নিউজ ডেস্ক : কক্সবাজারে আওয়ামী লীগ-বিএনপি বড় দুই দলের অবস্থান কারো চেয়ে কেউ কম নয়। জামায়াতের অবস্থানও ভাল ছিল। কিন্তু রামুর বৌদ্ধ মন্দির পোড়া মামলা ও মাওলানা দেলাওয়ার হুসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর সহিংস ঘটনার মামলায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে দলটি। কিন্তু এখন সরকারে থাকলেও দলীয় কোন্দলে নাকাল আওয়ামী লীগ। দীর্ঘদিনের কোন্দল কাটিয়ে বিএনপিতে এখন ঐক্যের সুর। প্রধান দুই দলের বর্তমান চালচিত্র তুলে ধরেছেন শামসুল হক শারেক।
বেসামাল নেতা-কর্মীতে নাকাল আওয়ামী লীগ বড় এই দলটি দীর্ঘদিন ধরে চলছে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিয়ে। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিয়েই চলছে দলটির কক্সবাজার জেলা সংগঠন। আ’লীগ পর পর দুই মেয়াদে প্রায় ৭ বছর এখন ক্ষমতায়। কিন্তু কাউন্সিল করে সভাপতি নির্বাচনের সুযোগ হয়নি কক্সবাজারে।
একদিকে নেতৃত্বে কোন্দল অপরদিকে দলীয় নেতা-কর্মীদের বেসামাল অবস্থা দল গোছাতে জেলা আওয়ামী লীগের যাচ্ছে নাকাল অবস্থা। কথায় আছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে থাকলে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ঠিক থাকে। আর ক্ষমতায় থাকলে হয় নেতা-কর্মীদের বেসামাল অবস্থা। কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের অবস্থাও যেন তাই। জেলা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এড. একে আহমদ হোসেন একজন প্রবীণ আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ এবং সাধারণ সম্পাদক সিআইপি সালাহ উদ্দিন আহমদ দু’জনই ভদ্র এবং সজ্জন বলেই মনে করেন দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও বাইরের মানুষ। তাদের নেতৃত্বে কক্সবাজার জেলা আ’লীগ ভালই চলছে বলে মনে করেন দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী। অনেকের মতে, এখন ভালই চলছে দলীয় কার্যক্রম।
আবার অনেকের মতে, একটি গ্রুপ ঠেকিয়ে রেখেছে কাউন্সিল ও নেতা নির্বাচন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিয়ে চলছে সংগঠন। তবে আ’লীগের জন্য বিপত্তি ক্ষমতার রাজনীতি। কোন নির্বাচন এলেই দলের ভেতরের কোন্দল প্রচণ্ডভাবে দেখা দেয়। অতীতে যেমন দেখা গেছে দলীয় পদ-পদবী নিয়ে দলাদলি, গ্রুপিং এমনকি সংঘর্ষের ঘটনা। একইভাবে বর্তমানে উপজেলা-পৌরসভা নির্বাচন নিয়েও প্রচণ্ড বিভক্তি রয়েছে। এই বিভক্তির কারণে বিগত উপজেলা নির্বাচনে জেলার ৮টি উপজেলায় ৪টি পেয়েছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা।
এর আগের উপজেলা নির্বাচনে পেয়েছিল মাত্র ২টি। ৪টি পৌরসভার মধ্যে ২টিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জিতেছে। কোন্দল গ্রুপিং সামাল দেয়া গেলে সবক’টি উপজেলা ও পৌরসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জেতা কোন বিষয় ছিলনা বলেই মনে করা হয়। মামলা হামলায় বিরোধী দল বেকায়দায় থাকলেও দলবাজি-দখলবাজি ও পুলিশী নির্যাতন আওয়ামী লীগের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেছে সারাদেশের মত কক্সবাজারেও। জেলার ৪টি সংসদীয় আসনের ৩টিতেই আওয়ামী লীগের এমপি।
হাস্যোজ্জ্বল সদরের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল দলমত নির্বিশেষে সকলের মন জয় করার চেষ্টা করে চলেছেন। হলমার্ক কেলেংকারী নিয়ে ভাবমর্যাদা কিছুটা ক্ষুণ্ণ হয়েছে তার। গত বর্ষা মৌসুমে পর পর দু’বার বন্যায় এমপি কমলের বিরামহীন চেষ্টা সত্ত্বেও ক্ষতিগ্রস্তরা পর্যাপ্ত সহযোগিতা পায়নি বলেই মনে করা হয়। এমনকি রামুতে ত্রাণ লুটপাটের অভিযোগে মিছিল-সমাবেশও করেছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ।
এর আগে রামুর বৌদ্ধ মন্দির পোড়ানোর ঘটনায় মামলায় জড়িত শত শত নিরীহ মানুষের মাঝে ক্ষোভ এখনো রয়েছে। এসব মোকাবেলা করতে কঠোর পরিশ্রম করতে হচ্ছে এমপি কমলকে। উখিয়া-টেকনাফের এমপি আব্দুর রহমান বদি। বিভিন্ন কারণে তিনি ব্যাপক আলোচিত এবং সমালোচিত। বিশেষ করে সরকারী কর্মকর্তাদের মারধর, দুদকের মমলায় তিনি ও তার পরিবার সদস্যদের জড়িত থাকার ঘটনা ইয়াবা ও মানব পাচারে সংশ্লিষ্টতার প্রবল অভিযোগে তিনি জর্জরিত।
জানাগেছে, এতে করে দলীয় নেতাকর্মীসহ সরকারের উচ্চমহলও বিব্রত। যদিও এমপি বদি এসব অভিযোগ স্রেফ প্রচারণা বলেই উড়িয়ে দেন। মহেশখালী কুতুবিদয়ার এমপি আশেকুল্লাহ রফিক। তিনি চেষ্টা করছেন এগিয়ে যাওয়ার। কিন্তু সম্প্রতি মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভূমি অধিগ্রহণের কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে তৎকালীন জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনসহ একটি চক্র। এতে দলের এবং সরকারের ভাবমর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে সরকার দলের নেতাদের ভূমিকা নিয়েও।
এসব কিছু মোকাবেলা করতে হচ্ছে আশেকুল্লাহ রফিক ও জেলা আওয়ামী লীগকে। কক্সবাজার শহর আ’লীগ সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান এবং সাবেক পৌর চেয়ারম্যান নুরুল আবছারের মাঝেও রয়েছে নেতৃত্বের সংঘাত। যার কারণে কক্সবাজার পৌরসভা চেয়ারম্যান পদ ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদ দু’টি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয় বলে মনে করা হয়। নানা কারণে চিড় ধরেছে এই দুই নেতার ভাবমর্যাদায়। সুবিধা বঞ্চিত নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশার পাশাপাশি সরকারের সাম্প্রতিক অবস্থানে বেপরোয়া নেতা-কর্মীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়-ভীতি।-ইনকিলাব
৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে