সোমবার, ০৪ জুলাই, ২০১৬, ১০:১৯:৩৫

সন্দেহের তালিকায় বান্ধবী ও বান্ধবীর বান্ধবীকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যাওয়া সেই শিল্পপতির ছেলে

সন্দেহের তালিকায় বান্ধবী ও বান্ধবীর বান্ধবীকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যাওয়া সেই শিল্পপতির ছেলে

ঢাকা : রাজধানীর গুলশানে হামলার পর কমান্ডো অভিযানে আটক সন্দেহভাজন যে তিনজনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে, তাদের মধ্যে একজন তাহমিদ হাসিব খান।

জানা গেছে, তিনি আফতাব বহুমুখী ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে রহিম খান শাহরিয়ারের ছেলে।  তাহমিদ ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টোর ফুলটাইম স্টুডেন্ট।

ঢাকায় পড়েছেন একটি নামকরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে।  ঘটনার দিন শুক্রবার দুপুরে তিনি টরেন্টো থেকে দেশে ফেরেন।

শুক্রবার সন্ধ্যার পর তার বান্ধবী ও বান্ধবীর বান্ধবীকে নিয়ে তিনি হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে খেতে যান।  শনিবার কমান্ডো অভিযানের পর তাকে উদ্ধার করা হয়।  তবে সন্দেহভাজন হিসেবে এখনো তাকে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

সন্দেহভাজন অন্য দু’জনের একজন হলেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক প্রকৌশলী হাসনাত করিম।  অন্যজন জাকির হোসেন শাওন। তাকে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।

এসব তথ্য গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলার পর অনেকেই ভেতরে ও বাইরে আশপাশে লুকিয়ে ছিলেন।  

সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ শেষে ঘটনাস্থলেই ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়।

ভেতর থেকে নারী, শিশু ও তিন বিদেশিসহ ১৩ জন এবং আশপাশের এলাকা থেকে আরো ১৪ জনকে উদ্ধার করে যৌথবাহিনী।

পরে তাদের গোয়েন্দা হেফাজতে নেয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অন্যদের ছেড়ে দেয়া হলেও তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে।   

তবে এখনো তাদের আটক ও গ্রেফতার দেখানো হয়নি বলে জানা গেছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আইজিপি যে দু’জনের কথা বলেছেন তারা হচ্ছেন হাসনাত ও তাহমিদ।  অন্যজন হচ্ছেন অভিযান শুরুর আগে রেস্টুরেন্টের পেছন থেকে আটক তরুণ।  তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আফতাব বহুমুখী ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে রহিম খান শাহরিয়ারের ছেলে তাহমিদ হাসিব খান গোয়েন্দা হেফাজতে রয়েছেন।  

তিনি কানাডার ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টার ছাত্র। ঘটনার দিন শুক্রবার দুপুরে তিনি টরেন্টো থেকে দেশে আসেন।  দুপুরে বাসায় বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যায় ইফতারের পর বন্ধুদের সঙ্গে গুলশানের ওই রেস্টুরেন্টে যান।  এ কথা গণমাধ্যমকে স্বজনরা জানান।

তাহমিদের বাবা শাহরিয়ার খান একটি গণমাধ্যমকে বলেন, আমি বিশ্বাস করি না সে এমন বর্বর হামলার সঙ্গে জড়িত।  তার সঙ্গে দু’জন তরুণী ছিল।  তারা  সেখানে খাবার খেতে গিয়েছিল।  

তিনি বলেন, ছেলের সঙ্গে এখন পর্যন্ত আমাদের দেখা হয়নি।  শুনেছি তার বান্ধবী দু’জনও জীবিত আছে।  তারা সবাই ডিবির হেফাজতে রয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সন্দেহভাজন আরেকজন হাসনাত করিম হিজবুত তাহরিরের সঙ্গে জড়িত।  ওই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১২ সালে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে সরে যেতে বলে কর্তৃপক্ষ।  পরে তিনি স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে ইংল্যান্ডে চলে যান।

এর আগে তিনি ইংল্যান্ড থেকে প্রকৌশল বিদ্যায় পড়াশোনার পর যুক্তরাষ্ট্রে এমবিএ করেন।  প্রায় দেড় বছর আগে আবার তিনি দেশে ফিরেন।  

ঘটনার দিন মেয়ের জন্মদিন পালন করতে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে হলি আর্টিজানে গিয়েছিলেন বলে তার স্বজনরা জানিয়েছেন।  তার বাবা রেজাউল করিম সাংবাদিকদের জানান, হাসনাত গোয়েন্দা হেফাজতে রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে গুলশান ২ নম্বরের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা চালায় একদল অস্ত্রধারী জঙ্গি।  এরপর তারা অন্তত ৩৩ দেশি-বিদেশিকে জিম্মি করে।

প্রায় ১২ ঘণ্টা পর কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ওই রেস্টুরেন্টের নিয়ন্ত্রণ নেয় সশস্ত্রবাহিনী।  ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও ২০ জনের লাশ পাওয়া যায় জবাই করা অবস্থায়।  
৪ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে