সোমবার, ০৪ জুলাই, ২০১৬, ১১:১৭:২২

আরও বড় ধরণের হামলার আশঙ্কা

আরও বড় ধরণের হামলার আশঙ্কা

আহমদুল হাসান আসিক : দেশে আরও বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। জঙ্গিগোষ্ঠী ঈদের আগেই বড় ধরনের কোনো বিপণিবিতান বা জনসমাগমে এ হামলা চালাতে পারে। এজন্য রাজধানীসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নেওয়ার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেশজুড়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। গতকাল রোববার পুলিশ সদর দপ্তরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা এ নিয়ে বৈঠকও করেন।

ওই বৈঠক সূত্র জানায়, দেশে আরও বড় ধরনের হামলার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। বড় ধরনের কোনো শপিংমল বা মার্কেটে এ হামলা হতে পারে। ঈদের আগে লঞ্চ টার্মিনাল, বাস টার্মিনাল বা রেলস্টেশনেও সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কার কথা বলেন কর্মকর্তারা। সে অনুযায়ী নিরাপত্তা ছকও সাজানো হয়েছে। এরই মধ্যে সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশপ্রধান এ কে এম শহীদুল হকের সভাপতিত্বে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বৈঠক হয়। বৈঠকে গুলশানে কূটনৈতিকপাড়ায় কড়া নিরাপত্তার মধ্যে জঙ্গিদের এত ভারী অস্ত্র বহনের বিষয়টিও উঠে আসে। সেখানে কোনো গাফিলতি বা গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল কি-না তা নিয়েও আলোচনা হয়।

কোন পরিপ্রেক্ষিতে দু'জন পুলিশ কর্মকর্তা মারা গেলেন, তা নিয়ে আলোচনা হয়। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বড় হামলার আশঙ্কা করে সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদারের সুপারিশ করেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, গুলশান হামলা থেকে শিক্ষা নিয়ে সারাদেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার ফাঁক গলে যাতে আর এ ধরনের হামলা হতে না পারে, সে বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক করা হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, আরও বেশি গোয়েন্দা তৎপরতা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে বেশি করে তথ্য আদান-প্রদানের ওপর সিদ্ধান্ত হয়েছে। কোনো ধরনের নাশকতার তথ্য পেলে যাতে দ্রুত তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে সরবরাহ করা হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পুলিশসহ নিরীহ মানুষ হত্যার ঘটনা অত্যন্ত বর্বরোচিত- পুলিশ সদর দপ্তর :এদিকে গুলশানের মর্মান্তিক ঘটনার পর পুলিশ সদর দপ্তর তাদের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, পুলিশসহ নিরীহ মানুষ হত্যার ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়, বর্বরোচিত ও জঘন্য। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।

গত শুক্রবার রাতে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় সশস্ত্র হামলার কথা উল্লেখ করে পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, পুলিশ সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে সাহসিকতা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সচেষ্ট হন। বন্দুকধারীদের হামলায় দু'জন নিষ্ঠাবান অকুতোভয় পুলিশ সদস্য নিহত হন। এ ছাড়া ওই ঘটনায় ২০ জন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি পেশাদার দুই পুলিশ কর্মকর্তার মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।

পুলিশপ্রধান বলেন, দু'জন সহকর্মীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরও প্রতিটি পুলিশ সদস্যের মনোবল দৃঢ় ও অটুট রয়েছে। তারা দৃঢ় সংকল্প নিয়ে পেশাদারিত্বের সঙ্গে জঙ্গিবাদ দমনসহ যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় বদ্ধপরিকর।

মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের সব প্রয়োজন ও সংকটকালে জননিরাপত্তা বিধানে আত্মত্যাগ করতেও পুলিশ কুণ্ঠাবোধ করেনি উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ভবিষ্যতেও দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিধানে পুলিশ পিছপা হবে না। যে কোনো অরাজক পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে জনগণের জানমাল রক্ষায় পুলিশ বাহিনী অঙ্গীকারবদ্ধ।

এদিকে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) আছাদুজ্জামান মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ এ ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যসহ নিহত সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তারা নিহতদের স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। -সমকাল
০৪ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে