মঙ্গলবার, ১২ জুলাই, ২০১৬, ০৪:৩৭:২৮

পিস টিভি বন্ধের পর কি জঙ্গি তৎপরতা থামবে?

পিস টিভি বন্ধের পর কি জঙ্গি তৎপরতা থামবে?

নিউজ ডেস্ক: গুলশান হামলাকারীদের দু'জন ভারতের বিতর্কিত বক্তা ড. জাকির নায়েকের টুইটার-অনুসারী ছিলেন। তাঁর বক্তব্য ধারাবাহিকভাবে পিস টিভিতে প্রচার হয়, যাতে জঙ্গি তৎপরতায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার মতো উপাদান আছে বলে মনে করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। গুলশান হামলার পর শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের অদূরেও হামলা হয়ে গেছে বাংলাদেশে। আর এ সব হামলার পর থেকেই ড. নায়েকের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদকে মদত দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

সোমবার এ কারণে বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, চলছে তদন্তও।
জঙ্গি তৎপরতা রোধে আরো কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তঃমন্ত্রণালয় আইন-শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। এরমধ্যে রয়েছে জুমার নামাজের ওপর নজরদারি, ঢাকার গুলাশান এলকায় অনুমোদনহীন হোটেল, রেস্টুরেন্ট, হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া, নিখোঁজ তরুণদের তথ্য সংগ্রহ এবং কোনো ছাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০ দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকলে তা রিপোর্ট করা।


বাংলাদেশে পিস টিভির অনুষ্ঠান বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষায়ই দেখা যেত। তাছাড়া পিস টিভির বাংলা অনুষ্ঠান মূলত ঢাকা শহরে তৈরি করেই সম্প্রচারের জন্য পাঠানো হতো। তারা ডাউন লিংক-এর অনুমোদন নিয়ে অনুষ্ঠান তৈরির কাজও করে আসছিল। এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশের কিছু ইসলামি চিন্তাবিদ। তারা আবার পিস টিভির বক্তাও। তাই এবার সম্প্রচার বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে যারা অবৈধভাবে এখানে অনুষ্ঠান বানিয়ে দেশের বাইরে পাঠচ্ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়।


তবে শুধুমাত্র পিস টিভি-র সম্প্রচার বন্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা কতটুকু বন্ধ করা যাবে, তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া অ্যান্ড ফিল্ম স্ট্যাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘‘জঙ্গি তৎপরতার নানা ফ্রন্ট থাকে। মিলিটারি, ট্রেনিং, রিক্রুটমেন্ট, অর্থ, অপারেশন, মিডিয়া প্রভৃতি। পিস টিভির কোনো বক্তব্য যদি বাংলাদেশের তরুণদের কাউকে উদ্ধুদ্ধ করে থাকে, তাহলে সরকার ব্যবস্থা নিতেই পারে।
 

আমরা জানতে পেরেছি, গুলশান হামলার দুই তরুণ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জাকির নায়েকের অনুসারী ছিল। তবে বিষয়টি আরো তদন্ত করে দেখতে হবে।'' তাঁর কথায়, ‘‘পিস টিভি বন্ধ করলেই বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা প্রতিহত করা যাবে না। এটা যে পর্যায়ে গেছে, তাতে সর্বপ্রথম প্রয়োজন আমাদের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের সক্ষমতা বাড়ানো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠক্রমের দিকে নজর দেয়া আর বের করা এ পর্যন্ত কত তরুণ জঙ্গিদের দলে ভিড়েছে। দু-এক দিনে এ কাজ করা যাবে না। এর জন্য জঙ্গিবিরোধী দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।''


আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ও জঙ্গি বিষয়ক গবেষক নূর খান বলেন, ‘‘কোনো কিছুর প্রচার বা সম্প্রচার বন্ধ করে জঙ্গি তৎপরতা বন্ধ সম্ভব নয়। বরং প্রয়োজন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রম শুরু করা। সেজন্য প্রয়োজন গণতান্ত্রিক পরিববেশ।''
তিনি আরো বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকলে হয়ত সাময়িকভাবে জঙ্গি দমন করা যায়। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এটা সম্ভব নয়।''


এদিকে পিস টিভি বন্ধ নিয়ে বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক বিতর্ক চলছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহারকারীরা দৃশ্যত পিস টিভি বন্ধের ব্যাপারে দু'ভাগে ভাগ হয়ে পড়েছেন। তারা পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত প্রকাশ করছেন। প্রসঙ্গত, ভারতে প্রথম পিস টিভি বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হলেও, এখনো তা কার্যকর হয়নি। অথচ বাংলাদেশ তার আগেই এখানে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দিল।-ডয়চে ভেল

১২জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে