শনিবার, ০২ জুলাই, ২০১৬, ০৮:২৯:১০

গুলশানে নিহতদের স্মরণে দু’দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

গুলশানে নিহতদের স্মরণে দু’দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

ঢাকা : রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের স্মরণে দুদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২ জুলাই শনিবার ইফতারের পর জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঘোষণা দেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারের পাশাপাশি বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনগুলোতে একযোগে প্রধানমন্ত্রীর এ ভাষণ সম্প্রচার করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই ঘটনায় সন্ত্রাসীদের হাতে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানান তিনি।

সন্ত্রাসী, হত্যাকারী ও ইসলামের নামে নাশকতাকারীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে হত্যাকারী ও তাদের মদদদাতাদের কাছে আমি জানতে চাই- মানুষকে হত্যা করে আপনারা কী অর্জন করতে চান?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম।  মানুষকে হত্যা করে শান্তির ধর্মকে কলুষিত করবেন না। আপনারা সঠিক পথে ফিরে আসুন।  ইসলামের মর্যাদাকে সমুন্নত রাখুন।

প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সাথে বলেন, কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদের অগ্রযাত্রাকে প্রতিহত করতে পারবে না। সব ভেদাভেদ ভুলে  নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গতকাল শুক্রবার রাতে গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কে ৫নং বাসার দ্বিতীয় তলায় হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা চালায় কয়েক অস্ত্রধারী।  রেস্টুরেন্টে প্রবেশের সময় তারা বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটায় এবং গুলি চালায়।  এসময় পুলিশের সঙ্গে গুলিবিনিময় হয়।

ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন, ডিবির এসি রবিউল ইসলাম, পুলিশের দুই কনস্টেবল, একজন মাইক্রোবাসচালকসহ ২০ জনের বেশি।

গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান ওসি সালাউদ্দিন এবং এসি রবিউল।

গুলশান এ হামলায় মোট নিহতের সংখ্যা ২৮ জনে দাঁড়িয়েছে।  এর মধ্যে হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে অভিযান শেষে শনিবার সকালে ২০ বিদেশির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে এবং কমান্ডো অভিযানে নিহত হয়েছে ৬ জঙ্গি।

শুক্রবার দিবাগদ রাতে জঙ্গিদের গুলি ও বোমার আঘাতে ২ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।  একজন সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়েছে।  এ ঘটনায় ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।

এর মধ্যে একজন জাপানি ও ২ জন শ্রীলঙ্কান নাগরিক রয়েছেন।  আইএসপিআর এ তথ্য জানিয়েছে।

সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, জিম্মি সংকট অবসানে রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে 'অপারেশন থান্ডারবোল্ট' পরিচালনা করা হয়।

শনিবার সকালের এ অভিযানের পর ২০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।  তাদের সবাই বিদেশি এবং অভিযানের আগেই তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলাকেটে হত্যা করা হয়।  মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য সিএমএইচে পাঠানো হয়েছে।

তিনি জানান, অভিযানের সময় ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।  তাদের মধ্যে তিনজন বিদেশি নাগরিক।  এর মধ্যে দুজন শ্রীলঙ্কার ও একজন জাপানের নাগরিক।  তবে চূড়ান্ত অভিযানে অংশগ্রহণকারী কোনো কমান্ডো আহত হননি।

অভিযান চলাকালীন সময়ে ৬ হামলাকারী নিহত হয় এবং সন্দেহভাজন একজনকে আটক করা হয়। শুক্রবার রাতে নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তা, জিম্মি ও হামলাকারী মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা ২৮ বলে জানা গেছে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী  জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই এ অভিযান চালানো হয়।  সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে অভিযানে অংশ নেয় নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।

সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে অপরাশেন থান্ডারবোল্ট শুরু হয়।  ১২ থেকে ১৩ মিনিটের মধ্যেই যৌথবাহিনী দুষ্কৃতকারীদের নির্মূল করতে সক্ষম হয়।  সাড়ে ৮টায় পুরো অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
২ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে