শনিবার, ০২ জুলাই, ২০১৬, ১০:৩৫:২২

যারা এটি পারেনি তাদেরকেই হত্যা করে জঙ্গিরা

 যারা এটি পারেনি তাদেরকেই হত্যা করে জঙ্গিরা

ঢাকা : গুলশান ২ নম্বরের হলি আর্টিসান বেকারি নামের রেস্টুরেন্ট থেকে শনিবার উদ্ধার করা হয় ২০ বিদেশির মরদেহ। এর মধ্যে নয়জনই ইতালির এবং সাতজন জাপানের নাগরিক। কমান্ডো অভিযানে ওই সময় ১৩ জিম্মিকে জীবিতও উদ্ধার করা হয়েছে। এদের একজন হাসনাত করিম। তিনি বেঁচে এসেছেন সপরিবারে।

হাসনাত করিমের বরাত দিয়ে তার বাবা এন আর করিম জানান, সন্ত্রাসীরা অমুসলিম জিম্মিদের ধরে ধরে হত্যা করেছে। তবে হাসনাত করিমের স্ত্রী শারমিন পারভীন হিজাব পরায় জঙ্গিরা খুব খুশি হয়েছে। তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি তারা। রাতে তাদের সেহেরিও খেতে দিয়েছিল জঙ্গিরা।

ছেলে রায়ান করিমের জন্মদিন উপলক্ষে ওই রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলেন হাসনাত। সঙ্গে ছিল মেয়ে সাফা করিম ও স্ত্রী শারমিন পারভীন।

ছেলের বরাত দিয়ে এন আর করিম আরো জানান, বিদেশিদের প্রত্যেককে সুরা বলতে বলে জঙ্গিরা। যারা তা পারেননি তাদেরকেই গলা কেটে হত্যা করা হয়। রাত ১১টার মধ্যেই বিদেশিদের হত্যা করেছিল জঙ্গিরা।

তবে বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে কোনো খারাপ ব্যবহারই করেনি জঙ্গিরা। তাদের প্রত্যেককে রাতের খাবারও খেতে দেয়া হয়। তাদের হাতে ধারালো অস্ত্র, স্বয়ংক্রিয় রাইফেল এবং প্রচুর বিস্ফোরক ছিল।

এদিকে সত্যপাল নামে এক ভারতীয় চিকিৎসকও রেস্টুরেন্টে ছিলেন বলে জানা গেছে। কিন্তু তিনি বাংলায় খুব স্বাচ্ছন্দেই কথা বলতে পারেন। কথোপকথন শুনে তাকে বাংলাদেশি বলে ভুল করেছিল জঙ্গিরা। এমনকি তাকে মুসলিম ভেবেও খুন করা হয়নি। বাংলাদেশের সেনা তাকে অন্য ১২ জনের সঙ্গে উদ্ধার করে।

যদিও ওই হামলায় সুরা বলতে না পারায় নিহত হয়েছেন আরেক ভারতীয় তরুণী। তারাশি জৈন (১৯) নামের ওই তরুণী যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়ন করছিলেন। তার বাবা গত ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে বাংলাদেশে গার্মেন্টস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তারাশি ছুটিতে ঢাকায় এসে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছিলেন।

শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে হলি আর্টিসানে হামলা করে কয়েকজন অস্ত্রধারী। এসময় তারা বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে রেস্টুরেন্টের অবস্থানকারীদের জিম্মি করে। সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হওয়ার পাশাপাশি আহত হয়েছেন কিছু সংখ্যক পুলিশ সদস্য।

শনিবার সকালের দিকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানানো হয়। অভিযানে সেনা সদস্যদের সঙ্গে অংশ নেয় নৌবাহিনীর কমান্ডো, বিজিবি, পুলিশ ও র‍্যাবের বিশেষ বাহিনী। এখনও ঘটনাস্থলটি ঘিরে রেখেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা।

‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ নামের সমন্বিত এই অভিযান সকালে ৭টা ৪০ মিনিটে শুরু হয়ে সকাল সাড়ে ৮টায় শেষ হয় বলে জানান সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘প্যারা কমান্ডোরা ৭টা ৪০ মিনিটে অপারেশন শুরু হয়। ১২ থেকে ১৩ মিনিটের মধ্যে সব অপরাধীকে নির্মূল করে সকাল সাড়ে ৮টায় অভিযানের সফল সমাপ্তি ঘটে।’

এদিকে আইএস’র পক্ষ থেকে হামলার দায় স্বীকার করা হলেও তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে সেনা ও গোয়েন্দাদের। মনে করা হচ্ছে, অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে স্থানীয় মৌলবাদীরাই এ হামলা চালাচ্ছে। যদিও আইএস এক টুইটার বার্তায় নিহত হামলাকারীদের ছবি প্রকাশ করেছে।-বাংলামেইল
২ জুলাই ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে