নিউজ ডেস্ক : শুক্রবার রাতে ঢাকার একটি ক্যাফেতে সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত হামলার খবরে যারা বিস্মিত তারা মনোযোগী নন। এর মধ্যে সরকারও আপাতদৃষ্টিতে অন্তর্ভুক্ত। সন্ত্রাসবাদের উত্থানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সরকারের আনাড়ি ও অকার্যকর পদক্ষেপ সপ্তাহান্তের এই হত্যালীলার কারণগুলোর মধ্যে একটি। সংগঠিত আল-কায়েদা ও আইএসের সন্ত্রাসী সেল অনেক বছর ধরেই বাংলাদেশে সক্রিয়। দুই বছর ধরে বাংলাদেশে এসব দলের নাম করে একজন বা দুইজন করে ব্যক্তিকে হত্যা করা হচ্ছে নির্মমভাবে। আর ঢাকা এর বিরুদ্ধে যে শোচনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে তা সরাসরি সন্ত্রাসকে ছড়িয়ে দিতে সহায়ক হয়েছে।
বাংলাদেশ খুনিদের কাছে হত্যালীলার মাঠে পরিণত হয়েছে। আইএসের অনুসারী ইসলামি জঙ্গিদের নিজস্ব কায়দায় পরিচালিত অনেক হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশকে রক্তাক্ত করেছে। এর শিকার হয়েছেন লেখক ও ব্লগার, হিন্দু ও খ্রিষ্টান। এর মধ্যে মাস দুয়েক আগে পরিচালিত হয় একটি জঘন্য হত্যাকাণ্ড। মিয়ানমার বংশোদ্ভূত বৌদ্ধভিক্ষু ৭৫ বছর বয়সী মংসোউয়ি ইউ চাংককে হত্যা করা হয় তার নির্জন মঠে, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রত্যন্ত ও আপাত শান্তিপূর্ণ নাইক্ষ্যংছড়ি গ্রামে। আইএস অন্য আরো অনেক হত্যাকাণ্ডের মতো এর দায়ও স্বীকার করে।
জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম দেশ। মুসলিম জনসংখ্যার দিক থেকে চতুর্থ বৃহত্তম। বাংলাদেশের প্রায় ১৬ কোটি ৩০ লাখ জনগণের ৯০ শতাংশই মুসলিম। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশে এমন ধ্বংসাত্মক ও খুনি দলের প্রতিষ্ঠা হলো কীভাবে। ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান বা ভারতের মতো বড় ও জটিল দেশগুলোতেও তাদের নিষ্ক্রিয় করে দেয়া হয়েছে। কীভাবে জঙ্গিরা প্রতিষ্ঠা হতে পারে এবং তাদের ঘৃণাকে ছড়িয়ে দিতে পারে? এবং কী করে তারা শাস্তি না পেয়েই বর্বরোচিত এসব হত্যা চালিয়ে যেতে পারে?
এর উত্তর স্পষ্ট প্রতীয়মান। দুই দশক ধরে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকারের পালাবদল ঘটেছে নিয়মিত। উভয় সরকারই নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করেছে। কিন্তু মনোযোগের অনুপস্থিতি ও উদ্বেগের অভাব এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যা দেশটিকে আইএসের সন্ত্রাসবাদী কৌশলের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরেছে। আরো একবার আইএসের পবিত্র রমজান মাসজুড়ে হামলা চালানোর আহ্বানের উত্তর দেয়া হয়েছে সবচেয়ে নৃশংসভাবে।
দুঃখজনকভাবে, এগুলোর কোনোটিই নতুন কিছু নয়। এবং নিশ্চিতভাবেই এটা অনেক বছর ধরে গড়ে উঠছে। প্রায় ১১ বছর আগে, ব্যাংকক পোস্ট আরো অনেকের মতোই বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান প্রভাবশালী জঙ্গিদের কারণে আঞ্চলিক হুমকির বিষয়টি তুলে ধরেছিল। এটা উল্লেখ করা হয়েছিল, ‘হেট-ফিলড’ মাদরাসার নতুন কেন্দ্র হিসেবে ‘বাংলাদেশ পাকিস্তানকে প্রতিস্থাপিত করেছে’, যাতে কিছু থাই জনগণকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। থাইল্যান্ডে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত তার বিরোধিতা করেছিলেন। সেটা ছিল তখনকার ঢাকা সরকারের অস্বীকারের প্রবণতার প্রমাণ, যা এখনও রয়েছে।
এটা ভোলার নয় যে, আমেরিকায় ৯/১১ আক্রমণের পর, পাকিস্তান এই তথ্য প্রকাশ করেছিল যে, প্রায় সাত হাজার থাই শিক্ষার্থী আল-কায়েদাসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত মাদরাসায় পড়ালেখা করেছে। অনেকেই এ ধরনের ‘শিক্ষা’ নিতে আফগানিস্তানেও গিয়েছে। থাইল্যান্ড আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উগ্রপন্থি ঝুঁকিতে দ্বীপরাষ্ট্র হিসেবেই থেকে গেছে। তবু আইএস নতুনরূপে হুমকি নিয়ে হাজির হয়েছে: বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের অপ্রভাবিত তরুণদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে তাদের নামে হত্যাকাণ্ড পরিচালনার জন্য।
বাংলাদেশ সন্ত্রাসীদের কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার মুখে রয়েছে। অব্যাহত ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপ অকার্যকর। শেখ হাসিনা এসব হত্যা ও হুমকিকে উড়িয়ে দিয়েছেন। এটা জঙ্গিদের উৎসাহিত করেছে এবং তারা উৎসাহিত হয়েছে।
থাইল্যান্ডের পরিকল্পনাকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীকে বাংলাদেশ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। বিপথে পরিচালিত অনেক থাই নাগরিক রয়েছেন যারা আইএসের অনলাইন বার্তা অনুসরণ করেন। আর এটা তাদের বাংলাদেশের দিকে ধাবিত করতে পারে, যা এদের নিয়োগের কেন্দ্র। এখন সময় পদক্ষেপ নেয়ার এবং এটা বন্ধ করার। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন সব নাগরিক, পরিবার, দল ও ধর্মের মানুষের সহযোগিতা এবং সরকারের দৃঢ় প্রত্যুত্তর।
(ব্যাংকক পোস্টে প্রকাশিত ‘এ ডেঞ্জারাস নেইবার’ শীর্ষক সম্পাদকীয়র অনুবাদ) -মানবজমিন
৫ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস