ঢাকা : শুক্রবার দুই বাংলাদেশি বন্ধুকে নিয়ে হোলি আর্টিজান বেকারির রেস্টুরেন্টে ডিনার করতে গিয়েছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত তরুণী তারিশি। ইউনিভার্সিটির ছুটিতে আমেরিকা থেকে ঢাকা এসেছিলেন তিনি।
পরিকল্পনা ছিল বাবা, মা, দাদাকে সঙ্গে নিয়ে ক’টা দিন কাটিয়ে যাবেন উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদের পারিবারিক ভিটেতে। তারপরই তারিশির আবার ঢাকা হয়ে আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার কথা ছিল।
বাবা সঞ্জীব জৈন বাংলাদেশে গত ২০ বছরে ধরে জামা-কাপড়ের ব্যবসা করছেন। এ সুবাদে স্ত্রী তুলিকাকে নিয়ে ঢাকাতেই বসবাস তার।
তারিশির বড় ভাই সঞ্চিত ঘটনার একদিন আগে অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার কানাডা থেকে দিল্লিতে পৌঁছেন। কিন্তু বাবা-মা ও ভাইয়ের সঙ্গে তারিশির আর ফিরোজাবাদের ভিটেবাড়িতে যাওয়া হয়ে উঠল না।
আর কোননোদিন যাওয়াও হবে না তার। শনিবার ভোরের দিকের কোনো এক সময়ে তাকে গলা কেটে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
খুন হওয়ার আগে আরিশি শেষ ফোনটা করেছিলেন তার বাবাকে। শনিবার ভোর ছ’টার কিছুক্ষণ আগে। শুক্রবার রাত থেকে পণবন্দি হয়ে ছিলেন রেস্টুরেন্টে।
বেশ কয়েক ঘণ্টা কেটে গেছে। রাতেই বেশ কয়েকজনকে মেরে ফেলেছে জঙ্গিরা। দম বন্ধ হয়ে থাকা আতঙ্কে গলা দিয়ে কয়েকটা কথাই বেরিয়েছিল তার, ‘বাবা, আমার ভীষণ ভয় করছে। বেঁচে ফিরতে পারবো কি না জানি না।। ওরা এখানকার প্রত্যেককে খুন করছে।’
তারিশির কাকা ফিরোজাবাদের বাসিন্দা রাকেশ জৈন স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এই শেষ টেলিফোনের কথা। তারিশি বাবাকে বলেছিল, ‘বন্ধুদের নিয়ে আমি একটা টয়লেটে লুকিয়ে আছি। আমাদের সবাইকে একে একে খুন করা হবে বলে মনে হচ্ছে।’
এই ছিল শেষ যোগাযোগ। তারপর আর টেলিফোন লাইন পাওয়া যায়নি তারিশির। হয়তো তার পরপরই বা কিছুক্ষণ পর পৈশাচিক উল্লাসে সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রটা নেমে এসেছিল তার উপর।
১৯ বছরের তারিশি জৈন আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলেতে অর্থনীতি নিয়ে স্নাতক স্তরে পড়ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের মাধ্যমে ঢাকার একটি ব্যাঙ্কে ইন্টার্নশিপ করারও সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সব শেষ। এক দল হিংস্র দানবের হাতে জীবনের সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেল এক নিমেষেই।
তারিশির শেষকৃত্য ভারতেই হবে বলে জানিয়েছেন তার কাকা রাকেশ জৈন।
৩ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম