মঙ্গলবার, ১২ জুলাই, ২০১৬, ০১:৫২:৪৬

দানবীয় ভূমিকম্পে কাঁপবে ঢাকা, বিপদে পড়বে ১৪ কোটি মানুষ : আশঙ্কা গবেষকদের

 দানবীয় ভূমিকম্পে কাঁপবে ঢাকা, বিপদে পড়বে ১৪ কোটি মানুষ : আশঙ্কা গবেষকদের

নিউজ ডেস্ক : বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ।  এ বিষয়ে  সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের একদল গবেষক। সোমবার নেচার জিওসায়েন্স জার্নালে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ঘণবসতিপূর্ণ হওয়ায় ভূগর্ভের মাটির স্তরে যে বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে তাতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত হতে পারে বাংলাদেশ।  এ ভূকম্পন ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার কিংবা তার চেয়েও বেশি হতে পারে।  

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্প বিপর্যয়ে দেশটির প্রায় ১৪ কোটি মানুষের জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে।  

দেশটির বুক চিরে প্রবাহিত বড় দুই নদী গঙ্গা এবং ব্রহ্মপুত্রের দুই পাড়ের ২০ কি.মি পর্যন্ত বর্ষায় আসা বালি এবং কাঁদা মাটিতে ভরাট হয়ে গেছে।  বিপুল পলিতে দুই নদীর প্রবাহ সংকুচিত হয়ে পানির আঁধার বিলীন হয়ে পড়েছে, যা ভূমিকম্পের একটি আগাম লক্ষণ।

গবেষকরা বলছেন, ২০০৪ সালে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় ইতিহাসের ভয়াবহ যে সুনামি আঘাত হানে তা বাংলাদেশের একই ফল্ট লাইনে অবস্থিত। সুমাত্রার ওই সুনামিতে প্রাণ হারায় ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষ।

যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূপদার্থবিদ মাইকেল স্টেকলার ভূমিকম্প নিয়ে ন্যাচার জিওনায়েন্সে প্রকাশিত প্রতিবেদনের মূখ্য গবেষক।

প্রতিবেদনে এ গবেষক বলেছেন, সুমাত্রার মতো ক্রটি বাংলাদেশের বড় দুই নদী গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বিদ্যমান।  

নেচার জিওসায়েন্স জার্নালের বরাত দিয়ে রয়টার্স লিখেছে, এখনই বাংলাদেশ বড় ভূমিকম্পে কেঁপে উঠবে এমন কথা বলা না গেলেও দু’টি গতিশীল ভূ-গাঠনিক প্লেট পরস্পরের ওপর চেপে বসতে থাকায় সেখানে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা হচ্ছে।

গবেষক দলের প্রধান নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ মাইকেল স্টেকলার টমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে বলেন, ওই ধরনের ভূমিকম্প কবে ঘটতে পারে, সে পূর্বাভাস আরো গবেষণা না করে দেয়া সম্ভব নয়।  ভারতের পূর্ব অংশ ও বাংলাদেশের যে অঞ্চল সম্ভাব্য সেই ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, তার ১০০ কিলেমিটার ব্যাসের মধ্যে প্রায় ১৪ কোটি মানুষের বসবাস।

রয়টার্সের প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ ও অন্যতম দরিদ্র এই অঞ্চলে এ ধরনের একটি ভূমিকম্প মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।  তেমন কোনো ভূমিকম্প হলে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা ভবন, ভারী শিল্প, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং গ্যাস ক্ষেত্রগুলো ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে বলে গবেষকরা আশঙ্কা করছেন।

গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বলছেন, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় ১৯ কিলোমিটার গভীর পলি জমে বাংলাদেশের যে ভূ-খণ্ড তৈরি হয়েছে, তা সেই ভূমিকম্পের প্রভাবে জেলাটিনের মত কেঁপে উঠতে পারে।  কিছু কিছু জায়গায় তরলে পরিণত হয়ে গ্রাস করতে পারে ইমারত, রাস্তাঘাট আর মানুষের বসতি। এ গবেষণায় প্রায় ৬২ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে এই ভূমিকম্পের ঝুঁকির আওতায় বলা হয়েছে।

অধ্যাপক আখতার রয়টার্সকে বলেন, তেমন মাত্রার ভূমিকম্প সত্যিই হলে তার ক্ষয়ক্ষতি এতোটাই ভয়াবহ হবে যে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা হয়তো বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে।

দশ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি কম্পিউটার মডেল তৈরির মাধ্যমে তারা দেখিয়েছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্ব অংশের ভূ-গাঠনিক প্লেট উত্তর-পূর্ব দিকে সরে গিয়ে মিয়ানমারের পশ্চিম অঞ্চলের ভূ-গাঠনিক প্লেটে চাপ সৃষ্টি করছে, যাতে সৃষ্টি হচ্ছে অস্থিরতা।

ওই গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজ্ঞানীরা টেকটোনিক প্লেটের ওই সরে যাওয়া জিপিএসের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করছেন ২০০৩ সাল থেকে।  

সেই তথ্য বলছে, বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্ব অংশের প্লেট মিয়ানমারের পশ্চিম অঞ্চলের প্লেটকে বছরে ৪৬ মিলিমিটার করে ঠেলছে।  অধ্যাপক আখতারকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই প্লেটের সংযোগ স্থলে ভূমিকম্পের শক্তি জমা হচ্ছে অন্তত ৪০০ বছর ধরে।  ওই শক্তি একসঙ্গে মুক্তি পেলে তা প্রলয়ঙ্করি ভূমিকম্পের কারণ হতে পারে।

মাইকেল স্টেকলার ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসকে বলেন, এমন একটি বিপদ যে ঘনিয়ে আসছে সে ধারণা গবেষকদের কারো কারো মধ্যে ছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় তথ্য বা মডেল এতোদিন হাতে ছিল না।  

তিনি বলেন, আমরা জানি না, ঠিক কবে সেই বিপদ আসবে? কারণ আমরা জানি না শেষ কবে ওই এলাকায় এরকম পরিস্থিতি হয়েছিল।  আমরা বলতে পারছি না- এখনই, না ৫০০ বছর পরে সেই ভূমিকম্প হবে?
১২ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে