বুধবার, ০৬ জুলাই, ২০১৬, ০২:২৬:২৮

গুলশানের মত আরও হামলার আশংকা করেছেন ড. ইউনূস

গুলশানের মত আরও হামলার আশংকা করেছেন ড. ইউনূস

নিউজ ডেস্ক : রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার মতো আরও ঘটনা দেশে ঘটতে পারে বলে আশংকা জানিয়েছেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, 'গুলশানের হামলায় জাতির যে ক্ষতি হয়ে গেল তা সামান্য নয়। যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এটা তো একটা ঘটনা দিয়ে শেষ হবে না। এর হয়তো বহু রকমফের আমরা দেখব। আল্লাহ না দেখাক।'

দেশের সবশ্রেণির নাগরিক যদি সচেতন না হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে জঙ্গিবাদ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না বলেও সতর্ক করেন এই অর্থনীতিবিদ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্যোশাল বিজনেস সেন্টার, চট্টগ্রাম আয়োজিত ইফতার মাহফিলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব কথা বলেন।

ড. ইউনূস বলেন, দেশের বাইরে গেলে এই আঘাত টের পাওয়া যাবে। সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে এই খবর চলে গেছে। দুনিয়ার এমন কোনো পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল নেই, যারা হামলার ঘটনা সবিস্তারে বর্ণনা করেনি। সিএনএন সারাক্ষণ দেখিয়েছে। তাদের সাংবাদিক না থাকা সত্ত্বেও রাউন্ড দ্যা ক্লক এই ঘটনা প্রচার করেছে। কাজেই ‘আমি কিছুই জানি না’ এটা দুনিয়াকে বলার সুযোগ নেই। গোপন করারও কিছু নেই। গোপন করাও নিরাপদ নয়।'

তিনি বলেন, 'দেশে ভয়ঙ্কর কাণ্ড হয়ে গেল। এটি ভবিষ্যতে আমাদের কোনো দিক নির্দেশনা দিচ্ছে, সেটি ধারণা করতে পারছি না। এমন কোনো লোক নেই, যিনি এই ঘটনায় ভ্যাবাচ্যাকা খাননি। এই ঘটনা যতই পরিষ্কারভাবে এসে যাচ্ছে, ততই আমরা ছোট হয়ে যাচ্ছি।'

ড. ইউনূস বলেন, ঢাকায় সামাজিক ব্যবসা দিবস উপলক্ষে ২৮ ও ২৯ জুলাই ঢাকায় দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজনের কথা ছিল। কিন্তু গুলশানে হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার তা বাতিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই বছর বড় আকারের অনুষ্ঠানের আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জাপান, চীন ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, বড় বড় কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এতে অংশ নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন। কিন্তু কখন কী হয়ে যায় তা কেউও জানি না।

তিনি বলেন, 'এই অনুষ্ঠানে জাপানের একশ' জন প্রতিনিধি আসার কথা ছিল। ভারত থেকে আসার কথা ছিল বড় একটি প্রতিনিধি দল। অন্যান্য দেশের অনেকেই নিবন্ধন করেছিল। কিন্তু তাঁদের আমরা কোন মুখে বলি, আমাদের এখানে আস। তাদের বলেছি তোমাদের আসার দরকার নেই। তোমাদের কাছে মাপ চাই। ভবিষ্যতে যখন সময়-সুযোগ আসবে তখন এখানে আস।'

দেশের তরুণদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, 'যে ছেলেরা মুরগি জবাই করতে ভয় পায়, সে আজ চোখের সামনে মানুষ জবাই করে ফেলেছে। এমনকি তাদের সমবয়সী একজনকে জবাই করেছে। এই ঘটনা আমাদের একটি পথ দেখিয়ে দিল। এর পেছনে দীর্ঘ প্রক্রিয়া আছে। তাদের কুবুদ্ধি কে দিল? কোথায় থেকে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে? এই প্রক্রিয়ার পুরোপুরি বিবরণ আমাদের জানতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি বন্ধ না করা পর্যন্ত আমরা সুস্থ জাতি হিসেবে দাঁড়াতে পারব না।'

তিনি বলেন, 'এর প্রক্রিয়াটা যদি আমরা ধরতে না পারি তাহলে এটা আমাদের ভেতরে ঢুকে যাবে। আজ পাঁচজনকে পেয়েছি, পরে আরও পাঁচজনকে পাব। আজ হয়তো মনে করছেন আপনার ছেলে-মেয়ে নিরাপদ। তাদের (হামলাকারী) বাবা-মাও মনে করেছিলেন তাঁরা নিরাপদ। আরও কত ছেলেমেয়ে এর ভেতরে আছে তা আমরাও জানি না। আরেকদিন আরেক আরও ভয়াবহ কাণ্ডে আমাদের হয়তো বোধোদয় হবে।'

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, 'আমরা এখন পরস্পরকে দোষারোপ করছি। কিন্তু দোষারোপ করে ওখানে নিষ্পত্তি করে ফেলতে হবে, যে ভয়াবহতার মধ্যে আছি। এর মূলোৎপাটন করে ফেলতে হবে। এটা যদি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, পারিবারিক পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক কারণে হয়ে থাকে, এখান থেকে আমাদের উদ্ধার হতে হবে।'

উক্ত অনুষ্ঠানে ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মুহাম্মদ সিকান্দার খান, আমীর হুমায়ুন মাহামুদ চৌধুরী ও ফারুকে আজম বীর প্রতীক বক্তব্য দেন।

৬ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে