রবিবার, ০৩ জুলাই, ২০১৬, ০১:১৮:৪৪

গ্রেনেড বিস্ফোরণের পরই টনক নড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর

গ্রেনেড বিস্ফোরণের পরই টনক নড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর

নিউজ ডেস্ক : শুক্রবার রাতে হলি আর্টিসেন রেস্টুরেন্টে হামলা ও জিম্মি করা দেশি-বিদেশি নাগরিকদের উদ্ধারে অংশ নেয়া ডিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, রেস্টুরেন্টে খেতে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে এক বাংলাদেশি শুক্রবার রাত সোয়া ৯ টার দিকে গুলশান থানায় দায়িত্বরত এক আত্মীয় পুলিশ সদস্যকে ফোন করে বলেন, ‘বন্দুক নিয়ে ৮/১০ জন যুবক এখানে (আর্টিসান রেস্টুরেন্ট) ঢুকে সবাইকে জিম্মি করেছে। আমাদের মেরে ফেলবে। আমাদের বাঁচান।’

এই খবর শোনার পরপরই গুলশান থানা থেকে মাত্র একটি মোবাইল টিম পাঠানো হয় ঘটনাস্থলে। ওই টিমে একজন এসআইয়ের নেতৃত্বে কয়েকজন মাত্র কনস্টেবল ছিলেন। তারা রেস্টুরেন্টের বাইরে মোটর সাইকেল থেকে নেমে হেঁটে রেস্টুরেন্টের ঢুকার জন্য মূল রাস্তার ফটকে যান। পরে সেখানে ঢুকতেই ভেতর থেকে পুলিশ সদস্যদের পা লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়।

ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের হামলায় ২/৩ জন গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দ্রুত বিষয়টি জানানো হয়। পুলিশ সদস্যের উপর সন্ত্রাসী হামলার খবরে ঘটনাস্থলে গুলশান বিভাগের ডিসি, গুলশান ও বনানী থানার ওসিসহ অর্ধশত সদস্য উপস্থিত হন। তখনই খবর দেয়া হয় ডিএমপি’র সোয়াট টিমকে। তখন সোয়াটের একটি টিম ঘটনাস্থলে আসে। খবর পেয়ে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও আসে। প্রথমে পর্যালোচনায় করে তারা কিভাবে ভেতরে প্রবেশ করবে।

আলোচনার পর সোয়াট ও গুলশান থানা পুলিশ ভেতরে ঢুকে রেস্টুরেন্টের গণ্ডির ভেতরে ঘাসের উপরে গ্রেনেড দেখতে পান। তা পরিত্যক্ত কিনা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না। কয়েক সেকেন্ডের চিন্তার দোলাচলের মধ্যেই হঠাৎ ওই গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হয়। এসময় সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

কিন্তু অবস্থা বেগতিক হয় যখন একই সময়ে দ্বিতীয়তলা থেকে আরেকটা গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। পাশাপাশি রেস্টুরেন্টের নিচে হামলাকারীদের মধ্য থেকে কয়েকজন আল্লাহু আকবার বলে গুলি ছোড়তে থাকে।

ওই সময়ই দেখা যায় ঊর্ধ্বতন কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত অবস্থায় পড়ে আছেন। তাদের সরিয়ে নেয়া হয়। ওই সময়ই বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন ও ডিবির সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম গ্রেনেডের স্প্রিন্টারে বিদ্ধ হন।

গ্রেনেড বিস্ফোরণের আগ পর্যন্ত ডিএমপির একটি মাত্র সোয়াট টিম ও গুলশান থানা পুলিশ সেখানে ছিল। গ্রেনেড বিস্ফোরণে বেশ কয়েকজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় সরিয়ে নেয়ার পরই মূলত টনক নড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।   

এরপরই ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, বেনজীর আহমেদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। শুরু হয় পরবর্তী অভিযানের পরিকল্পনা। ঘটনার গুরুত্ব বুঝিয়ে যোগাযোগ করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। তখনই সেনাবাহিনীর কমান্ডো টিম দিয়ে অপারেশন চালানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে শুক্রবার রাতে হামলার ঘণ্টা কয়েক পরই দায় স্বীকার করে আইএস।  আমাক-এর বরাত দিয়ে এমন তথ্যই জানায় মার্কিন ওয়েবসাইট ইন্টেলিজেন্স।  ২০ জনকে হত্যার কথাও উল্লেখ করা হয় তাতে। শনিবার সকালে যৌথবাহিনির অভিযানে ঠিক ২০ জনের মৃতদেহই উদ্ধার করা হয়।

সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন অভিযানে ৬ সন্ত্রাসী নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।  এ ঘটনায় মোট নিহদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ জন।

এদিকে মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে সেনা কমান্ডোর নেতৃত্বে পরিচালিত যৌথ অভিযানে নিহত ৬ জঙ্গির সবাই বাংলাদেশি।  এর মধ্যে পাঁচজন পুলিশের তালিকাভুক্ত ছিল।  এদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজা হচ্ছিল বলে জানান তিনি।

২ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে