রবিবার, ০৩ জুলাই, ২০১৬, ১২:৫৮:১৩

গুলশানে হামলা: আতঙ্কের এক রাত

গুলশানে হামলা: আতঙ্কের এক রাত

মিজানুর রহমান, নূরুজ্জামান লাবু ও রুদ্র মিজান: রক্তাক্ত বাংলাদেশ। আতঙ্কের এক রাত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষা। ইতিহাসের ভয়াবহ জঙ্গি হামলা। উগ্রপন্থিদের হামলায় ২২ জনের মৃত্যু। যাদের ১৭ জন বিদেশি নাগরিক। দুজন পুলিশ কর্মকর্তা আর তিনজন বাংলাদেশি সাধারণ নাগরিক। এমন ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশ আগে কখনও দেখেনি। শুক্রবার রাতের প্রথম প্রহরেই পাওয়া যায় আচমকা খবর। ভয়ঙ্কর এক রাতের শুরু। আতঙ্ক। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় দেশি-বিদেশি অন্তত ৩৫ ব্যক্তিকে জিম্মি করে একদল অস্ত্রধারী। ভয়ঙ্কর এ ঘটনায় মুহূর্তে সারা দুনিয়ার দৃষ্টি ফিরে ঢাকার দিকে। রাতভর আতঙ্ক। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। দফায় দফায় বৈঠক। কীভাবে চালানো হবে অভিযান? কীভাবে বাঁচানো যায় জিম্মি হওয়া ব্যক্তিদের। মাঝ রাতে আইএসের কথিত মিডিয়া আমাক থেকে দাবি করা হয়েছিল বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এমন বার্তা আসার পর থেকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আরও বেড়ে যায়।

রাতভর প্রস্তুতির পর সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে চলে কমান্ডো অভিযান। অপারেশন থান্ডারবোল্ট। অপারেশনে নিহত হয় ৬ জঙ্গি। আটক করা হয় সন্দেহভাজন একজনকে। ১৩-১৪ মিনিটেই রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন সেনা কমান্ডোরা। অভিযানের সময় জীবিত উদ্ধার করা হয় ১৩ জনকে। তারা বেরিয়ে আসেন একে একে। দুপুরের পর সংবাদ সম্মেলন করে আইএসপিআর জানায়, উদ্ধার করা হয়েছে ২০ মৃতদেহ। রাতেই তাদের হত্যা করা হয়েছিল। বেশির ভাগকেই হত্যা করা হয় জবাই করে। যদিও জঙ্গিদের হাতে ছিল অত্যাধুনিক অস্ত্র। রাতে আইএসপিআর থেকে নিশ্চিত করা হয়, নিহতদের মধ্যে নয়জন ইতালিয়ান, ৭ জন জাপানি এবং ভারতের নাগরিক একজন। আর বাংলাদেশি নাগরিক তিনজন।


এদিকে খোদ ঢাকার কূটনৈতিকপাড়া গুলশানে এমন হামলা ও জিম্মি ঘটনার পর থেকেই সারা বিশ্বের চোখ পড়ে ঢাকায়। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মিডিয়া বিষয়টি রাতভর প্রচার করতে থাকে। জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজে আবে আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে দেশের এই দুঃসময়ে পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাতে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘটনায় নিহতদের স্মরণে দুদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন। এছাড়া এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে দেশবাসীর সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি। ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা।


ঘটনা প্রবাহ: শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের লেকভিউ ক্লিনিক সংলগ্ন হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলা চালায় অন্তত ছয় সদস্যের একটি জঙ্গি দল। তারা রেস্তোরাঁর ভেতরে ঢুকেই সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলে। ভেতর থেকে জিম্মি হওয়া ব্যক্তিরা তাদের স্বজনদের জানায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় পুলিশ। এরপর থেকেই শুরু হয় শ্বাসরুদ্ধকর প্রতিটি মুহূর্ত। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত হন ঘটনাস্থলে। গুলশানের আশপাশের প্রতিটি থানা ও পিওএম থেকে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়। তাৎক্ষণিক ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও র‌্যাবের ডিজি বেনজির আহমেদের নেতৃত্বে অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়। ফোর্স নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা এগিয়ে যান হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁর সামনে।

রাত তখন সাড়ে ১০টা পেরিয়েছে। ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু মুহূর্তেই ভেতর থাকা জঙ্গিরা পাল্টা আঘাত হানে। গ্রেনেড চার্জ করে পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে। এতে পুলিশের দুই কর্মকর্তা মারাত্মক আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। বাকিরা কৌশলগত কারণে গুলি করতে করতে পিছিয়ে আসেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তারাই আহত হন গ্রেনেডের স্প্লিন্টারে। আহতদের নিয়ে ফিরে আসে পুলিশ সদস্যরা। বুঝতে পারে জঙ্গিরা শক্ত হাতে হামলা চালিয়েছে। এরপরই মূলত শুরু শ্বাসরুদ্ধকর মুর্হূত। পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্টরা জানান, জঙ্গি হামলায় আহতদের নেয়া হয় বিভিন্ন হাসপাতালে। পুলিশ কর্মকর্তারা জিম্মিদের উদ্ধারের কৌশল নিয়ে বসেন আলোচনায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি দিয়ে পুরো এলাকা ভরে যায়। আনা হয় চারটি আর্মড পার্সোনাল ক্যারিয়ার- এপিসি।

ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম প্রস্তুত হয়ে থাকে চারদিকেই। এর আগে থেকেই পুরো গুলশান এলাকায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করেন। সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে। ডেকে পাঠানো হয় সেনাবাহিনীকে। সেনাবাহিনী তাদের চৌকস প্যারা কমান্ডোকে খবর দেয়। মধ্যরাতে সিলেট থেকে তারা এসে পৌঁছায় ঢাকায়। এর আগেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় নৌবাহিনীর প্যারা কমান্ডোর অপর একটি দল। রাতের গুলশান তখন নীরব আর নিস্তদ্ধ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাকধারী আর সাদা পোশাকের লোকজন তখন গিজগিজ করছে। বাসাটিকে চারদিক থেকে কর্ডন করে রাখা হয় ঘটনা শুরুর পর থেকেই। প্রস্তুতি নিয়ে একাধিকবার রেকি করার চেষ্টা করে পুলিশের সোয়াত টিম।

একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয় ভোরের আলোয় অভিযানের। ততক্ষণে চলতে থাকে প্রস্তুতি। রেস্তোরাঁর পেছনের লেকে টহল দিতে থাকে নৌবাহিনীর বিশেষ দল। অবশেষে ভোরের আলো ফোটার পর সকাল সাড়ে ৭টায় শুরু হয় মূল অভিযান। প্যারা কমান্ডোর সদস্যরা উপস্থিত হন তার মিনিট কয়েক আগেই। সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছে যায় সেনাবাহিনীর অন্তত ৯টি সাঁজোয়া যান। সকাল ঠিক সাড়ে ৭টায় প্যারা কমান্ডোরা শুরু করেন ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’। তারপর থেকেই আসতে থাকে মুহুর্মুহু গুলি আর গ্রেনেড-বোমার শব্দ। পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে যায় শব্দে। টানা পৌনে ঘণ্টা ধরে থেমে থেমে চলতে থাকে অভিযান। তারপর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শেষ হয় অভিযান। এর আগেই ভেতর থেকে একে বের করে আনা হয় জিম্মি হওয়া ১৩ নারী-পুরুষ ও শিশুকে।

এদের মধ্যে একজন বিদেশি নাগরিককে দেখা যায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায়। দ্রুত তাদের পাঠানো হয় হাসপাতালে। সুস্থদের নিয়ে রাখা হয় পাশের এক বাসায়। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের সঙ্গে কথা বলেন। সকাল ৯টার পর তিন বাহিনীর প্রধান ও পুলিশের আইজিপি, র‌্যাবের ডিজি, পুলিশ কমিশনারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেন ঘটনাস্থল। তারা বের হওয়ার পর শুরু হয় রেস্তোরাঁর ভেতর থেকে লাশ উদ্ধারের কাজ। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে রেস্তোরাঁ থেকে একে একে বের করে আনা হয় ২০টি লাশ। সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয় লাশগুলো। কাপড়ে রক্তের দাগ। দুজন মহিলা লাশের কাপড় সরিয়ে জিম্মি হওয়া স্বজন শনাক্তের চেষ্টা করছিলেন। পরে ১৩টি অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশগুলো নেয়া হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। সেখানেই পরিচয় শনাক্ত ও ময়নাতদন্তের কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।


শ্বাসরুদ্ধকর এক রাত:
ঢাকার ইতিহাসে প্রথম এই জঙ্গি হামলা ও জিম্মির ঘটনাটি ছিল টক অব দ্য কান্ট্রি। গোটা দেশবাসী রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা নিয়ে বসে ছিল কিভাবে জিম্মিদের উদ্ধার করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাত সাড়ে ১০টার দিকে অপারেশনে গিয়ে পুলিশ হামলার শিকার হওয়ার পরই পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নেয়। নানা রকম খবর আসতে থেকে চারদিক থেকে। পুলিশের পক্ষ থেকে জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। জিম্মিদের বাঁচিয়ে রাখতেই মূলত কৌশল নির্ধারণের জন্য দফায় দফায় বৈঠকে বসেন। কিন্তু তারা বুঝতে পারছিলেন না জিম্মিদের হত্যা করা হয়েছে নাকি তারা বেঁচে আছেন। ঘটনার পরপরই রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে আসা মামুন নামে এক ওয়েটারের কাছ থেকে জঙ্গিদের বর্ণনা, অস্ত্র সম্পর্কে ধারণা আর রেস্তোরাঁর অবস্থান নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন।

পরে পুরো রেস্তোরাঁ ম্যাপ আঁকা হয়। তারপর ঊর্ধ্বতনরা বসে সেটি নিয়ে পর্যালোচনা করতে থাকেন। কোন দিক দিয়ে অভিযান শুরু করলে ভালো হবে তা নিয়ে চলতে থাকে আলোচনা। কিন্তু রাত ১০টার পর থেকে প্রতিটি মুহূর্তই যেন যাচ্ছিল আতঙ্কের মধ্যদিয়ে। এভাবেই এক সময় সেহরির সময় হয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মীরা সেহরি খাওয়া সম্পন্ন করেন। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে মাইক নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন গুলশানের ডিসি মোস্তাক আহমেদ। তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়া বাকিদের দূরে সরিয়ে দেন। গণমাধ্যমকর্মীদের পাঠিয়ে দেয়া হয় দূরে। ব্যারিকেড দিয়ে কড়া পুলিশ প্রহরা বসানো হয়। ভেতরে ভেতরে চলতে থাকে প্রস্তুতি। আর দেশবাসী অপেক্ষা করতে থাকে উৎকণ্ঠা নিয়ে। কী হবে অপারেশনের ফল। জীবিত অবস্থায় সবাইকে উদ্ধার করা যাবে তো? এই প্রশ্ন সবার মনে। ঘুমহীন রাত কাটায় সবাই।

এক পর্যায়ে অভিযান শুরু হলে যখন ১৩ জনকে বের করে আনা হয় তখন বাইরে থাকা সবাই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। কিন্তু ভেতরে অপেক্ষা করছিল ভয়াবহ বীভৎসতা। অভিযান শেষে যখন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ওই রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করেন তখন সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। বিশ জনের রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে ফ্লোরে। আর ছয় অপরাধীর লাশ পড়ে ছিল রেস্তোরাঁর প্রবেশের পথে। অভিযান শুরুর পর হামলাকারীরা অস্ত্র তাক করে রেস্তোরাঁ থেকে বের হয়ে এসেছিল। কমান্ডোদের গুলি শুরু হলে তারাও পাল্টা গুলি চালায়। তবে সম্মিলিত আক্রমণে তারা অল্প সময়েই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

 ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন: জিম্মিদের উদ্ধার অভিযানের সময় মোবাইল ইন্টারনেটসহ সব ধরনের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। বিশেষ করে সকালে সেনা কমান্ডোদের অপারেশন থান্ডারবোল্ট পরিচালনার কিছুক্ষণ আগে থেকে হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তরাঁ এলাকায় এ উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে অপারেশনের স্বার্থে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন করা হয়নি। অভিযানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা বলেন, সন্ত্রাসীরা ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে যেন কোনো ধরনের বাড়তি সুবিধা নিতে না পারে সেজন্য এ উদ্যোগ নেয়া হয়।

নিহতদের মধ্যে ১৭ জন বিদেশি নাগরিক:  হামলার ঘটনায় নিহত ২০ জনের মধ্যে ১৭ জন বিদেশি নাগরিক বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর আইএসপিআর। এর মধ্যে নয়জন ইতালির নাগরিক, সাতজন জাপানি এবং একজন ভারতীয়। অন্য তিনজন বাংলাদেশি। সেনাবাহিনীর প্রভোস্ট মার্শাল সূত্রে জানা গেছে, তিনজন বাংলাদেশির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। এরা হলেন ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজ হোসেন, ডেএক্সওয়াই ইন্টারন্যাশনালের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক ইশরাত আখন্দ ও সুপারস্টোর ল্যাভেন্ডারের মালিক মনজুর মোরশেদের নাতনি অবিন্তা কবীর। গতকাল দুপুরে সার্বিক বিষয়ে সেনাসদরের অফিসার্স মেসে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিং করেন মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী।


‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ সম্পর্কে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী বলেন, ১২-১৩ মিনিটের মধ্যেই সকল সন্ত্রাসীকে নির্মূল করে ওই এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে অপারেশনের অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ করে সকাল সাড়ে ৮টায় অভিযানের সফল সমাপ্তি ঘটে। এই কমান্ডো অভিযানের মাধ্যমে তিন বিদেশি নাগরিকসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয় বলে জানান তিনি। উদ্ধার হওয়া বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে একজন জাপানি ও দুইজন শ্রীলঙ্কান। সূত্রমতে, জাপানি ওই নাগরিকের নাম তামাংকি ওতানবি। তিনি টকিওর একটি কনস্ট্রাকশন প্রকল্পে কাজ করতেন। অভিযানে নিহতদের প্রসঙ্গে নাঈম আশফাক চৌধুরী বলেন, অভিযানে ছয় সন্ত্রাসী নিহত হয়। একজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এছাড়াও অভিযান শেষে তল্লাশিকালে ২০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী বলেন, তাদের সবাইকে গত রাতেই হত্যা করা হয়। অধিকাংশকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান মিলিটারি অপারেশন্সের এই পরিচালক। ঘটনাস্থল থেকে সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত চারটি পিস্তল, একটি ফোল্ডেড বাট একে-২২, চারটি আইইডি, একটি ওয়াকিটকি সেট ও ধারালো দেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। কমান্ডো অভিযানে অংশগ্রহণকারী কেউ হতাহত হননি বলে জানানো হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়নি। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হতে প্রভোস্ট মার্শালের সঙ্গে ০১৭৬৯০১২৫২৪ নম্বরে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করেন ব্রিগেডিয়ার আশফাক। অভিযান শেষে সকালে ১৩টি অ্যাম্বুলেন্সে নিহতদের লাশ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনী ছাড়াও পুলিশ ও র‌্যাবের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


রবি ও সোমবার রাষ্ট্রীয় শোক:  ঘটনায় নিহতদের স্মরণে আগামী রবি ও সোমবার দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হবে। জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোন: ডিপ্লোমেটিক জোনে জঙ্গি হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীকে ফোন করেছেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। নৃশংস ওই আক্রমণে অন্তত ৭ জাপানি নিহত হয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, দুপুর ১২টার দিকে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি তার নিন্দা, উদ্বেগ ও সমবেদনা জানান। কর্মকর্তারা জানান, জাপান সরকার তাদের নাগরিকদের মৃতদেহ যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে।


ইইউ’র নিন্দা: ইউরোপিয়ান কমিশনের হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ  ফেডেরিকা মোঘেরিনি এক বার্তায় বলেন, গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকায় কয়েকজন ইউরোপিয়ানসহ বাংলাদেশি ও বিদেশি নাগরিক আহত ও নিহত হন এবং এটি সারা বিশ্বের  জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক ঝুঁকি এবং আন্তর্জাতিক সমাজকে একসঙ্গে এটি মোকাবিলা করতে হবে। ওই বার্তায় আরো বলা হয়, আমি ইতালিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাওলো  জেন্টিলোনির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং বাংলাদেশে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন দূতাবাসকে ইতালিয়ান দূতাবাসকে সর্ব তো সহায়তা করতে বলেছি। আজকের এ দিনে আমরা বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি, যারা এ আক্রমণের শিকার।-এমজমিন

৩ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে