নিউজ ডেস্ক : হামলা ও হত্যাকাণ্ডের পর দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের। মিশন শেষে কীভাবে দ্রুত হাওয়ায় মিলিয়ে যাঢ জঙ্গিরা এ টেনশন ছিল তাদের। আজ কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় পুলিশের ওপর হামলার পর হাওয়া হয়ে যাওয়ার কৌশল ধরা পড়ে পুলিশের কাছে।
শোলাকিয়ায় পুলিশের ওপর হামলার সময় গোলাগুলিতে নিহত এক হামলাকারীর পরনের পোশাক দেখেই বিস্মিত হয়ে যান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
ওপরে ঢিলেঢালা পায়জামা পাঞ্জাবি ও ভেতরে টাইট জিন্সের প্যান্ট ও টি-শার্ট। সেই জিন্সের প্যান্টের মধ্যে কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত বিশেষ পকেট তৈরি করা, যেখানে রাখা হয় চাপাতি।
শোলাকিয়ার হামলায় ৮-১০জন জঙ্গি অংশ নিলেও পুলিশের হাতে ধরা পড়ে মাত্র দু’জন। মিশন শেষ করেই ওপরের ঢিলে পোশাকটি দ্রুত পাল্টে সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশে যায় তারা।
পুলিশের ধারণা, কেউ কেউ ঢুকে যায় আশপাশের বিভিন্ন বাড়িতে। তাই তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
গত এপ্রিলে রাজধানীর কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব রাব্বী তনয় হত্যাকাণ্ডের পরও জঙ্গিরা পোশাক বদল করে দ্রুত পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল।
পোশাক বদলের দৃশ্য সাধারণ মানুষ দেখলেও প্রথমে তারা বুঝতে পারেননি বিষয়টি। পরে হত্যাকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে বুঝতে পারেন ওরা জঙ্গি ছিল। পুলিশের ধারণা, পোশাক বদলের বিষয়টিও তাদের কৌশলের অংশ ছিল।
এর আগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ব্লগার, লেখক ও প্রকাশক হত্যার পর চোখের পলকেই হাওয়া হয়ে যায় হামলাকারীরা। দ্রুত স্থান বদল ও পোশাক বদলের কারণে নিজেদের চেহারায় পরিবর্তন হওয়ায় ধরতে হিমশিম খেতে হয়েছিল গোয়েন্দাদের। কয়েকজনকে গোয়েন্দারা ধরতে পারলেও বেশির ভাগই এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈয়দ আবু সায়েম গণমাধ্যমকে জানান, হামলাকারীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় দ্রুত পোশাক বদল করার কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে মিশে যায়। এজন্য তাদের তাৎক্ষণিকভাবে ধরা সম্ভব হয়নি।
এর আগেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে এবং গ্রেফতার এড়াতে বারবার কৌশল বদল করেছে জঙ্গিরা। দাড়ি-টুপি ও পাঞ্জাবি ছেড়ে জিন্স প্যান্ট ও শার্ট পরা শুরু করে তারা। সেই কৌশল কিন্তু বেশিদিন গোপন থাকেনি পুলিশের কাছে।
জঙ্গিদের নিত্যনতুন কৌশল নিয়ে সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতর ও ডিএমপি সদর দফতরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। জঙ্গিদের কৌশল পর্যালোচনার পর নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে সচেতন থাকারও নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ টার্গেট করে ২৭ রমজান কিশোরগঞ্জে ঘাঁটি গাড়ে হামলাকারীরা। কয়েকবার তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে র্যাকি করে আসে। সে মোতাবেক এ হামলার ছক আঁকে তারা।
পুলিশের হাতে আটক সন্দেহভাজন আহত এক জঙ্গি এসব তথ্য দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হামলাকারীর বাড়ি দিনাজপুর বলে জানায়। ওই জঙ্গি বলেছে, ২৭ রোজার দিন তারা কিশোরগঞ্জে আসে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিশোরগঞ্জ পুলিশের একটি সূত্র এ কথা জানিয়েছে। ওই ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য কড়া নিরাপত্তায় ময়মনসিংহে পাঠানো হয়েছে। সুস্থ হওয়ার পর তাকে আবারো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সে সময় অনেক তথ্য বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা আছে বলে দাবি ওই সূত্রের।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, হামলার পরে হামলাকারীরা আজিমউদ্দীন স্কুলের আশপাশের বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে যায়।
তারা পুলিশের ওপর গুলিও চালায়। পুলিশও এ সময় গুলি করে। হামলার সময়ও গোলাগুলি হয়। এ সময় ছেলেটি গুলিতে নিহত হতে পারে।
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলাকারীরা সংখ্যায় ছিল ৮ জন। তাদের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তাদের কেউ কাউকে চেনেন বলে জানা গেছে। হামলাকারীদের ধরতে পুলিশ দুটি বাসা ঘিরে রেখেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, জঙ্গিরা গোলাগুলি করতে করতে শোলাকিয়া এলাকার একটি বাসায় ঢুকে পড়ে। সেখান থেকে তারা পুলিশের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এ বাড়ির মালিক আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হান্নান ভূঁইয়া বাবুল। তাকে জিজ্ঞাবাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
শোলাকিয়া ঈদগাহের একশ' গজ পূর্বে আজিমুদ্দির উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় হামলাকারীদের বোমা হামলা ও পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে দুই পুলিশ সদস্যসহ ৪ জন নিহত হয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে একজন হামলাকারী রয়েছেন। গুলিতে ঝর্ণা রানী ভৌমিক (৩২) নামে স্থানীয় এক নারীও নিহত হন। নিহত দুই পুলিশ কনস্টেবল হলেন জহুরুল ইসলাম (৩২) ও আনসারুল হক (৪০)।
এ ঘটনায় আরো ছয় পুলিশ সদস্যসহ ১১ জন আহত হয়েছেন। আহত ছয় পুলিশকে প্রথমে ময়মনসিংহ পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঈদুল ফিতরের নামাজের প্রস্তুতিকালে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্র, বন্দুক ও বোমা নিয়ে পুলিশ চেকপোস্টে কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হামলা চালায়।
এদিকে ১ জুলাই গুলশানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২৮ জন নিহত ও অনেকে আহত হন। এবার ঈদের প্রধান জামাতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়। এর মধ্যেও দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতে বোম হামলার ঘটনা ঘটলো।
৭ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম