নিউজ ডেস্ক : গুলশানে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় প্রকৌশলী হাসনাত করিম ও কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র তাহমিদের ব্যাপারে গোপনীয়তা অবলম্বন করা হচ্ছে।
আপাতত তাদের ব্যাপারে সরকারের ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকেও এই ব্যাপারেও কোনোকিছুই বলা যাচ্ছে না। তবে তাদের দুইজনের প্রতি সন্দেহের তীর রয়েছে। তাদেরকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, তারা ভেতরে বসে যেসব কর্মকাণ্ড করেছেন তা সন্দেহজনক। তারা জঙ্গিদের সহায়তা করেছেন বলেও বিভিন্নভাবে জানা গেছে।
ওই সূত্র আরো জানায়, হাসনাত করিমের ব্যাপারে সন্দেহ হচ্ছে তিনি ওইদিন পূর্ব পরিকল্পিতভাবেই রেস্টুরেন্টে গেছেন। পুরো পরিবার নিয়ে গেছেন যাতে করে ঘটনার সময় তার কোনোকিছু হলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একসঙ্গেই মারা যান।
তিনিই প্রথম বাইরে তার চাচার কাছে বার্তা পাঠান তাদের জিম্মি থাকার ব্যাপারে। তিনি আগে থেকেই এ ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারেন এবং এটা প্রচার করতে হবে এমন দায়িত্ব তার থাকতে পারে।
সেই জন্য ইচ্ছে করেই এই রকম করে থাকতে পারেন। সবাইকে জানানোটাও তার উদ্দেশ্য থাকতে পারে। গুলশান ঘটনার পর অনেক মানুষ বাইরে বের হয়ে এসেছেন। জঙ্গিরা নাকি তাদের সঙ্গে অনেক ভালো আচরণ করেছেন।
তদন্ত কর্মকর্তাদের প্রশ্ন, তাহলে তারা ঘটনার পর পর বাইরে বের হয়ে আসলেন না কেন? সারারাত সেখানে জঙ্গিদের সঙ্গে ছিলেন, তাদের দেয়া খাবারও খেয়েছেন। আবার সকালে জঙ্গিদের সঙ্গেও হাসনাতকে দেখা গেছে। সব মিলিয়ে তার আচার- আচরণ নিয়ে নানা সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
সূত্র জানায়, হাসনাত করিম ও তার স্ত্রী জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি বাইরে বের হয়ে এসে সেখানকার ঘটনা বর্ণনা করেন। কিন্তু তার বর্ণনার বেশিরভাগ অংশই মিথ্যে হতে পারে বলে গোয়েন্দারাও তদন্ত কর্মকর্তারা বিশ্বাস করছেন না।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, তার সন্তানের জন্মদিন উপলক্ষ্যে সেদিন তারা ওই রেস্টুরেন্টে যান। তদন্ত কর্মকর্তারা এখন পরীক্ষা করে দেখবেন ওইদিন আসলেই তার ওই সন্তানের জন্মদিন ছিল কিনা?
জন্মদিন থাকলে সেটাও তারা ভিন্নভাবেই খতিয়ে দেখবেন, ইচ্ছে করেই ওইদিন তারা পরিকল্পিতভাবে রেস্টুরেন্ট গিয়েছিলেন কি-না?
সূত্র জানায়, হাসনাত করিম ঘটনার দিন ভেতরে ছিলেন। ভেতরে যারা ছিলেন তাদের কমবেশি সবারই কিছু কিছু না কিছু ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু হাসনাত করিমের ও তার পরিবারের সদস্যদের কারো কোনো ক্ষতি হয়নি। তারা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিলেন।
হাসনাত করিমের ব্যাপারে এর আগে থেকেই নানা তথ্য ছিল। ওই সব তথ্যও মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। তার সঙ্গে তাহমিদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে জানা গেছে।
তারা একই যোগসূত্রে কাজ করে থাকতে পারেন বলেনও ধারনা করছেন গোয়েন্দারা। তাহমিদের ব্যাপারেও নানা তথ্য সংগ্রহ মিলিয়ে দেখছেন। ঘটনার ঠিক আগে দিন তার দেশে আসা, রেস্টুরেন্ট যাওয়ার বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, হাসনাত করিম ভেতরে যতক্ষণ ছিলেন তার ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাপারে, তাহমিদের ব্যাপারে সাক্ষীদের যে সাক্ষ্য পাওয়া গেছে তাতে করে তাদের দুইজনকে এ ঘটনায় জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাদেরকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন।
সূত্র জানায়, তারা ঘটনায় জড়িত থাকার ব্যাপারে এখনো কোনো তথ্য স্বীকার করেনি। দুইজনই বলেছে, জঙ্গিরা তাদেরকে প্রাণে মারার হুমকি দেয়। বলে, যদি তারা তাদের সহায়তা না করে তাহলে তাদেরকে হত্যা করা হবে। এই হত্যা যাতে জঙ্গিরা করতে না পারে সেই জন্য তারা তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করেছে। জঙ্গিরা যা বলেছে সেটা শুনেছে।
বিশ্বস্ত সূত্র আরো জানায়, হাসনাত করিম ও তাহমিদের ব্যাপারে যতক্ষণ পর্যন্ত সন্দেহ দূর না হচ্ছে ও তারা প্রমাণ করতে না পারছেন এ ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততা নেই ততক্ষণ তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের মুখেই থাকতে হবে।
এখন যদি তারা গোয়েন্দাদের কাছে কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আছে সেটা বলা হয় তাহলে এটা নিয়ে তার পরিবার আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। তারা সুযোগ যাতে না পান সেই জন্য তাদের ব্যাপারে এখন আর কোন কিছুই বলা হচ্ছে না।
আর একবার যদি তাদেরকে সন্দেহজনকভাবে আটক করা হয় বা গ্রেপ্তার করা হয় তাহলে তাদেরকে ২৪ ঘণ্টার বেশি আটক রাখা সম্ভব হবে না।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে উপস্থিত করতে হবে। সেখানে নেয়ার পর আবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন জানাতে হবে। সেই ক্ষেত্রে রিমান্ড মিলতেও পারে আবার নাও মিলতে পারে।
এই কারণে কোন ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না সংশ্লিল্টরা। এই কারণে তাদের ব্যাপারে এখনও আর কোন কথা বলা হচ্ছে না।
পুলিশ বলছে, তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তাদের কাছে আর কেউ নেই। তবে তাদের দুইজনের পরিবারই বলছে এখনও তারা বাসায় ফিরেনি।
সূত্র জানায়, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেয়া হতে পারে বলেই ধারনা করা হচ্ছে। -আমাদের সময়
১৩ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম