বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০১৬, ১০:৫৮:৪৭

বাংলাদেশ যত অশান্ত হবে, ভারতের আশঙ্কা তত বাড়বে: আনন্দবাজার

বাংলাদেশ যত অশান্ত হবে, ভারতের আশঙ্কা তত বাড়বে: আনন্দবাজার

জয়ন্ত ঘোষাল : ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতে এসেছিলেন খালেদা জিয়া। সে বার খালেদা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আমলের বাংলাদেশকে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছিলেন, তলাবিহীন ঝুড়ি। সে বার নির্বাচনে তলাবিহীন ঝুড়ির তাসটিকে খুব আক্রমণাত্মক জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

অভিযোগ ছিল, সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশকে সাবলম্বী হতে দেননি বঙ্গবন্ধু। তাকে বিকিয়ে দিয়েছেন প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের হাতে। বঙ্গবন্ধুর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভারত শোষণ করেছে বাংলাদেশকে। মুজিবের মৃত্যুর পর তাঁর দল আওয়ামি লিগের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলতে থাকেন জিয়া। তারপাশে এসে দাঁড়ায় জামাত।

’৯১ সালেও তলাবিহীন ঝুড়ি যদি প্রথম তুরুপের তাস হয় তা হলে দ্বিতীয় তুরুপের তাস ছিল বিপন্ন ইসলাম। বাংলাদেশে দু’-দু’বার শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় এসে এই ভারত বিদ্বেষ দূর করতে সক্ষম হয়।

কিন্তু আজ আবার যখন জামাত থেকে আইএস বাংলাদেশের জমিতে সন্ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করছে, বিপন্ন ইসলামের স্লোগান আবার তোলা হচ্ছে, যে ভাবে গুলশনে হত্যাকাণ্ড, সংখ্যালঘু হিন্দু পূজারিদের হত্যা করা, ব্লগার হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে তাতে ভারতের শঙ্কা বাড়ছে বই কমছে না।

বাংলাদেশের মননে একটি সত্তা-সংঘাত রয়েছে। এই সংঘাতটি হল এক দিকে বাঙালি সত্তা আবার অন্য দিকে ইসলামিক সত্তা। ভাষা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্র গঠন পৃথিবীর ইতিহাসে আজও বিরল। ধীরে ধীরে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে আসছে।

এ কথাও সত্য, অভ্যন্তরীণ বিবাদে ভারত আজও তিস্তা চুক্তির মতো সংবেদনশীল বিষয়কে বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হয়নি। ভোট যত এগিয়ে আসবে বিএনপি-র ভারত বিরোধী প্রচারও তত বাড়বে।

আবার ফিরে আসবে ’৯১ সালের স্লোগান— বিএনপি বলবে, আবার আওয়ামি লিগকে ভোট দিয়ে জনগণ জেতালে বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত হবে। ভারতের আগ্রাসী থাবা বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ গ্রাস করে নেবে।

বিপন্ন ইসলাম ও ভারত বিরোধিতার স্লোগান তুলে আবার ভোট হবে ঢাকায়। ভারতকে তাই অবিলম্বে তিস্তা চুক্তি সম্পাদিত করে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যে বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু ভারত।

আওয়ামি লিগের পতনের সূত্রপাত কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে পরেই। শেখ সাহেবকে ঘিরে বাংলাদেশের জনগণের ছিল তীব্র আশা-আকাঙ্খা। তাঁকে জাতির পিতা বলতে তাঁরা দ্বিধা করেননি।

কিন্তু প্রকৃতির নিয়মে শেখ সাহেব বেঁচে থাকতে থাকতেই নতুন সরকারের মধ্যে দুর্নীতি প্রবেশ করে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়, ’৭২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আট মাস পরেই ঢাকার পল্টন ময়দানে এক বিশাল সমাবেশ হয় বঙ্গবন্ধুর শাসনের বিরুদ্ধে।

সেই বিক্ষোভ-সমাবেশের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রাক্তন মুক্তিযোদ্ধা তথা এক কালে বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত আবদুর রব। সে দিনের ভাষণে রব বঙ্গবন্ধুর দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বলেছিলেন, দেশের স্বাধীনতার পরে এক জনকেও না খেতে পেয়ে মরতে হবে না এমনটাই আশা দিয়েছিলেন শেখ মুজিব।

কিন্তু এখন খেতে না পেয়ে মারা যাচ্ছেন বহু মানুষ। অনেকে বলেন, ওই বিক্ষোভ সমাবেশের পিছনে ছিল পাকিস্তান।

বিএনপি-র জন্ম দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। বেগম খালেদা জিয়ার স্বামী। বাংলাদেশের শহিদ রাষ্ট্রপ্রধান জিয়াউর রহমানের স্লোগান ছিল স্বনির্ভর অর্থনীতি। যা আজও বিএনপি বলে। কিন্তু এক দিকে শক্তিশালী অর্থনীতির কথা বললেও, জামাতের সঙ্গে বিএনপি-র যে আঁতাত এবং তার জন্য বিএনপি-র ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে প্রবল ভাবে।

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পরে জনগণ শোকাহত ছিল। কিন্তু বহু লোককে উল্লাসে চিৎকর করতেও দেখা গিয়েছিলেন। অ্যান্টনি ম্যাসকর্নসহাস নামে এক বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞ সাংবাদিককে এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী খোন্দকর মোস্তাক বলেছিলেন, কিছু লোক উল্লাসে চিৎকার করে বলেছিলেন, লাইলাহা ইলালহ। ধানের শিষে বিসমিল্লাহ।

পাকপন্থীদের উল্লাসের নিদর্শন সে দিন কিছু কম ছিল না। বাংলাদেশের আজকের পরিস্থিতি দেখে তাই নতুন করে ভয় পাই। বাংলাদেশ যদি হাসিনা প্রদর্শিত ধর্মনিরপেক্ষ পথে না হেঁটে আবার এক মৌলবাদী পথে হাঁটতে থাকে তবে শেষের সে দিন সুখের হবে না। -আনন্দবাজার
১৩ জুলািই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে