মঙ্গলবার, ০৫ জুলাই, ২০১৬, ০৫:৪৩:২৭

আরো বড় ধরনের হামলার আশঙ্কা!

আরো বড় ধরনের হামলার আশঙ্কা!

স্টাফ রিপোর্টার : গুলশানের হামলার ঘটনা যেন জাতির জন্য অশনি সঙ্কেত। এ ঘটনা ভবিষ্যতে এর চেয়েও বড় ধরনের হামলার ইঙ্গিতবহ বলে মনে করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। এমন শঙ্কা দেশের গোয়েন্দাদেরও। এরই মধ্যে আরো বড় ধরনের হামলার হুমকি দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি সংগঠন আইএস।

টুইটারে তারা হুমকি দিয়ে বলেছে, ২০ জুলাই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে বড় শপিং মল যমুনা ফিউচার পার্কে হামলা চালানো হবে। দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এ হুমকি উড়িয়ে দিচ্ছেন না। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) সাখাওয়াত হোসেন, মেজর জেনারেল (অব) আবদুর রশিদের মতে জঙ্গি হামলার শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। পহেলা জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় হামলা করে বিদেশী নাগরিকসহ ২৮ জনকে বীভৎসভাবে খুন করা হয়। এ ভয়ঙ্কর পৈশাচিক হত্যাকান্ড গোটা বিশ্বে তোলপাড় চলছে।

সারা বিশ্বের মিডিয়ার দৃষ্টি যখন বাংলাদেশের দিকে। দেশেও এ নিয়ে উঠেছে নিন্দা আর ঘৃণার ঝড়। দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হচ্ছে। সর্বত্রই এ ন্যক্কারজনক ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। জঙ্গি হামলার কারণ খুঁজতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গলদঘর্ম। তখন দেশে আরো বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা করছে গোয়েন্দারা। জঙ্গিগোষ্ঠী ঈদের আগেই বড় ধরনের কোনো বিপণিবিতান বা জনসমাগমে এ হামলা চালাতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। এজন্য রাজধানীসহ সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নেওয়ার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেশজুড়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। গুলশানে ভয়ঙ্কর ঘটনার পর গত রোববার পুলিশ সদর দপ্তরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা এ নিয়ে বৈঠকও করেন। জানা যায়, ওই বৈঠকে দেশে আরও বড় ধরনের হামলার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। বড় ধরনের কোনো শপিংমল বা মার্কেটে এ হামলা হতে পারে এমন শঙ্কা তাদের। ঈদের আগে লঞ্চ টার্মিনাল, বাস টার্মিনাল বা রেলস্টেশনেও সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কার কথা বলেন কর্মকর্তারা। সে অনুযায়ী নিরাপত্তা ছকও সাজানো হয়েছে। সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

এরই মধ্যে আগামী ২০ জুলাই রাজধানীর কুড়িলে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্কে হামলার হুমকি দিয়েছে আইএস। কামিল আহমেদ নামে এক টুইট ব্যবহারকারী রোববার সকাল ১১টা ৪৯ মিনিটে ও সোমবার রাত ১২টা ৪৯ মিনিটে একই বার্তা দিয়ে একই অ্যাকাউন্ট থেকে দুটি টুইট করেছে। তবে এই রিপোর্ট লেখার প্রায় ৩ ঘণ্টা আগে টুইটার অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। টুইট বার্তার মন্তব্যের ঘরে ‘কেন বাংলাদেশকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে’

এমন প্রশ্নের জবাবে টুইটকারী জানান, অমুসলিমদের হাত থেকে ইসলামকে রক্ষার স্বার্থেই এসব পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এটি সঠিক রাস্তা নয়, এমন মন্তব্যের উত্তরে হুমকিদাতা জানায়, তারা শুধুমাত্র তাদের কর্তব্যটুকুই করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একই ব্যবহারকারীর অভিন্ন বার্তা সম্বলিত টুইটের দুটি স্ক্রিনশট পাওয়া গেছে। খুঁজে পাওয়া স্ক্রিনশট দু’টিতে সময়ের ভিন্নতা রয়েছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গুলশানের এই ঘটনা বাংলাদেশে প্রথম। এটি খুবই দুঃখজনক একটি ঘটনা। এটি ছিল অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ঘটনা। এখানে যথেষ্ট নিরাপত্তা সঙ্কট ছিল। কারণ সন্ত্রাসীরা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করে। এটা কীভাবে সম্ভব হল? দেশে যে একটা সমস্যা আছে সেটিই তো সরকার স্বীকার করে না। রাজনৈতিক সঙ্কটকে কাজে লাগিয়ে এসব সন্ত্রাসীরা হামলা করছে। কারণ সরকার আসল হোতাদের না ধরে এসব হামলাকে রাজনৈতিক রঙ দিচ্ছে। এর সুযোগ নিচ্ছে জঙ্গিরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধান জরুরি। না হলে সংকট বাড়তেই থাকবে। জঙ্গিরা প্রশিক্ষিত। তারা গুলশান হামলায় নতুন ডায়মেনশন আনছে। এসব মোকাবিলায় জঙ্গিদের হোতাদের ধরতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আর্টিসানের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে দেখতে হবে কেন এই হামলা, কারা এর সঙ্গে জড়িত। পুরো ঘটনাকে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে হবে। ২০ জন বিদেশি নিহত হলো। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর প্রতিক্রিয়া তো অবশ্যই হবে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। গার্মেন্টস খাতও এর শিকার হতে পারে। আমাদের ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে বিদেশিরা নতুন করে ভাবতে পারে। সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে পর্যটনে। সবকিছু মিলিয়ে বিদেশে বাংলাদেশের এক নেতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে উঠবে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব) আবদুর রশিদ বলেন, গুলশান ট্র্যাজেডির মতো একটি হামলা অপ্রত্যাশিত হলেও আশঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত সেটি বাস্তবে ঘটে গেল। এ শঙ্কা থাকছেই। ভবিষ্যতে এমন বড় সন্ত্রাসী-জঙ্গি হামলা ঠেকানোর উপায় একটাই জঙ্গি প্রতিরোধ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। জঙ্গি উচ্ছেদ না করলে যতই নিরাপত্তা বাড়ানো হোক না কেন, কোনো কাজে আসবে না। নতুন আইন করতে হবে। এসব হামলায় দেশি-বিদেশি যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি আইনে আনতে হবে। যারা হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাহলে ধীরে ধীরে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। এক কথায় আগে নতুন আইন করতে হবে।

জাসদের (রব) সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন বলেন, ‘কূটনৈতিক পাড়া হিসাবে সরকার ঘোষিত তিন স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকা সত্ত্বেও তা ভেদ করে জঙ্গিরা এত অস্ত্রশস্ত্র ও বোমা নিয়ে কীভাবে প্রবেশ করল তার উত্তর দেশবাসী এখনও খুঁজে পাচ্ছে না। এ ঘটনা ভবিষ্যতে এর চেয়েও বড় ধরনের হামলার ইঙ্গিতবহ। এ অবস্থায় দেশে আইএস বা আল কায়দা আছে কি নেই, এ বিতর্কে না গিয়ে বাংলাদেশে চলমান জঙ্গি তৎপরতার উৎস ও ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করা অপরিহার্য।’- ইনকিলাব

৫ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে