শুক্রবার, ০৮ জুলাই, ২০১৬, ১২:২৬:৪৯

‘ভোর হওয়ার পর সন্ত্রাসীদের কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত দেখাচ্ছিল’

‘ভোর হওয়ার পর সন্ত্রাসীদের কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত দেখাচ্ছিল’

নিউজ ডেস্ক : গত শুক্রবার রাতে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় দীর্ঘ ১২ ঘণ্টার জিম্মি দশা থেকে জীবিত উদ্ধার হওয়া এক নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসের কাছে সে রাতের দুঃসহ স্মৃতির বর্ণনা দিয়েছেন।

ওই নারী নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, তাদের আটজনকে সন্ত্রাসীরা একটি টেবিলে বসিয়ে রেখে বলেছিল, তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। এই আটজনের মধ্যে ৮ বছর ও ১৩ বছর বয়সী দুজন শিশুও ছিল। সন্ত্রাসীরা তাদের মাথা নিচু করে রাখতে বলেছিল। তিনি বেঁচে গেছেন, কারণ জঙ্গিরা মনে করেছিল তারা সবাই বাঙালি মুসলমান।

ওই নারীর বর্ণনা মতে, জঙ্গিরা জিম্মি করার আধা ঘণ্টার মধ্যেই দেশি-বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে ২০ জনকে প্রথমে গুলি করে। এরপর ছুরিকাঘাতে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এ সময় সন্ত্রাসীরা শিশুদের চোখ-কান ঢেকে রাখতে বলেছিল। কিন্তু চোখ-কান ঢেকে রাখলেও কী হচ্ছে, তা বোঝা তাদের জন্য অসম্ভব ছিল না। হত্যাকাণ্ডের পর আক্রমণকারীরা সব লাইট বন্ধ করে দেয়। অন্ধকারের মধ্যেই তারা আটজন মাথা নিচু করে ওই টেবিলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসেছিলেন। ভোর হওয়ার পর সন্ত্রাসীদের কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত দেখাচ্ছিল।

রেস্তোরাঁর জিম্মি কর্মীকে উদ্ধৃত করে ওই ব্যক্তি বলেছিলেন, ‘ওকে (উদ্ধার হওয়া ব্যক্তি) দিয়ে সারা রাত্র ওরা (জঙ্গিরা) মাছ ভাজা, পাস্তা, অন্যান্য ফুড-জাতীয় খাবার খাইছে। ওকে কোরআন শরিফ পড়াইছে, ও আমাকে যা বলছে। যে রান্না করে খাওয়াইছে, ওকে বলেছে, তোরা নামাজ-কোরআন পড়বি। ওদের সাহরি খাইয়েছে, ওরাও খাইছে।...ওরা যখন মরবে মরবে, মারা যাবে বা পুলিশের অভিযানের কিছুক্ষণ আগে ওদের বলছে, দেখ, আমরা যে রকম ওদের মারছি, আমারও হাসিমুখে কিছুক্ষণ পরে মারা যাব। তোদের সঙ্গে আমাদের জান্নাতে বসে দেখা হবে। হঠাৎ কিছুক্ষণ পরেই ভেতরে শুনতে পাই শব্দ, গোলাগুলির।

তিনি আরো বলেন, আমার পাশ দিয়ে আমার শেফ ডিয়েগো, আর্জেন্টিনার ও দৌড় দিছে। আমরা সাথে সাথে বাথরুমের ভেতর ঢুকি। আমরা নয়জন বাথরুমের ভেতর সারা রাত্র থাকি। পরে অনুমান রাত দুই-তিনটা বাজে, তখন ওরা আমাদের ওখান দিয়ে হাঁটে, হাঁটার পরে বলতেছে যে বাথরুমের দরজা বন্ধ, তার ১০ থেকে ২০ মিনিট পরে এসেই আমাদের বলে, এই ওখানে কারা আছিস, তোরা বাঙালি না, ফরেনার। আমি সামান্য মাথা নোয়ানোর ফাঁকা দিয়ে দেখলাম, একজনের সামনে বড় একটা রামদাও ধইরা আছে, আরেকজনের পেছনে...পিস্তল ধরে আছে।’

১ জুলাই রাতে গুলশানে ওই সন্ত্রাসী হামলায় ২০ জন নিহত হন। এর মধ্যে ১৭ জন বিদেশি, তিনজন বাংলাদেশি (একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন)।
৮ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে