রবিবার, ০৩ জুলাই, ২০১৬, ০৮:৫৮:৪৪

বন্দুকের নালের মুখেও দুই বান্ধবী রেখে আসতে চাননি ফারাজ

বন্দুকের নালের মুখেও দুই বান্ধবী রেখে আসতে চাননি ফারাজ

নিউজ ডেস্ক : সন্ত্রাসীদের বন্দুকের নালের মুখেও বান্ধবী অবিন্তা কবির, তারুশি জৈনকে ফেলে রেখে আসতে চাননি ফারাজ আইয়াজ হোসেন।  দুই বান্ধুবীকে বিপদের মুখে ফেলে রেখে নিজে বাঁচার সুযোগ নেননি ফারাজ।

ফারাজ আইয়াজ হোসেন (২০) আমেরিকার আটলান্টায় ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন।  গ্রীষ্মের ছুটিতে ঢাকা এসেছিলেন।  আগস্টে তার আবার ফিরে যাওয়ার কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্রে।

তাদের বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়তেন ঢাকার মেয়ে অবিন্তা কবির।  যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন ভারতীয় তরুণী তারুশি জৈন।

পিতার কর্মসূত্রে ঢাকায় ফারাজদের সঙ্গে একই স্কুলে পড়েছিলেন তিনি।  এই তিনজন ছিলেন পরস্পরের বন্ধু।  তারুশি একটা শিক্ষানবিশ বৃত্তি পেয়েছেন, বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।  ঢাকায় কাজ করতে হবে।  সে জন্যই ঢাকায় এসেছিলেন তিনি।

তিন বন্ধু নিজেদের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ করতে ১ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যায় গিয়েছিলেন গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে।  

জঙ্গি তরুণরা আক্রমণ করে বসে সেই রেস্টুরেন্টে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, জঙ্গিদের নিশানা ছিল বিদেশিরা।  বাংলাদেশিদের এক সময় তারা ছেড়ে দিতেও শুরু করেন।

জিম্মিদশা থেকে বেরিয়ে এসেছেন এমন মানুষদের কাছ থেকে শোনা কাহিনী নিউইয়র্ক টাইমস ২ জুলাই প্রকাশ করেছে।

জঙ্গিরা ফারাজ হোসেনকে মুক্তি দেয়।  তারা তাকে চলে যেতে বলে।  তার সঙ্গে থাকা বান্ধবী অবিন্তা কবির, তারুশি জৈন বেরিয়ে যাওয়ার সময় ফারাজকে তাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য বারবার ডাকতে থাকেন।

ফারাজ বলেন, আমার এই দুই বন্ধুর কী হবে?
জঙ্গিরা জানতে পারে, আবিন্তা কবির এসেছেন আমেরিকা থেকে।  তারুশি জৈন ভারতীয়।  জঙ্গিরা বলেন, ওদের ছাড়া হবে না।  তখন ফারাজ বলেন, দুই বন্ধুকে ফেলে রেখে আমি যাব না।

পরের দিন ফারাজ হোসেনের লাশ পাওয়া যায়।
ফারাজের নানা ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান বলেছেন, নামাজ-কালাম ফারাজের ভালো জানা ছিল।

এটাও শোনা যাচ্ছে যে, জঙ্গিরা পবিত্র কোরআন শরিফের আয়াত পাঠ করতে বলেছিল।  যারা বলতে পেরেছেন, তাদের তারা ছেড়ে দিয়েছিলেন।  ফারাজের তা না পারার কোনো কারণ ছিল না।

শুধু বন্ধুদের বিপদের মুখে ফেলে রেখে নিজে পালিয়ে গিয়ে আত্মরক্ষা করতে চাননি বলে ফারাজ রয়ে গিয়েছিল।  বন্ধুত্বের জন্য সি নিজের জীবন উৎসর্গ করে।

নিহত তিন বন্ধু হলেন ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজ হোসেন, ঢাকার একটি আর্ট গ্যালারির সাবেক প্রধান ইশরাত আখন্দ এবং ল্যাভেন্ডারের মালিকের নাতনী অবিন্তা কবির।

জানা গেছে, লতিফুর রহমানের মেয়ে সিমিন হোসেনের দুই ছেলের মধ্যে ফারাজ সবার ছোট। শুক্রবার রাতে নিজে গাড়ি চালিয়ে গুলশানের ওই ক্যাফেতে ফারাজ গিয়েছিলেন বলে জানায় পরিবার সংশ্লিষ্টরা।

আর্ট গ্যালারির সাবেক প্রধান ও জেডএক্সওয়াই ইন্টারন্যাশনালের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক ইশরাত ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান ক্রিয়েটিভসে ছিলেন।

তিনি গ্রামীণফোন ও ওয়েস্টিন হোটেলেও কাজ করেছিলেন।  অবিন্তা কবিরের দাদা মনজুর মোরশেদ সুপার স্টোর ল্যাভেন্ডারের মালিক।  

সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে কমান্ডো অভিযানে ৬ বন্দুকধারী গুলিতে নিহত হন।  সন্দেহভাজন একজনকে জীবিত আটক করা হয়েছে।
৩ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে