রবিবার, ০৩ জুলাই, ২০১৬, ০২:০৪:৫২

‘কিছু বোঝার আগেই সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়’

‘কিছু বোঝার আগেই সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়’

রোকনুজ্জামান পিয়াস: গুলশান থানার এডিসি আবদুল আহাদ। নিয়ম করে রাত ১২টার দিকেই অফিস থেকে বের হন প্রতিদিন। শুক্রবারও ইফতারির পর অফিসেই অবস্থান করছিলেন। এরই মধ্যে খবর এলো ৭৯নং রোডের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলার। কালবিলম্ব না করেই পাঁচ মিনিটেই ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান তিনি। রেস্টুরেন্টটির সামনে অবস্থান নেন। জিম্মিদের উদ্ধার করতে ভেতরে ঢোকার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা। কিন্তু ভেতরে ঢোকার আগেই সন্ত্রাসীরা তাদের লক্ষ্য করে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে তিনিসহ আহত হন বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। গতকাল হাসপাতালে ওই এলাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এডিসি আহাদ এভাবেই প্রাথমিক ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি একটি হাত এবং দুই পায়ে স্পিন্টার বিদ্ধ হয়েছেন। ঘটনার সময় দুজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তার মতো ৩৫ জন বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তা হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যার মধ্যে সোয়াট টিমের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও রয়েছেন। এদিকে এ ঘটনা শোনার পর হাসপাতালটিতে ভিড় করেছেন আহত পুলিশ কর্মকর্তাদের স্বজনরা। দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন তারা। হাসপাতাল সূত্র জানায়, আহতদের বেশিরভাগই রাত ১২টার পরে আসেন। কয়েকজন রাত সাড়ে ৩টার দিকে এসেছেন। আবার কেউ কেউ সকালে এসে হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছেন। দু’একজনের অবস্থা ওই সময় গুরুতর হওয়ায় তাদের আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তাদের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে।

হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, তারা সবাই এখন আশঙ্কামুক্ত। পুলিশ কর্মকর্তারা হাসপাতালের দ্বিতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম এবং ষষ্ঠ তলায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, এ-২০১ নং কক্ষের (আইসিইউ) পাশে ওয়েটিং রুমে অন্তত ২০-২৫ জন অবস্থান করছিলেন। তাদের চেহারায় আতঙ্কের ছাপ। কেউ দোয়া-দরুদ পড়ছিলেন। খুব সকালেই নেত্রকোনা থেকে ছুটে আসেন এডিসি আবদুল আহাদের বৃদ্ধা মা। তখনও তার সন্তান আইসিইউতে। আশপাশের লোকজন তাকে সান্তনা দিচ্ছিলেন। বৃদ্ধা  মায়ের সঙ্গে ছুটে এসেছেন তার পরিবারের অন্য স্বজনরাও। দুপুরে কথা হয় গ্রেনেডের স্পিন্টারে আঘাতপ্রাপ্ত এসআই সুজন কু-ুর মেজো ভাই অতুল কু-ুর সঙ্গে।

তিনি জানান, ভাইয়ের আঘাত পাওয়ার সংবাদ শুনে তিনিসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা ছুটে এসেছেন। কিন্তু এখনো দেখা করতে পারেননি। ওই সময় তার অপারেশন চলছিল। তিনি জানান, সুজনের সারা শরীর ও মাথায় স্পিøন্টার বিদ্ধ হয়েছে। তাদের গ্রামের বাড়ি পাবনার সাঁথিয়ায়। গুলশান থানার এসআই খালিদ চিকিৎসা নিচ্ছিলেন জেনারেল ইউনিটে। তার এক স্বজন জানান, তিনি বাম হাত, কোমর ও রানে গ্রেনেডের স্পিøন্টার বিদ্ধ হয়েছেন।

আইসিইউ থেকে দুপুরের পর এডিসি আবদুল আহাদকে স্থানান্তর করা হয় ৫১৩নং কেবিনে। সেখানে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি নিয়মিতই রাত ১২টার দিকে বাসায় ফিরি। ওইদিনও অফিসেই অবস্থান করছিলাম। এরপর এই ঘটনা শোনার পর ফোর্স নিয়ে ৫-৭ মিনিটের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। সেখানে অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। এ সময় ভেতর থেকে সন্ত্রাসীরা তাদের লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়ে মারে। এতে তিনিসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। তিনি একহাতে এবং দুই পায়ে গ্রেনেডের স্পিøন্টার বিদ্ধ হয়েছেন।-এমজমিন

৩ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে