেলা বিএনপির কার্যক্রম সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী ও এড. শামীম আরা স্বপনার নেতৃত্বে। অপর দিকে আরেক গ্রুপ সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজলের নেতৃত্বে পৃথকভাবে চলে আসছিল।
একই সাথে কক্সবাজার সদর-রামুতে সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ সহিদুজ্জামান (শাহজাহান চৌধুরী-স্বপ্না)’র মূল কমিটির সাথে হলেও মহেশখালী-কুতুবদিয়ায় সাবেক এমপি আলমগীর ফরিদ লুৎফুর রহমান কাজলের সাথে পৃথকভাবে বিএনপির কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। বিগত উপজেলা নির্বাচনের পর বিএনপি নেতাদের বোধোদয় হয়। তারা উপলব্ধি করতে পারে তাদের এই দলাদলির সুফল নিচ্ছে আওয়ামী লীগ-জামায়াত।
সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাচসিব সালাহ উদ্দিন আহমদ সিলং-এ উদ্ধার পাওয়ার পর থেকে কক্সবাজার জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা তার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। মূলত সালাহ উদ্দিন আহমদই সিলং থেকে কক্সবাজার বিএনপিকে সকল দলাদলি ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানাগেছে। এতে করে হতাশ বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছে।-ইনকিলাব
৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে