শনিবার, ০২ জুলাই, ২০১৬, ০৯:৪০:২৩

‘নবজাতককে নিয়ে খাটের নিচে রাত কাটিয়েছি’

‘নবজাতককে নিয়ে খাটের নিচে রাত কাটিয়েছি’

ঢাকা : শুক্রবার গুলশানে রাত কেটেছে আতঙ্কে।  হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টের পাশে অবস্থিত লেক ভিউ ক্লিনিকের রোগীরাও ছিলেন শঙ্কায়।  রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওই রেস্টুরেন্টে হামলার পর থেকেই প্রায় সারা রাত গোলাগুলি আর গ্রেনেড বিস্ফোরণ হয়।

এসময় এক নবজাতককে নিয়ে সেখানে আটকা পড়েন এক দম্পতি।  গোলাগুলি, বোমা ও গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তারা।  ওই দম্পতি নবজাতককে নিয়ে খাটের নিচে রাত কাটিয়েছেন।

ওই দম্পতি জানান, বুধবার নবজাতকের জন্ম হয়। শুক্রবার হাসপাতাল থেকে চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাতে গুলির শব্দ পেয়ে আর যাওয়া হয়নি। পরিস্থিতি এত খারাপ হবে বুঝতে পারিনি।  

তারা জানান, খাটের নিচে শুয়ে রাতভর দোয়া-দরুদ পড়েছি।  এদিকে সকাল ১০টা থেকে সবাইকে হাসপাতাল ছাড়তে বলে লেক ভিউ ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। ক্লিনিক ছেড়ে যাওয়া রোগীদের চোখে-মুখে ছিল আতঙ্কের ছাপ।

শুক্রবার রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে ৬-৭ জন বন্দুকধারী সন্ত্রাসী ঢাকার গুলশান এলাকার হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে।

উল্লেখ্য, গতকাল শুক্রবার রাতে গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কে ৫নং বাসার দ্বিতীয় তলায় হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা চালায় কয়েক অস্ত্রধারী।  রেস্টুরেন্টে প্রবেশের সময় তারা বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটায় এবং গুলি চালায়।  এসময় পুলিশের সঙ্গে গুলিবিনিময় হয়।

ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন, ডিবির এসি রবিউল ইসলাম, পুলিশের দুই কনস্টেবল, একজন মাইক্রোবাসচালকসহ ২০ জনের বেশি।

গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান ওসি সালাউদ্দিন এবং এসি রবিউল।

গুলশান এ হামলায় মোট নিহতের সংখ্যা ২৮ জনে দাঁড়িয়েছে।  এর মধ্যে হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে অভিযান শেষে শনিবার সকালে ২০ বিদেশির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে এবং কমান্ডো অভিযানে নিহত হয়েছে ৬ জঙ্গি।  আটক করা হয়েছে একজনকে।

শুক্রবার দিবাগত রাতে জঙ্গিদের গুলি ও বোমার আঘাতে ২ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।  একজন সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়েছে।  এ ঘটনায় ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।

এর মধ্যে একজন জাপানি ও ২ জন শ্রীলঙ্কান নাগরিক রয়েছেন।  আইএসপিআর এ তথ্য জানিয়েছে।

সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, জিম্মি সংকট অবসানে রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে 'অপারেশন থান্ডারবোল্ট' পরিচালনা করা হয়।

শনিবার সকালের এ অভিযানের পর ২০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।  তাদের সবাই বিদেশি এবং অভিযানের আগেই তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলাকেটে হত্যা করা হয়।  মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য সিএমএইচে পাঠানো হয়েছে।

তিনি জানান, অভিযানের সময় ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।  তাদের মধ্যে তিনজন বিদেশি নাগরিক।  এর মধ্যে দুজন শ্রীলঙ্কার ও একজন জাপানের নাগরিক।  তবে চূড়ান্ত অভিযানে অংশগ্রহণকারী কোনো কমান্ডো আহত হননি।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী  জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই এ অভিযান চালানো হয়।  সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে অভিযানে অংশ নেয় নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।

সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে অপরাশেন থান্ডারবোল্ট শুরু হয়।  ১২ থেকে ১৩ মিনিটের মধ্যেই যৌথবাহিনী দুষ্কৃতকারীদের নির্মূল করতে সক্ষম হয়।  সাড়ে ৮টায় পুরো অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
২ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে