বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০১৬, ১০:৩৮:৫৮

গুলশান রেস্টুরেন্টে মেয়েদের ওপর বেশি হিংস্র ছিল জঙ্গিরা!

গুলশান রেস্টুরেন্টে মেয়েদের ওপর বেশি হিংস্র ছিল জঙ্গিরা!

ঢাকা : রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জিম্মিদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।  সেইদিনের ভয়াবহ হামলায় মেয়েদের ওপর জঙ্গিরা বেশি হিংস্র ছিল।

তাদের মরদেহের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. সোহেল মাহমুদ এ কথা জানিয়েছেন।  

ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে নিহতদের ময়নাতদন্ত করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ।

নিহত ব্যক্তিদের সবার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের ৪ জন চিকিৎসক ও তাদের ৫ জন সহকারী।

সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ৩ জুলাই সকাল ১০টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত ময়নাতদন্ত করেন তারা।  

তিনি বলেন, পাঁচ জঙ্গিসহ মোট ২৬ জনের ময়নাতদন্ত করেছি আমরা।  জিম্মি ২০ জনের ময়নাতদন্তের সময় মোট সাতজনের শরীরে আটটি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।  

ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ৬ জনের শরীর থেকে ছয়টি আর বিদেশি একজনের শরীরে দুটি গুলির চিহ্ন পেয়েছি।  জিম্মিদের পেছন থেকে ঘাড়ে ও মাথার পেছনে গুলি করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের শরীরে রয়েছে ধারালো অস্ত্রের আঘাত।  বাংলাদেশি অবিন্তা কবীরের মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ময়নাতদন্তে দেখতে পেয়েছি নারীদের ওপর বেশি হিংস্র ছিল হামলাকারীরা।  নারীদের বুকে, পেটে, হাতে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে বেশি।  তারিশিকে গুলি করা ছাড়াও কোপানো হয়েছে।  তার দুই হাতসহ সারা দেহে চল্লিশটির মতো কোপ ও ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে।  

নারীদের সেক্সুয়ালি হ্যারাস করা হয়েছে কি-না এ বিষয়ে সোহেল মাহমুদ বলেন, এ প্রশ্নের উত্তর জানতেই তাদের শরীর থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করা হয়েছে।  আগামী সপ্তাহে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া যেতে পারে।
 
তিনি বলেন, ১৮ থেকে ২২ বছর বয়সী ৫ জঙ্গি কোনো বিশেষ ধরনের ড্রাগ আসক্ত ছিল কি-না তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।  এ জন্য তাদের ভিসেরা ঢাকার রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হবে।

গত বছরের নভেম্বরে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়া ও ইরাকভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের যোদ্ধারা ক্যাপটাগন নামের একটি ওষুধ সেবন করে।

এ কারণে এই ওষুধটি ‘আইএসআইএস ড্রাগ’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।  ক্যাপটাগন সেবনের কারণে আইএসের যোদ্ধারা দিনের পর দিন জেগে থাকে এবং ঠাণ্ডা মাথায় একের পর এক মানুষ খুন করতে পারে।

ক্যাপটাগন ওষুধ হচ্ছে অ্যামফেটামিন গোত্রের।  এটি যারা সেবন করে তাদের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে।  এর প্রভাবে তারা অন্য কিছু আর চিন্তা করতে পারে না।  ক্যাপটাগন-জাতীয় ওষুধ এ দেশে নেই।  কেবল মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে এটি পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে গুলশান ২ নম্বরের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে অস্ত্রধারীরা হামলা চালায়।  ঘটনার পর অভিযান চালাতে গেলে জঙ্গিদের হামলায় বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল করিম নিহত হন।

জঙ্গিরা সেখানে তিন বাংলাদেশি ও ১৭ জন বিদেশি নাগরিককে হত্যা করে।  শনিবার সকালে যৌথবাহিনী সেখানে কমান্ডো অভিযান চালায়।  এতে ছয় জঙ্গি নিহত হয়।  একজনকে গ্রেফতার করা হয়।  এর আগে সেখান থেকে নিরাপদে বেরিয়ে আসে নারী ও শিশুসহ ১৩ জিম্মি।
১৩ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে